মেচেদার জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দলীয় প্রার্থী এবং নেতৃত্ব।
ঘোষিত সময়ছিল দুপুর ২টোয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরেও ভিড় জমল না মেচেদায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায়।
বৃহস্পতিবার তমলুক বিধানসভার মেচেদা বাজার সংলগ্ন শহিদ মাতঙ্গিনী ময়দানে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে অমিত শাহের সভার আয়োজন করেছিল জেলা(তমলুক)বিজেপি। তমলুক, পূর্ব পাঁশকুড়া, পশ্চিম পাঁশকুড়া, ময়না ও নন্দকুমার— এই পাঁচ বিধানসভার প্রার্থীদের নিয়ে ওই সব এলাকার দলীয় সমর্থকদের জনসভায় আনার ব্যবস্থা করেছিল বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু দুপুর ২ টোয় সভা শুরুর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সভাস্থলের বেশিরভাগ অংশই ছিল ফাঁকা। সাড়ে ৩টে নাগাদ হেলিকপ্টারে অমিত শাহ পৌঁছনোর কিছু আগে সভাস্থলের ছাউনি দেওয়া অংশ ভরাট হলেও সেই সংখ্যাটা ছিল হাজার চারেক। তবে সভাস্থল না ভরলেও এ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়ে ছিল গতকাল কাঁথিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া প্রতিশ্রুতিরই পুনরাবৃত্তি।
তৃণমূলের উদ্দেশ্যে হুঙ্কার দিয়ে এ দিন তাদের গুন্ডা, দুষ্কৃতীদের জেলে ঢোকানোর হুঁশিয়ারি দেন অমিত। প্রতিশ্রুতি দেন, ‘‘বাংলায় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে মৎস্যজীবীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বছরে ৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কৃষকেরা কিসান সম্মান নিধির বকেয়া ১৮ হাজার টাকা পেয়ে যাবেন। এরপর প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সব কৃষক, খেতমজুর ও মৎস্যজীবীদের ৩ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমার আওতায় আনা হবে।’’ মৎসজীবীদের জন্য অমিতের প্রতিশ্রুতি, ‘‘মাছ ধরার ঘাটগুলির আধুনিকীকরণ করা হবে। মাছ সংরক্ষণের জন্য হিমঘর তৈরি করা হবে। জেলাস্তরে মৎস্যজীবীদের ৭৫ শতাংশ ভর্তুকিতে মাছের চারা (বীজ) দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।’’ জানান, ফুল ও আনাজের হিমঘরও তৈরি করা হবে।
মহিলা ও বাচ্চাদের বাসে-ট্রেনে বাচ্চাদের বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা ও মেয়েদের কেজি (শিশুশ্রেণি) থেকে পিজি (স্নাতকোত্তর) পর্যন্ত বিনা খরচে পড়াশোনার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি সিন্ডিকেট নিয়ে তৃণমূলের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দেন শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে বালি, সিমেন্ট কিনতে হলেও সিন্ডিকেটের কাছ থেকে কিনতে হয়। এখানে সিন্ডিকেট রাজ চলে। কাটমানি, তোলাবাজির মাধ্যমে বাংলায় সন্ত্রাস ছড়িয়েছে। রাজ্যে বিজেপি সরকার এলে সিন্ডিকেট, কাটমানি এবং তোলাবাজি দূর করা হবে।’’
আমপান, বুলবুলের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলে অমিত বলেন, ‘‘এখানে ক্ষতিপূরণ পেতেও গরিব মানুষদের ৫০০ টাকা কাটমানি দিতে হয়েছে তৃণমূল নেতাদের। রাজ্যে বিজেপি সরকার গড়লে যারা কাটমানি খেয়েছে সেই সব তৃণমূল গুন্ডাদের জেলে ঢোকানো হবে। বালি মাফিয়া, কয়লা মাফিয়া ও বাংলায় বিজেপির ১৩৬ জন নেতা-কর্মীদের খুন করেছে যে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা, ৩ মে রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠনের পরে তাদের একে একে জেলে ঢোকানো হবে।’’ রাজ্যে অনুপ্রবেশকারী রুখতে তৃণমূলের ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ তুলে অমিত বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার এসে অনুপ্রবেশ বন্ধ করবে।’’ তৃণমূলের খেলা হবে স্লোগান নিয়েও হুঁশিয়ারি দেন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘দিদি বলছে খেলা হবে। বাংলার বাচ্চারা প্রতিদিন ফুটবল খেলে। তাই তারা খেলতে ভয় পায় না। ভোটের দিন দিদির কোনও গুন্ডা বাধা দিতে পারবে না। আপানরা নির্ভয়ে ভোট দিন।’’
সভায় অমিতের প্রতিশ্রুতি, ‘‘গঙ্গাসাগরকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দিতে ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিজেপি সরকার এলে বাংলাকে সন্ত্রাস মুক্ত করে উন্নয়নের কাজ হবে। আপনারা ৫ বছর সুযোগ দিলেই বাংলাকে দেশের এক নম্বর রাজ্য করে তোলা হবে।’’