নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে মেরুকরণের নানা প্রসঙ্গের মধ্যেই এ বার ‘তিন তালাক’ টেনে আনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় সরকার ‘তিন তালাক’ প্রথা রুখতে কড়া আইন বানালেও তৃণমূল তার বিরোধিতা করে মুসলিম মহিলাদের বিরুদ্ধে গিয়েছেন বলেও অভিযোগ তুললেন তিনি। শনিবার রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের দিন বাংলায় দু’টি সভা করেন মোদী। প্রথমটি শিলিগুড়িতে ও পরেরটি নদিয়ার কৃষ্ণনগরে।
প্রথম সভায় এই প্রসঙ্গে কিছু না বললেও কৃষ্ণনগরে মোদী বলেন, ‘‘মুসলমান মা বোনেরা দিদিকে অনেক সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু দিদি তাদের সঙ্গে খুব খারাপ কাজ করেছে। তাঁদের তিন তালাক প্রথা থেকে মুক্ত করতে কড়া আইন এনেছে বিজেপি সরকার। কিন্তু দিদি মুসলিম বোন ও কন্যাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন।’’ মুসলিম মহিলারাও স্বাধীনতা চান, নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চান বলে উল্লেখ করে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘দিদি মুসলিম মেয়েদের থেকে কট্টরপন্থীদের কথা বেশি চিন্তা করেছেন।’’ এর পরেই হুঁশিয়ারির সুরে মোদী বলেন, ‘‘এই মঞ্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গের সব মা, বোন, কন্যাকে বলছি, ডাবল ইঞ্জিন সরকার আপনাদের হিতের জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে।’’
তৃতীয় দফার ভোটের আগে হুগলির তারকেশ্বরে মমতার একটি মন্তব্যে সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা করার স্পষ্ট বার্তা ছিল বলে আগেই অভিযোগ করেন বিজেপি। তারকেশ্বেরের ওই সভায় নাম না করে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা তথা সেকুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (আইএসএফ)-র প্রধান আব্বাস সিদ্দিকির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু ভোট ভাগের অভিযোগ করেছিলেন মমতা। নাম না করে আব্বাসকে নিশানায় রেখে তিনি বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু ভাইবোন, আপনাদের কাছে হাতজোড় করে একটা কথা বলব, ওই শয়তান ছেলেটা যেটা বেরিয়েছে বিজেপি-র টাকা নিয়ে, ওইটার কথা শুনে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করবেন না। ও অনেক সাম্প্রদায়িক কথা বলে। ও হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে লাগায়। ও বিজেপি-র আর একটা শাগরেদ। একেবারে বিজেপি-র কমরেড। বিজেপি-র টাকা নিয়ে বেরিয়েছে, যাতে সংখ্যালঘু ভোটটা ভাগ হয়ে যায়।’’ এই মন্তব্যের জন্য ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন নোটিস পাঠিয়েছে মমতাকে।
তবে তার আগেই গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিন পাল্টা আক্রামণ করেন মোদী। সে দিন কোচবিহারের সভা থেকে মোদী বলেন, ‘‘আপনি জনসভায় যা যা বলছেন, তা বললে আমাকে এত দিনে নির্বাচন কমিশনের নোটিস পেতে হত। সংবাদপত্রে সম্পাদকীয় বিভাগ ভরে যেত সমালোচনায়। আপনি বলছেন, ‘মুসলিমরা একজোট হয়ে ভোট দাও’। আমি যদি বলতাম, ‘হিন্দুরা জোট বেধে বিজেপি-কে ভোট দাও’, কেমন হত ভাবুন তো?’’
মুসলিম ভোটের ভাগাভাগি নিয়ে চাপানউতরের এমন পরিস্থিতির মধ্যেই শনিবার নতুন মাত্রা যোগ করলেন মোদী। তবে শুধু মুসলিম মহিলাদের কথাই নয়, মোদী তাঁর কৃষ্ণনগরের বক্তব্যে মহিলাদের নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে মহিলাদের আস্বস্ত করতে বলেন, ‘‘বাংলায় ডাবল ইঞ্জিন সরকার হলে, ডাবল বেনিফিট দিয়ে ডাবল স্পিডে কাজ করবে।’’
মোদীর এই সভায় কৃষ্ণনগর উত্তরের প্রার্থী বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় ছাড়াও পঞ্চম দফায় ভোটগ্রহণ যে সব আসনে সে সব জায়গার অনেক প্রার্থীরা হাজির ছিলেন।