jalpaiguri

bengal polls: জলপাইগুড়ি কার, ‘হাইলি সাসপিশাস’  

গত লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই ‘অসুখে’ ধরেছে তৃণমূলকে। লোকসভা ভোটের বিপর্যয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সংগঠনে রদবদল করেন রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩৫
Share:

ফাইল চিত্র।

লালমোহনবাবু থাকলে নির্ঘাত বলতেন, “হাইলি সাসপিশাস্!”

Advertisement

অর্ধেক বুথে এজেন্ট ছিল না। বহু পাড়ায় একখানা পোস্টারও ছিল না। তবু জলপাইগুড়ি শহরের সব ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি প্রার্থী। প্রচার ছাড়াই জলপাইগুড়িতে পদ্মের জয়জয়কার হয়েছিল গত লোকসভা ভোটে। তৃণমূল কোনও কোনও বুথে তিন নম্বরে পৌঁছে গিয়েছিল। কী ভাবে এটা সম্ভব হয়েছিল, তার নানা ব্যাখ্যা এখনও চলে। তবে লালমোহনবাবুর সংলাপ ধার করে সেই ব্যাখ্যাকে রহস্যময় করা যেতেই পারে। অন্তত জলপাইগুড়ি সদর বিধানসভা ভোটের হাওয়ায় সন্দেহের গন্ধ তো ভাসছেই।

গত লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই ‘অসুখে’ ধরেছে তৃণমূলকে। লোকসভা ভোটের বিপর্যয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সংগঠনে রদবদল করেন রাজ্য নেতৃত্ব। সদর বিধানসভার প্রায় সব ব্লকের সভাপতিদের সরিয়ে দেন নতুন জেলা নেতৃত্ব। সরে যাওয়া নেতাদের বড্ড গোঁসা। সেও এক অসুখ। জলপাইগুড়ি পুরসভায় টানা আঠারো বছর পুরসভার চেয়ারম্যান থাকা মোহন বসুও গোঁসাঘরে ঢুকে খিল দিয়েছেন। শহরের পঁচিশটি ওয়ার্ডে তাঁর ‘নেটওয়ার্ক’ও নিষ্ক্রিয়। ঘর পাইয়ে দেওয়া থেকে ত্রিপল বিলি, পাম্পসেট, সৌর আলো বিলি নানা প্রকল্পে শহরে গ্রামে নানা অভিযোগও উঠেছিল দলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। দলের অন্দরে যা ‘কাটমানি অসুখ’ নামে পরিচিত। এই যাবতীয় অসুখের চিকিৎসা করাতে পিকে টিম বেছেছে এক চিকিৎসককে।

Advertisement

লোকসভা ভোটের ঠিক পরপরই জলপাইগুড়ি শহরের পরিচিত চিকিৎসক তথা একটি নার্সিংহোমের কর্ণধার প্রদীপকুমার বর্মাকে দলে টেনেছে তৃণমূল। যে দল এখনও পর্যন্ত একবার জলপাইগুড়ি বিধানসভায় খাতা খুলতে পারেনি। প্রদীপ বর্মার মতো চিকিৎসক রাজনীতিতে যোগ দেওয়ায় শহরের অনেকেই চমকে উঠেছিলেন। রাজনৈতিক মুখকে প্রার্থী না করে জলপাইগুড়ি বিধানসভায় প্রদীপবাবুকেই প্রার্থী করে চমক দিয়েছে তৃণমূল। প্রদীপবাবুও বলছেন, “এ বার জলপাইগুড়ি আসন আমরা জিতবই।” দলের ক্ষোভ-বিক্ষোভ? ডাক্তারবাবু ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, তিনি তো কোনও গোষ্ঠীর লোক নন। সেই কারণে সকলেই তাঁর জন্য লড়ছেন। এটা তাঁর সুবিধে। সত্যি কি তাই?

ফের লালমোহনবাবুর সংলাপ মনে পড়ে গেল, ‘হাইলি সাসপিশাস্!’

প্রথমে বলেছিলেন লড়বেন না। শেষে প্রাক্তন আমলা জলপাইগুড়ির বিদায়ী বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা রাজি হয়েছেন এআইসিসি এবং বামেদের চাপে। ২০১৬ সালে তৃণমূল হাওয়া রুখে দিয়েছিলেন সুখবিলাসবাবু। জেলার সাতটি বিধানসভা আসনের একমাত্র এই একটি আসনেই তৃণমূলকে হারাতে পেরেছিল বাম-কংগ্রেস জোট। বলছেন, “তৃণমূল আর বিজেপি ভোট কাটাকাটি করবে। জিতব আমরাই। এটাই হাওয়া।” কিন্তু কংগ্রেস-কর্মীদের অনেককেই সুখবিলাসবাবুর পাশে হাঁটতে দেখা গেলেও, নিজের পাড়ায় সে-ভাবে প্রচারে দেখা যাচ্ছে না।

জেলা কংগ্রেস চেয়েছিল এই আসনে জলপাইগুড়ির তরুণ কোনও নেতা প্রার্থী হোক। তা হয়নি। তাতেই নাকি ফুঁসছেন অনেকে। কংগ্রেস প্রার্থীর প্রচারের অনেকটা দায়িত্বই কাঁধে তুলে নিয়েছে বামেরা। এই একই রোগ গেরুয়া ঘরেও। বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি দীপেন প্রামাণিকের ছবি দেওয়া পোস্টার এখনও জলপাইগুড়িতে দেখা যাচ্ছে। প্রার্থী তালিকায় দীপেনবাবুর নাম না দেখে অনুগামীরা সেই সব পোস্টার ঝুলিয়েছিলেন। যদিও তার পরে সাংবাদিক বৈঠক করে দীপেনবাবু দাবি করেছেন, তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই, তিনি দলের প্রার্থীর সঙ্গেই আছেন। কিন্তু সেই পোস্টারগুলি এখনও শহরে রয়েছে। ‘হাইলি সাসপিশাস্’ই বটে!

কী ভাবছে জলপাইগুড়ির বাসিন্দারা। রাতে দোকান গুটিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পোস্ট অফিস মোড়ে দাঁড়িয়ে আদরপাড়ার বাসিন্দা এক চা বিক্রেতা বললেন, “জলপাইগুড়ি একসময়ে জেলা শহর ছিল, ব্যবসা বাণিজ্য ভাল হত। এখন তো শহরটা একেবারে পাড়াগাঁয়ের মতো চেহারা। এত বছরেও পুরসভা কর্পোরেশন হল না। এলাকার উন্নতি যে করবে তাকেই ভোট দেব।”

তৃণমূল প্রার্থী বলেন, “এতদিন তো তৃণমূল এই বিধানসভায় জেতেই নি। এবার জিতলে আরও কাজ হবে।” সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থীর কথায়, “গত দশ বছর তৃণমূল সরকার জলপাইগুড়ি থেকে শুধু লুঠ করেছে, কাজের কাজ করেনি। তবু আমি নানা জায়গা থেকে তহবিল এনে কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও করব।” বিজেপি প্রার্থী প্রতিটি সভায়, ঘরোয়া বৈঠকে নিয়ম করে বলছেন, “বিজেপিকে ভোট দিলে জলপাইগুড়িতেও ডবল ইঞ্জিন সরকার হবে। গত পনেরো বছর ধরে জলপাইগুড়ি যে সুবিধে পায়নি। রাজ্য এবং শহরে এক দলের সরকার হলে তবেই উন্নয়ন।”

শেষমেষ ভোটের হাওয়া লাগবে কার পালে? লালমোহনবাবু থাকলে আলবাত বলতেন, “হাইলি সাসপিশাস!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement