ফাইল চিত্র।
পাহাড়ের লড়াইয়ে নামলই না তৃণমূল। বদলে সঙ্গী মোর্চার দুই যুযুধান গোষ্ঠীকে ময়দান ছেড়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, ‘‘বন্ধুরা লড়াই করবেন। মানুষ যাঁকে পছন্দ করবে, তিনি জিতবেন। আর তিনিই আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন।’’ যা শুনে পাহাড়ের লোকজন বলছেন, তৃণমূল নেত্রীই কার্যত বিমল গুরুং ও বিনয় তামাং গোষ্ঠীকে নিজেদের মধ্যে ভোটযুদ্ধে ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন।
বস্তুত, বিমল ও বিনয় গোষ্ঠীর মধ্যে যে সমঝোতা প্রায় অসম্ভব, তা কিছু দিন ধরেই বুঝতে পারছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে বিমল গুরুং একতরফা জানিয়ে দেন, পাহাড়ের তিন আসনেই তাঁরা প্রার্থী দেবেন। শুক্রবার সকালে একই কথা ঘোষণা করেন বিমল সঙ্গী রোশন গিরি। বিনয়রাও যে পাহাড়ের তিন আসনে প্রার্থী দিতে চান, তা-ও কয়েক দিন ধরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই অবস্থায় শুক্রবার মমতার ঘোষণার পরে দুই মোর্চার মধ্যে লড়াই অনিবার্য হয়ে দাঁড়াল বলেই মনে করছে পাহাড়। এই লড়াইয়ের ফলে জিএনএলএফ-বিজেপি জোট বাড়তি সুবিধা পাবে কিনা, সেই প্রশ্নও এখন পাহাড়ে উঠতে শুরু করেছে।
অক্টোবরে গুরুং প্রকাশ্যে এসে তৃণমূলকে সমর্থনের পরই পাহাড়ে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। মাঝে একাধিকবার দলের তরফে দুই গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে কথা হয়। কার্শিয়াং আসন অনীত থাপাদের, কালিম্পং গুরুংদের দেওয়া হবে বলেও একটা সময়ে সমঝোতার চেষ্টা হয়। কিন্তু গোল বাধে দার্জিলিং নিয়ে। এই আসনটি বিমল ও বিনয়, দু’জনেরই খাসতালুক। এই জটেই শেষ পর্যন্ত সমঝোতা আটকে যায় বলে খবর।
রোশন গিরি বলেন, ‘‘গোর্খাদের স্বভিমান, আত্মসম্মানের প্রশ্নে ভোট হবে। আঞ্চলিক দলগুলিকে শক্তিশালী রাখার জন্য ভোট হবে। গোর্খা জাতির উন্নয়ন, দাবিদাওয়া নিয়ে ভোট হবে।’’ তিনি জানান, তিনটি আসনে প্রার্থীদের নাম দ্রুত জানানো হবে। একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করেন, সমতলের, বিশেষ করে তরাই-ডুয়ার্সের ১৪টি আসনে তাঁরা তৃণমূলকে জেতাতেই ঝাঁপাবেন। বিনয়পন্থী মোর্চার সচিব অনীত থাপা বলেছেন, ‘‘পাহাড়ের উন্নয়নের নামে ভোট হবে। কাজের নিরিখে ভোট হবে। আলাদা রাজ্যের দাবি থেকে মিথ্যার প্রতিশ্রুতি আমরা দেব না। তিনটি কেন্দ্রেই আমরা লড়ছি।’’ তবে জেতার পরে দু’পক্ষই যে তৃণমূলের সঙ্গে থেকে কাজ করবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রোশন এবং অনীত।
তৃণমূল কেন পাহাড়ে পা দিল না? দলের একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে এই ঝুঁকি দল নিতে চায়নি। বরং পাহাড়ে কোনও বন্ধু বিধায়ক থাকলে কাজে সুবিধা হবে, মনে করছে তৃণমূল।