প্রতীকী ছবি।
সব ঠিকঠাক চললে আজ, শুক্রবার মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মুকুল রায়। কিন্তু কৃষ্ণনগর দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে কর্মীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে পারছে না দল। ফলে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী মহাদেব সরকার এ দিন মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন কি না, আদৌ কবে পারবেন, তা নিশ্চিত নয়।
কৃষ্ণনগর দক্ষিণে মহাদেব সরকারের প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষ্ণনগরে জেলা কার্যালের ভিতরেই অনশন শুরু করেছেন বিজেপির বেশ কিছু নেতাকর্মী। এর আগেও তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় বলেছেন, জেলা নেতৃত্বকেই বিক্ষোভ সামাল দিতে হবে। কিন্তু সেই কাজে যে জেলা নেতৃত্ব কার্যত ব্যর্থ, সেটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে কর্মীদের একাংশের এই অনশন আন্দোলনে। মহাদেবের প্রার্থিপদ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা জেলা কার্যালয়ের ভিতরে অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
বিজেপির প্রার্থিপদ ঘোষণার পর থেকেই নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে নেতাকর্মীদের একাংশের ক্ষোভ উসকে উঠেছিল। দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি-সহ একগুচ্ছ নেতা ইস্তফাও দিতে চান। সেই বিক্ষোভ সামাল দিতে জেলা নেতাদের পাশাপাশি রাজ্য নেতৃত্বকেও আসরে নামতে হয়। রানাঘাটে আপাতত বিক্ষোভ সামাল দেওয়া গেলেও কল্যাণীতে এখনও ক্ষোভের আঁচ রয়েছে। কৃষ্ণনগর দক্ষিণ কেন্দ্রে আঁচটা বেশি রকমের। ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার বদলে যত দিন যাচ্ছে, বিক্ষোভে-অসন্তোষের মাত্রা যেন বেড়েই চলেছে। প্রথমে ধুবুলিয়া বাজারে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা কৃষ্ণনগরে দলীয় কার্যালয়ে এসে বিক্ষোভ দেখান। সে দিন তাঁদের কোনও মতে নিরস্ত করা গেলেও বৃহস্পতিবার তাঁরা আরও বেশি সংখ্যায় জড়ো হন জেলা কার্যালয়ে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের কৃষ্ণনগর উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস-সহ একাধিক জেলা নেতা। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে একটা সময়ের পর তাঁরা কার্যালয় ছেড়ে চলে যান।
মহাদেবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের মূল অভিযোগ, তিনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে জড়িত। আগের নির্বাচনগুলিতে তিনি তৃণমূলের সঙ্গে গোপনে সমঝোতা করেছিলেন। এ বারও দলের পদাধীকারীদের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ না রেখে নিজের ঘনিষ্ঠদের নিয়ে প্রচার করছেন। মহাদেব-বিরোধী শিবিরের নেতা বলে পরিচিত, বিজেপির যুব মোর্চার ২৭ নম্বর জেলা পরিষদ মণ্ডল কমিটির সভাপতি তাপস ঘোষ বলেন, “জেলা নেতারা বলেছেন যে রাজ্য নেতৃত্ব আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। কিন্তু মহাদেব সরকারকে আমরা কিছুতেই প্রার্থী হিসাবে মেনে নেব না। তাঁর প্রার্থিপদ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব।”
মহাদেব অনুগামীদের দাবি, যাঁদের উপরে বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার দায়িত্ব, সেই জেলা নেতাদেরই কেউ কেউ পিছন থেকে ‘খেলছেন’। কেননা এঁদের একটা বড় অংশ প্রাক্তন জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের বিরোধী বলে পরিচিত। মহাদেব বলেন, “পিছন থেকে কেউ-কেউ এই ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে লাভ হবে না। কারণ মানুষ আমার সঙ্গেই আছে।” উত্তর জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসকে অবশ্য বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।