মানস ভুঁইয়া বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ।
খড়্গপুর ও ঘাটাল: সকালে কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলেন মানস ভুঁইয়া। সময় বেশি লাগলেও সুষ্ঠুভাবে কাজ মেটে। বারবেলায় মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের বাইরে বেরোতেই বিপত্তি। প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থীর মিছিল থেকে তাঁর উদ্দেশ্যে ধেয়ে আসে ‘জয় শ্রী রাম’ ও ‘গো ব্যাক’ স্লোগান।
বৃহস্পতিবার খড়্গপুরে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের বাইরে এই ঘটনা নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। এ দিনই মনোনয়ন জমা দেন সবংয়ের বিজেপি প্রার্থী অমূল্য মাইতি। সবংয়ের রাজনীতিতে মানসের ‘চির বিরোধী’ বলে পরিচিত অমূল্য। দু’জনেই প্রথমে কংগ্রেসে ছিলেন। আগে-পরে দু’জনেই তৃণমূলে আসেন। গত ডিসেম্বরে বিজেপিতে যোগ দেন অমূল্য।
এ দিন মানসকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন অমূল্যর সঙ্গে আসা সবংয়ের বিজেপি কর্মীরা। ‘সিবিআই ডাকছে মানস ভুঁইয়া কাঁপছে’ বলে স্লোগানও ওঠে। মানস অনুগামী তৃণমূল কর্মীরা পাল্টা ‘মানস ভুঁইয়া জিন্দাবাদ, তৃণমূল জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান তোলেন। একসময়ে কার্যত মুখোমুখি হয়ে যায় দু’পক্ষ। তড়িঘড়ি ছুটে আসেন খড়্গপুরের এসডিপিও দীপক সরকার। পরে গাড়িতে চেপে চলে যাওয়ার পথে মানস বলেন, “এটা হচ্ছে রাজনীতির ব্যভিচারী সংস্কৃতি। মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছে। আমি মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরনোর সময় এদের নারকীয় তাণ্ডবের দৃশ্যও মানুষ দেখল।’’ পাল্টা অভিযোগের সুর চড়িয়ে বিজেপি প্রার্থী অমূল্য বলেন, “মানস ভুঁইয়ার লোকেরা আমাদের কর্মীদের গাড়ি সবংয়ের বিভিন্ন এলাকায় আটকেছে। আর দলের কর্মীরা দলের স্লোগান দিয়েছে। এতে অন্যায় কোথায়!”
এ দিন মানস ও অমূল্য ছাড়াও বিজেপির পিংলার প্রার্থী অন্তরা ভট্টাচার্য, ডেবরার প্রার্থী প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ ও কংগ্রেসের খড়্গপুর সদরের প্রার্থী রিতা শর্মা মনোনয়ন জমা দেন। ডেবরায় জাতীয় সড়কের ধারে চণ্ডাবুড়ি মন্দিরে পুজো দিয়ে বাজনা বাজিয়ে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দেন ভারতী। তাঁর প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী আরেক প্রাক্তন আইপিএস তৃণমূল প্রার্থী হুমায়ুন কবীর দিন কয়েক আগেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, ‘‘ডেবরায় আমার বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নকে সামনে রেখে আমি জিতব। ভারতী আমার জুনিয়র ছিলেন। লোকসভায় জিততে পারেননি। বিধানসভায় হারবেন। ওঁর উচিত এর পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া।” এ দিন পাল্টা দিয়েছেন ভারতীও। তাঁর দাবি, “গত লোকসভা নির্বাচনে ডেবরায় আমার লিড ছিল। উনি (হুমায়ুন কবীর) কীসের সিনিয়র? উনি তো কয়েকটি হোটেল, পেট্রোল পাম্পের মালিক। বেনামে জমি। ব্যক্তিগত জীবনও রহস্যময়।’’
এ দিন ঘাটালে মনোনয়ন জমার ছবিটা অবশ্য কিছুটা আলাদা ছিল। প্রথমে একসঙ্গে মিছিল করে এসে মনোনয়ন জমা দেন তৃণমূলের ঘাটালের প্রার্থী শঙ্কর দোলই, দাসপুরের প্রার্থী মমতা ভুঁইয়া এবং চন্দ্রকোনার প্রার্থী অরূপ ধাড়া। বুধবার নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে সেই মিছিলে বাজনা ছিল না। ঘাটাল ব্লক তৃণমূল অফিস থেকে শুরু হওয়া ওই মিছিলে ওঠে ‘খেলা হবে’ স্লোগান। বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের একাংশ এখানেও মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিল।
বিজেপি কর্মীরা প্রথমে ঘাটাল কেন্দ্রের প্রার্থী শীতল কপাট এবং চন্দ্রকোনা কেন্দ্রের শিবরাম দাসকে নিয়ে মনোনয়ন দিতে আসেন হাজির হন। কিছুক্ষণ পরে আসেন দাসপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী প্রশান্ত বেরা। এ দিন বরদা বিশালাক্ষ্মী মন্দির থেকে শুরু হয় বিজেপির মিছিল। সঙ্গে ছিল বাজনা, ঢাক। মহকুমা শাসকের দফতরে ঢুকতেই তৃণমূল প্রার্থী শঙ্করের সঙ্গে মুখোমুখি হন বিজেপি প্রার্থী শীতল। সৌজন্য বিনিময় করেন তাঁরা। একই সময়ে চন্দ্রকোনার তৃণমূল প্রার্থী অরূপ ও বিজেপি প্রার্থী শিবরামও হাত মেলান।