‘এলইডি ডিসপ্লে ভ্যান’ নিজস্ব চিত্র।
৫টি রথযাত্রা চলছে। রাজ্য বিজেপি-র ৫ সাংগঠনিক জোনে আলাদা আলাদা ‘পরিবর্তন যাত্রা’-র সূচনা করেছেন জেপি নড্ডা, অমিত শাহরা। মার্চের গোড়ায় সেই রথযাত্রা শেষ হওয়ার কথা। আর তার আগেই নতুন এক যাত্রার পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছে রাজ্য বিজেপি। বৃহস্পতিবার তার সূচনা হবে কলকাতা থেকে। এ বার রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা এলাকার জন্য আলাদা আলাদা রথ ঘোরানোর পরিকল্পনা। তবে এ বার রথের আদলে ঘোরানো হবে ‘এলইডি ডিসপ্লে ভ্যান’। যা পরিকল্পনা তাতে এলইডি-র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা চলবে রথে। তা ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারও চলবে।
বুধবার রাতেই কলকাতায় আসার কথা নড্ডার। আর বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার হেস্টিংস এলাকায় রাজ্য বিজেপি-র প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় থেকে সেই ‘এলইডি রথ’-যাত্রার প্রতীকী সূচনা করবেন তিনি। বিজেপি জানিয়েছে, রাজ্যের সর্বত্র মোট ২৯৪টি রথ বার হবে। প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় সেগুলি ঘুরবে। কত দিন ধরে এগুলি ঘুরবে তা ঠিক করা না হলেও বিজেপি শিবিরের দাবি, নির্বাচন পর্যন্ত চলতে থাকবে এই প্রচারাভিযান। দলের যে পরিকল্পনা তাতে এই এলইডি ভ্যানগুলিতে থাকবে একটি করে ‘সাজেশন বক্স’। সাধারণ মানুষ কেমন বাংলা চান, কোন কোন স্থানীয় সমস্যার সমাধান চান তা ওই বাক্সে লিখিত ভাবে পরামর্শ দিতে পারেন। সেই সঙ্গে রথের সঙ্গে স্থানীয় বিজেপি নেতারা সাধারণ মানুষের বক্তব্য শুনবেন এবং ভিডিয়ো রেকর্ড করবেন। এর জন্য প্রতিটি রথে ভাল ভিডিয়ো তোলার মতো ফোন ও ট্যাব রাখা থাকবে। সেই সব লিখিত ও বক্তব্য আকারে মেলা পরামর্শ পাঠানো হবে রাজ্য নেতৃত্বকে। বিজেপি-র দাবি সেই সব পরামর্শের ভিত্তিতেই তৈরি হবে বিধাসভা নির্বাচনের ইস্তাহার।
সাধারণত বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহৃত ‘এলইডি ডিসপ্লে ভ্যান’ অন্যান্য রাজ্যে নির্বাচনের সময়ে ঘুরিয়েছে বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গেও এই ধরনের ভ্যান দেখা গিয়েছে বিজেপি-র প্রচারে। তবে সব বিধানসভা এলাকায় এমন প্রচারাভিযান এই প্রথম বার। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা চাই ক্ষমতায় আসার পরে বিজেপি সরকার রাজ্যে কী কী কাজ করবে, কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেবে তা সাধারণ মানুষই ঠিক করে দিক। তাই ভোটারদের মতামত ও পরামর্শ নিয়েই ইস্তাহার তৈরির পরিকল্পনা। এই যাত্রা সেই লক্ষ্যেই।’’ শমীকের আরও দাবি, ‘‘ইতিমধ্যেই রাজ্যের সর্বত্র ‘পরিবর্তন যাত্রা’ ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। কিন্তু তা সব বিধানসভাকে স্পর্শ করলেও সব জনপদে যেতে পারেনি। এ বারের যাত্রা সেই কাজটাই করবে। প্রত্যন্ত এলাকাতেও পৌঁছে যাবে রথ।’’
সাধারণের পরামর্শ জানার জন্য শুধু এলইডি রথেই নয়, প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় ১০০টি জায়গায় ‘সাজেশন বক্স’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। দলের পক্ষে জানানো হয়েছে, এমন মোট ৩০ হাজার বাক্স রাখা হবে রাজ্যে। সেখানেও জমা পড়া ভোটারদের পরামর্শ নিয়মিত চলে আসবে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। এ ছাড়া ফোনেও যাতে ভোটাররা পরামর্শ দিতে পারেন সেই ব্যবস্থাও থাকছে। তার জন্য ফোন করার দরকার নেই, নির্দিষ্ট নম্বরে মিসড কল দিলেও বিজেপি-র তরফে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হবে। এ ছাড়াও থাকছে পরামর্শ দেওয়ার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ও মেল করার ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, এই ‘এলইডি রথ’ ঘোরার সময় বিভিন্ন ‘গোষ্ঠী বৈঠক’ করবেন বিজেপি নেতারা। তাতে আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শ নেওয়া হবে।
ক্ষমতায় এলে কোন রাজনৈতিক দল কী কী করবে তা জানাতে নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করাই ‘রীতি’। নীলবাড়ি দখলের লড়াইকে পাখির চোখ করে দেখা বিজেপি সেই ইস্তাহার তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে অনেক আগে থেকেই। সে কারণে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলা শুরু করে গেরুয়া শিবির। প্রাক্তন সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্তকে মাথায় রেখে একটি ‘বিদ্বজ্জন সেল’ তৈরি করা হয়। কমিটিতে রাখা হয় সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশ, রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অনেককে। ‘লক্ষ্য সোনার বাংলা’ নামে একটি কর্মসূচিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় বিদ্বজ্জনদের নিয়ে বৈঠক করেন কমিটির সদস্যরা। তাতে অংশ নেন ভিন্ রাজ্য থেকে আসা কেন্দ্রীয় স্তরের নেতারাও। সেখান থেকে বোঝার চেষ্টা হয় বিশিষ্টদের চাহিদা। এ বার সাধারণ মানুষের চাহিদা বুঝতে নতুন পরিকল্পনা ‘এলইডি রথ’। রাজ্য নেতারা বলছেন, এটা জনসংযোগেরই নতুন এক পথ। ভোটের আগে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় করার পাশাপাশি কর্মীদেরও সক্রিয় রাখবে এই কর্মসূচি।