প্রতীকী ছবি।
পাশেই বাংলাদেশ সীমান্ত। সুতিতে বিস্ফোরকের কারবার নিয়ে তদন্তে এসে ২০১৫ সালেই পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন দেশের নিরাপত্তার দেখভালে নিয়োজিত সংস্থা ‘র’। চোরা পথে নয়, ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে যে ভাবে সুতিতে বিস্ফোরকের কারবার ফুলে ফেঁপে উঠেছিল তা দেখে চমকে উঠেছিল ‘র’। অন্তত ৩টি বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে এক মাসের মধ্যে। যাতে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে পুলিশের। ইতিমধ্যেই বিস্ফোরণ কাণ্ডে এনআইএ-র তদন্তের মধ্যে এসে পড়েছে সুতির একাধিক দুষ্কৃতীর নামও।
অশান্তি, বোমাবাজি একসময় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সুতির গ্রামে। যা সামাল দিতে আশপাশের থানা থেকেও বার বার ছুটে যেতে হয়েছে পুলিশকে। তার মধ্যেও একসময় বোমাবাজি ও বিস্ফোরকের কারবার অনেকটাই রুখে দিয়েছিলেন এক ওসি সুব্রত মজুমদার। তার নাম শুনলেই একসময় থরহরি কম্প শুরু হয়ে যেত সুতির দুষ্কৃতীদের। অনেকেই তার ভয়ে গা ঢাকা দেয় এলাকা ছেড়ে। আজও তার কথা মানুষের মুখে মুখে ফেরে সুতিতে। আতঙ্কে সিঁটকে ওঠে বিস্ফোরকের কারবারিরা।
সুতির বারুদ আটকাতে কম চেষ্টা করেনি পুলিশ। ঝাড়খণ্ড, কালিয়াচকে যাতায়াতের পথে নজরদারিও বেড়েছে পুলিশের। কিন্তু তাতেও আটকানো যায় নি বিস্ফোরক আনা নেওয়ার পথ। বরং পুলিশি তদন্তে পথ বদলের যে তথ্য হাতে পায় পুলিশ তা রীতিমতো চমকপ্রদই নয়, যথেষ্ট উদ্বেগের।
একসময় সুতি থেকে বিস্ফোরকের আনাগোনা বাড়তে শুরু হতেই খবর আসে রঘুনাথগঞ্জ পুলিশের কাছে। তাদের ধরতেই একদিন ফাঁদ পাতে পুলিশ। একটি সূত্রে বিস্ফোরক সরবরাহকারীদের নামও পায় পুলিশ। সেই মতোই পুলিশের সঙ্গে বার কয়েক ফোনে কথাও হয় বিস্ফোরক কারবারিদের। কথা মত, এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নগদে দাম মিটিয়ে দেওয়ার শর্তে পুলিশ ক্রেতা সেজে হাজির সুতি থানার লাগোয়া অজগরপাড়ায়। মোবাইলের কথা মতো লাল টাটা সুমো গাড়ি নিয়ে জনা তিনেক যুবক আসে অজগরপাড়ার মোড়ে। তখনই সশস্ত্র পুলিশের ঘেরাটোপে আটকা পড়ে তারা। ধরা পড়ে তিন জন । মেলে ৮২ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক। সকলেই দীর্ঘ দিনের বারুদের কারবারি বলে এলাকায় পরিচিত। এর আগে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছে তারা বার বার। এক সঙ্গে সুতির মতো সীমান্ত এলাকায় ৮২ কিলো বিস্ফোরক উদ্ধারের খবর পেয়ে এ দিন সন্ধেয় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ‘র’-এর তিন জন অফিসার ছুটে আসেন থানায়।
তারা ধৃতদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সামনে আসে সুতিতে বিস্ফোরক আসার নয়া তথ্য। জানা যায়, কলকাতা থেকে বিস্ফোরক কিনে তারা মজুত করে রাখে স্ট্র্যান্ড রোডের একটি ট্রান্সপোর্ট সংস্থার গুদামে।সেই গুদাম থেকেই সরাসরি ওই ট্রান্সপোর্টের লরিতে করে নিয়মিত ভাবে ওই বিস্ফোরক আনা হচ্ছে সুতিতে দফায় দফায়। সুতি থেকেই এই বিস্ফোরক বীরভূম ও বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে।