ছবি প্রতীকী ফাইল চিত্র
পদ্মা আর ভৈরবের মাঝখানে প্রায় 'ভি' আকৃতি হয়ে আছে রানিনগর বিধানসভা। কিন্তু একযুগ আগেও এই বিধানসভার অস্তিত্ব ছিল না। তখন রানিনগরের একটা অংশ ছিল মুর্শিদাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে, বাকি অংশ ছিল জলঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ২০২১ সালে রানিনগরের মানুষ নতুন করে বিধানসভার স্বাদ পায়। রানিনগর ১ ব্লক ২ ব্লকের বড় একটা অংশ এবং ডোমকলের ধুলাউড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতকে নিয়ে গঠিত হয় রানিনগর বিধানসভা।
আর সেই বিধানসভা শুরু থেকেই দখলে রাখে কংগ্রেস। পরপর দুবার সেই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন কংগ্রেসের মহিলা প্রার্থী ফিরোজা বেগম। এবারও সেখানে ফিরোজা বেগমের সঙ্গে লড়াই হবে তৃণমূলের সৌমিক হোসেনের।
তবে বিধানসভার স্বাদ পেল উন্নয়নের দেখা মেলেনি রানিনগর বিধানসভায় ক্ষেত্রে। সে ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধীদলের বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া। ওই বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাসক দলের বিধায়ক না থাকার ফলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কংগ্রেসের দাবি, তৃণমূল পরপর দুবার হেরে যাওয়ায় বিরোধীদলের বিধায়ককে উন্নয়নের ক্ষেত্রে নানা রকমের বাধা দিয়েছেন। ফলে সমন্বয়ের অভাবে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে রানিনগর। ওই বিধানসভা এলাকার একাংশের মানুষের দাবি, একটা সময় মুর্শিদাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকার ফলে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হত রানিনগর বিধানসভা এলাকার মানুষ। কিন্তু নতুন করে বিধানসভা হওয়ার পরে তাঁরা অনেক আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় দলতন্ত্র। শাসক দলের বিধায়ক না হওয়ায় আমাদের নানা ভাবে বঞ্চিত হতে হয়েছে উন্নয়ন থেকে।
মূলত কৃষির ওপরে নির্ভর করে এই বিধানসভায় এলাকার বাসিন্দারা। তবে ভৈরব এবং পদ্মা নদী থাকায় বড় একটা অংশের মানুষ মাছ ধরেও নিজেদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন এখানে। তবে জলঙ্গির মত এই বিধানসভার ক্ষেত্রেও পদ্মা এবং ভৈরবের ভাঙন মানুষের জীবনে অনেক সময় বিপর্যয় ডেকে এনেছে নানা সময়ে।
এই বিধানসভা ক্ষেত্রেও বেশকিছু চর এলাকা আছে, যদিও দীর্ঘদিন আগে সেই চরগুলোতে বসতি গড়ে ওঠায় এখন সেখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা এবং বিদ্যুতায়ন হওয়ার ফলে উন্নতি ঘটেছে। স্কুলও তৈরি হয়েছে সেই চর এলাকাতে, ফলে সীমান্তের চর এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের দূরের গ্রামে আর লেখাপড়া করতে যেতে হয়না আগের মত। তবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিক দিয়ে এখনও পর্যন্ত পিছিয়ে আছে চর এলাকা।
তা ছাড়া এই এলাকার কৃষিজীবী মানুষের কাছে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সীমান্ত। কারণ সীমান্তের চর এলাকার মাঠে চাষ করতে গেলেই বিএসএফের নানান ফতোয়ার সামনে পড়তে হয় চাষিদের।
রানিনগরের বড় একটা অংশ বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে আছে, এমনকি একেবারে বাংলাদেশের রাজশাহী শহরের উল্টোদিকের গ্রামও এই বিধানসভা ক্ষেত্রের মধ্যেই পড়ে। রানিনগরের বাসিন্দা আব্দুল জাব্বার বলছেন, "ভাঙনের পরে আমাদের এলাকায় কয়েক হাজার একর জমি জেগে উঠেছে চরের মাঠে। কিন্তু সেই মাঠে শেষ প্রান্তে বিএসএফ না থেকে কয়েক কিমি ভেতরে পদ্মার শাখা নদীকে সীমান্ত বানিয়েই প্রহরা করে তাঁরা। ফলে বড় এলাকার চাষের মাঠে যেতে গিয়ে চাষিদের প্রায় বিএসএফের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বিষয়টি নিয়ে অনেক আন্দোলনের পরেও কোন সমাধান সূত্র পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সীমান্ত হওয়ার ফলে চোরা কারবারের সমস্যাও রানিনগরে একটা বড় সমস্যা। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার মাঠে গরুর পায়ের খুঁরে ফসল নষ্ট হওয়ার ঘটনা নতুন নয়, তবে ইদানিং গরু পাচারের সমস্যা অনেকটাই কমেছে ওই এলাকায়।