— ছবি সংগৃহীত
পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি এখন বিজেপিতে। এ বার, তাঁরই ‘পৃষ্ঠপোষকতায়’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ‘হিন্দ মজদুর সভা’র (এইচএমএস) বিধানসভা ভোটে ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে খনি অঞ্চলে।
শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলে’র জেরে ২০১৬ পরবর্তী সময়ে পাণ্ডবেশ্বর ও সংলগ্ন খনি অঞ্চলের বহু তৃণমূল কর্মী যোগ দিয়েছিলেন ‘হিন্দ মজদুর সভা’ (এইচএমএস) নামে সাবেক জনতা দলের তৈরি শ্রমিক সংগঠনে। ফলে, কোলিয়ারি বলয়ে রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছিল এইচএমএস-এর। তৃণমূল সূত্রে খবর, গণ-হারে শ্রমিকদের আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত ‘কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেস’ (কেকেএসসি) ছেড়ে এইচএমএস-এ যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ‘অনুঘটকে’র ভূমিকা পালন করেছিলেন জিতেন্দ্র। জিতেন্দ্রর দলবদলের পরে, এইচএমএস-এর ভূমিকা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এইচএমএস নেতৃত্ব জানিয়েছেন, কাকে সমর্থন করা হবে, তা নিয়ে সংগঠন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারি ও কেন্দা ছাড়াও রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া বিধানসভার একাংশে এইচএমএস-এর প্রভাব রয়েছে। সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠন হওয়ায় এইচএমএস আবার ‘জয়েন্ট বাইপার্টাইট কনসালট্যান্ট কমিটি’র (জেবিসিসি) সদস্য। তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন ‘জেবিসিসি’-র সদস্য না হওয়ায় শাসক দলের সমর্থক অনেক শ্রমিক নিজেদের দাবি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার জন্য এইচএমএস-কে ব্যবহার করেন। এ বারের ভোটে এইচএমএস-এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
এইচএমএস-র সাধারণ সম্পাদক শিবকান্ত পান্ডে ২০১৬ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটকের উদ্যোগে। মঙ্গলবার শিবকান্তবাবু বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলে যোগ দিলেও আমাদের সংগঠন তৃণমূলের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে ‘কেকেএসসি’ আমাদের বিরোধিতা করেছে। তাই নির্বাচনে আমাদের সংগঠনের অবস্থা কী হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের অবস্থান পরে পরিষ্কার করা হবে।” এইচএমএস-এর রাজ্য সম্পাদক উদীপ সিংহ বক্তব্য, ‘‘কেকেএসসি-তে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না বলে অনেকেই এইএমএস-এ যোগ দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, তাঁরা জিতেন্দ্রর হাত ধরবেন।’’
কেকেএসসি-র সাধারণ সম্পাদক তথা এ বারের ভোটে জামুড়িয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হরেরাম সিংহের দাবি, ‘‘এইচএমএস-এর সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই। ওঁরা (কেকেএসসি ছেড়ে যাওয়া শ্রমিকেরা) সকলেই তৃণমূলকে ভোট দেবেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হবে।” এইচএমএস-এর সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘‘এইচএমএস-এর সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। ওঁদের ভোট আমরাই পাব। একই মন্তব্য রানিগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।
জিতেন্দ্র অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্যে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সংগঠনটি রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ। ভোটে ওরা কী করবে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ দলের শ্রমিক সংগঠন ভাঙিয়ে এইচএমএস-এ লোক নিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ বিধায়কের বিরুদ্ধে তৃণমূলের একাংশ তোলে, তা মানতে নারাজ জিতেন্দ্র। তবে তাঁর ‘হাত ধরে’ এইচএমএস-এ যোগ দেওয়া তৃণমূল কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা পাণ্ডবেশ্বরে তৃণমূল প্রার্থীকেই সমর্থন করবেন।