মেলেনি উজ্জ্বলা গ্যাস। নিজস্ব চিত্র।
মাটির ভাঙা বাড়ি। তার দাওয়ায় বসে মাটির উনুনে খড়-পাতা গুঁজে দিচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব অনিমা রায়। উনুনে চাপানো হাঁড়িতে পুরনো জামা, কাপড়। খার মেশানো ফুটন্ত জলে কাপড় থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ময়লা। কাপড় থেকে ময়লা বার হলেও, রাজনীতির ময়লা বার হচ্ছে কই! অনিমার অভিযোগ, রাজনীতির ‘পাঁকে’ পড়ে আজও তাঁরা সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
বংশীহারি ব্লকের ডুমনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা অনিমার নেই উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস। নেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। পাননি আবাস যোজনার ঘর। ভোটের আগে তাই এ সব নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। পাতা পোড়ানো ধোঁয়া থেকে চোখ বাঁচিয়ে উনুনের আগুন উস্কে দিয়ে অনিমা বললেন, ‘‘বিনা পয়সায় গ্যাস দেবে শুনেছিলাম। এক জনকে দিয়ে দরখাস্ত লিখে জমাও দিলাম। কিন্তু কোথায় গ্যাস পেলাম।’’ শুধু বিনামূল্যের গ্যাস নয়, দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসাথীর জন্যও দরখাস্ত দিয়েছিলেন অনিমা। তাঁর অভিযোগ, সেই কার্ডও পাননি তিনি। ষাটোর্ধ্ব বিধবার মুখে তাই নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ ঝড়ে পড়ে।
অনিমার মতো ক্ষোভ জমেছে কুশমণ্ডির বিধান রায়ের গলাতেও। বিধানের ক্ষোভ এলাকার রাস্তাঘাট ও পানীয় জলের অব্যবস্থা নিয়ে। কুশমণ্ডির পানিশালা এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তার পিচ উঠে খানাখন্দে ভরেছে। গ্রামের অসুস্থ মানুষজনদের গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে বেহাল রাস্তার ঝাঁকুনিতেই আধমরা অবস্থা হয়। বিধান কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘বলতে গেলে ব্রিটিশ আমলে রাস্তা তৈরি হয়েছিল। তার পরে আর পিচের প্রলেপ পড়েনি। না আছে রাস্তা, না আছে পানীয় জল। কেউ খোঁজ নেয় না আমাদের। শুধু ভোট এলেই প্রতিশ্রুতির বন্যা।’’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এক মাস পরে ভোট। গ্রামে-গঞ্জে প্রচার জমতে শুরু করেছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তার ধুলো উড়িয়ে নেতাদের গাড়ি এসে গ্রামের প্রান্তে ভিড়তে শুরু করেছে। কুশমণ্ডির সাত বারের বিধায়ক আরএসপির নর্মদা রায় থেকে হরিরামপুরের তৃণমূলের প্রার্থী বিপ্লব মিত্র, গঙ্গারামপুরের বিধায়ক গৌতম দাসরা গ্রামে প্রচার শুরু করছেন। গৌতম বলেন, ‘‘একশো শতাংশো কাজ হয়নি। কিছু কাজ এখনও বাকি। এ বার সেই বাকি কাজটাই করব।’’ বাইরে চৈত্রের চড়া রোদ। উনুনের আগুনে কপালে ঘাম ঝরছে অনিমাদের। গ্রামের প্রান্তিক মানুষজন সব ‘নেই’-এর জবাব চাইতে কপালের ঘাম মুছে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘামের প্রভাব ভোটে কি পড়বে? তা নিয়ে চিন্তিত সব পক্ষ।