আব্বাস সিদ্দিকি। ফাইল চিত্র
মুসলিম নয়, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর প্রথম দফার প্রার্থিতালিকায় গুরুত্ব দেওয়া হবে তফসিলি জনজাতিভুক্তদের। কৌশলী ঘোষণা পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির। বুধবার ফুরফুরা শরিফে দাঁড়িয়ে আব্বাস আরও জানিয়েছেন, ভোটের পরেও জোটে থাকবেন তিনি।
আব্বাসের বিরুদ্ধে ‘সাম্প্রদায়িক’ তাস খেলার অভিযোগ। ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডে বাম এবং কংগ্রেসের যৌথ মঞ্চে আব্বাসকে দেখার পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকেই এমন অভিযোগ উঠছে। বুধবার সেই সব অভিযোগের ‘জবাব’ দিতে নতুন কৌশল তাঁর। কবে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করতে পারে আইএসএফ? জবাবে আব্বাসের বক্তব্য, ‘‘দেখছি কে কী ভাবে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে। তার পর সেই রীতি মেনে আমিও করব। না হলে আবার উল্টো বলে ফেলব হয়তো, তখন আবার আমাকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলা হবে। কংগ্রেস দক্ষিণবঙ্গে আমাকে ৮ থেকে ৯টি দিয়েছে। উত্তরবঙ্গে এখনও স্পষ্ট হয়নি। আর বামফ্রন্ট আগেই আমাদের ৩০টা ছেড়েছে। এই আসনগুলিতে আমরা প্রার্থী দেব।’’ একইসঙ্গে তাঁর ঘোষণা, ‘‘যে আইএসএফ-কে সাম্প্রদায়িক বলা হচ্ছে, তাদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বপ্রথম তফসিলি জনজাতিভুক্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করব। মুসলিম প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করব না। কারণ সেটা করলে আবার কারও কারও বুক ধড়ফড় করতে পারে।’’
ভোটের আগে বা পরে তৃণমূলের হাত ধরার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে আব্বাস বুধবার ফের বলেন, ‘‘যে আমার অধিকারের কথা ভাববে, যে আমাকে বাঁচাবার চেষ্টা করবে, সাংবিধানিক অধিকার যে আমাকে দেবে, তাকে আমি বাকি জায়গায় সাহায্য করব। তৃণমূলকেও প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে দেগে দিয়েছে। ওদের সঙ্গে কি মিলবে আর? বামেদের সঙ্গে আমাদের জোট হয়ে গিয়েছে। আমাকে যখন কেউ সাহায্য করছে, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তখন আমার মানবতা বলছে, বামেদের সঙ্গেই থাকা দরকার।’’
গত রবিবার ব্রিগেড সমাবেশের পর থেকেই চর্চায় আব্বাস। কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দল কী ভাবে ‘মৌলবাদী শক্তি’র সঙ্গে হাত মেলায় এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন হাতশিবিরের জাতীয় স্তরের নেতাদের একটি অংশও। দলে ‘বিক্ষুব্ধ’ হিসাবে পরিচিত আনন্দ শর্মা টুইট করেন, ‘আইএসএফ-এর মতো শক্তির সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা নেহরু-গাঁধীর ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনার সঙ্গে মেলে না। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস কখনও বাছ-বিচার করতে পারে না। ওই মঞ্চে বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির উপস্থিতি ও সমর্থন বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক! তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত’। আনন্দের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী পাল্টা বলেন, ‘‘এই মন্তব্য বেদনাদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক! সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, বিমান বসুরা সকলেই মঞ্চে ছিলেন। তাঁরা সকলে ‘মৌলবাদী শক্তি’র হাত ধরলেন, এমন ধারণা কী করে হল, ভাবতে অদ্ভুত লাগছে।’’ বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে আসরে নামতে হয় অসমে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা বঢরাও। আব্বাসকে নিয়ে প্রিয়ঙ্কার বার্তা, ‘‘কোনও জোটের শরিকরা কখনও সব বিষয়ে ১০০ শতাংশ একমত হতে পারে না।’’ তাঁর ওই বক্তব্যের পর থিতিয়ে গিয়েছে আব্বাস-বিতর্ক।