বাড়িতে সমর্থকদের সঙ্গে বেচারাম ও করবী। —নিজস্ব চিত্র।
ভোট মিটে গেলেও নন্দীগ্রাম নিয়ে টানাপড়েন চলছেই। কিন্তু সিঙ্গুর হাতছাড়া হল না তৃণমূলের। নেপথ্যে বেচারাম মান্না। যাঁর পক্ষ নেওয়ায় মমতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপি-তে চলে গিয়েছিলেন মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। মাস্টারমশাইয়ের অভিজ্ঞতার পরিবর্তে বেচারামকে বেছে নেওয়ায় সেই সময় তৃণমূলের অন্দরেই দলনেত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। কিন্তু সিঙ্গুর ধরে রেখে মমতার মান রাখলেন বেচারাম। একই সঙ্গে স্ত্রীকে ভোটে দাঁড় করিয়ে ধরে রাখলেন হরিপালও।
নির্বাচনী প্রচারে সিঙ্গুরে ফের টাটাদের ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন অধুনা বিজেপি মুকুল রায়। তাতে নীলবাড়ির লড়াইয়ে নন্দীগ্রামের মতো সিঙ্গুর নিয়েও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল জোড়াফুল শিবিরে। মমতা বেচারামের পক্ষ নেওয়ায় রবীন্দ্রনাথ যখন সপুত্র বিজেপি-তে যোগ দিলেন, সেই উৎকণ্ঠা অন্য মাত্রা পায়। প্রশ্ন ওঠে, সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম কারিগর পাশে না থাকলে লড়াইটা আদৌ সহজ হবে তো মমতার পক্ষে?
কিন্তু রবিবার ভোটের ফলাফল বেরনোর পর দেখা গেল, শুধুমাত্র সিঙ্গুরের জমি ধরে রাখাই নয়, বিজেপি-র হয়ে দাঁড়ানো রবীন্দ্রনাথের থেকে ২৫ হাজার ৯১২ ভোটে জয়ী হয়েছেন বেচারাম। হরিপালে তাঁর ছেড়ে যাওয়া আসনেও ২৩ হাজার ৭১ ভোটের নিরাপদ ব্যবধানে জয়ী হাসিল করতে সফল হয়েছেন বেচারামের স্ত্রী তথা হুগলি জেলায় দলের সভানেত্রী করবী মান্নাও।
কোভিড সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে এই মুহূ্র্তে বিজয় উৎসবে শামিল না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। তাই ইচ্ছা থাকলেও জয় উদ্যাপন করতে পারছিলেন না বেচারাম সমর্থকরা। কিন্তু সকাল হতেই আবেগের বাঁধ ভাঙে। ফুলের মালা, মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে সটান বেচারামের বাড়িতে হাজির হন দলের সমর্থকরা। ‘দাদা-বৌদি’কে সবুজ আবির মাখিয়ে, শঙ্খ বাজিয়ে অভিনন্দন জানান তাঁরা। সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখে বেচারাম বলেন, ‘‘সিঙ্গুর রাহুমুক্ত হয়েছে। মানুষ যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই রয়েছেন, তা ফের একবার প্রমাণিত হল।’’ করবী বলেন, ‘‘আগামী দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।’’