শনিবার থেকেই পারদ চড়ছে হলদিয়া গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড হাইস্কুলে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল না বিজেপি, কার হাতে থাকবে রাজ্যের ভার? পাশাপাশি কে জিতবেন নন্দীগ্রামের যুদ্ধে? রবিবারই মিলবে সব উত্তর। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে হলদিয়ার গণনাকেন্দ্রে ভিড় জমাচ্ছেন তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষের নেতা, কর্মী এবং সমর্থকরা।
তৃণমূলের সেনাপতি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে জোড়াফুল শিবির ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামে এমন চিত্তাকর্ষক দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত কার জয় হবে? তা নিয়ে খোদ নন্দীগ্রাম তো বটেই, উত্তেজনায় ফুটছে গোটা রাজ্যও। তৃণমূল বা বিজেপি, নন্দীগ্রামের কোনও শিবিরই এই মুহূর্তে হাতে হাত রেখে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে রাজি নয়। নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের ভোট গণনা হচ্ছে হলদিয়া মহকুমা শাসকের দফতরের অদূরে অবস্থিত হলদিয়া গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড হাইস্কুলে। নন্দীগ্রাম থেকে সড়ক পথে যার দূরত্ব প্রায় ৬৭ কিলোমিটার। ঘণ্টাদেড়েকের সেই পথ পাড়ি দিয়ে শনিবার রাতেই হলদিয়া গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড হাইস্কুলে পৌঁছে যেতে চান অনেকেই।
উত্তেজনার কথা মেনে নিলেন মমতার নির্বাচনী এজেন্ট সেখ সুফিয়ান। বললেন, ‘‘রাতে বাড়িতে থাকার কোনও প্রশ্নই নেই। শনিবার বিকেলেই দলবল নিয়ে হলদিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। রাতটা হলদিয়ার হোটেলেই কাটাব।’’
আবার ভোটের আগে যাঁর সঙ্গে তৃণমূলনেত্রীর টেলিফোনিক কথোপকথন ফাঁস হয়েছিল, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া সেই প্রলয় পাল বলছেন, ‘‘খুব সকালেই গণনাকেন্দ্রে হাজির হতে হবে। দাদা (শুভেন্দু অধিকারী)-র জয়ের ব্যাপারে আমরা একশো শতাংশ নিশ্চিত। তবে ভোরবেলা এতটা পাড়ি দেওয়া যাবে না। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে শনিবার বিকেলেই হলদিয়া পৌঁছে গিয়েছি।’’
রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের এগজিট পোলের অধিকাংশই ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছে না বামেদের। কিন্তু নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে দুই মহাশক্তিধরের লড়াইয়ের মাঝে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অবস্থান কোথায় পৌঁছয় তার সাক্ষী হতে চায় বাম শিবিরও। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির প্রতিক্রিয়া, ‘‘নন্দীগ্রামের কর্মীরা আগে থেকেই হলদিয়ায় পৌঁছে গিয়েছেন। যদিও অন্যান্য বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মীরা সকালে গণনার শুরু হওয়ার আগে গণনাকেন্দ্রে পৌঁছবেন।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটগণনার জন্য মোট ৬টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে হলদিয়ার গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড হাইস্কুলে গণনা হবে নন্দীগ্রাম, মহিষাদল এবং হলদিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের। কোলাঘাটের কেটিপিপি হাই স্কুলে গণনা হবে তমলুক, ময়না, নন্দকুমার এবং চণ্ডীপুর কেন্দ্রের।
কেটিপিপি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে গণনা হবে পাঁশকুড়া পূর্ব এবং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের। বাজকুল মিলনী মহাবিদ্যালয়ে গণনা হবে ভগবানপুর বিধানসভার। এ ছাড়া কন্টাই পিকে কলেজে গণনা হবে খেজুরি, কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ এবং রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের। এগরা ঝাটুলাল হাইস্কুলে এগরা এবং পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের গণনা।
তৃণমূলের জমি আন্দোলনের ভিত্তিভূমি নন্দীগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাসও। ওই কেন্দ্রের রাজনৈতিক যুদ্ধ নিয়ে প্রথম থেকেই উত্তাপ ছড়িয়েছে। রবিবার সেই যুদ্ধের অন্তিম পর্ব।