চাঁচল কেন্দ্রের ৩ দলের প্রার্থী: (বাঁ-দিক থেকে) কংগ্রেসের আসিফ মেহেবুব, তৃণমূলের নীহাররঞ্জন ঘোষ এবং বিজেপি-র দীপঙ্কর রাম। —নিজস্ব চিত্র।
চাঁচলকে পুরসভা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোট বৈতরণী পার হতে চায় তৃণমূল। ইংরেজবাজার বিধানসভার বিদায়ী বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষকে চাঁচল বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করে চমক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে, এই কেন্দ্রের বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের এই দাবিকে হাতিয়ার করে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট এবং বিজেপি-কেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে শাসক শিবির।
ভোটে লড়েছেন, অথচ হেরে গিয়েছেন— এমনটা নীহারের ট্র্যাক রেকর্ডে নেই। জেলার দাপুটে নেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে পুরসভা এবং বিধানসভা, ২ নির্বাচনেই হারিয়েছেন। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব আশাবাদী যে, এই আসনটি ছিনিয়ে নিতে পারবেন নীহার।
তবে নীহারের জয় যে সহজ হবে না, তা মনে করছেন অনেকে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কংগ্রেসের দখলে চাঁচল। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির হাত ধরে এখানে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে তারা। কংগ্রেস প্রার্থী আসিফ মেহেবুবের বাবা মহাবুবুল হকও এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। মহাবুবুলের সুনামকে হাতিয়ার করেই এ কেন্দ্রে আসিফ প্রার্থী হন। টানা ২ বার এখানে জিতেই বিধানসভায় গিয়েছেন। তবে তা সত্ত্বেও চাঁচলের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। প্রস্তাবিত পুরসভা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি আজও।
বাম জমানায় চাঁচলকে পুরসভা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে কংগ্রেস প্রার্থী আসিফের অভিযোগ, ‘‘বিধানসভায় বহু বার এ দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা নাকচ করে দিয়েছিলেন। সঙ্গে বলেছিলেন যে, চাঁচল পুরসভায় পরিণত হলে ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হবে এলাকাবাসী। এলাকার গরিবদের হাতে টাকা যাবে না। সম্পত্তিকর-সহ যাবতীয় করের বোঝা বাড়বে। তাই তা বাস্তবায়িত হবে না। আজ তাঁর দলেরই প্রার্থী পুরসভা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছে। আর তাতেই বোঝা যায় যে তৃণমূলের নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই। শুধু ভোট বৈতরণী পার হওয়ার জন্য এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’’
চাঁচলের বিজেপি প্রার্থী দীপঙ্কর রামের কণ্ঠেও প্রায় এক সুর শোনা গিয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘চাঁচলবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি তৃণমূল সরকার। তার জবাব তাঁরা ব্যালটে দেবেন।’’ তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের প্রার্থীদের 'বহিরাগত' আখ্যা দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, ‘‘এলাকার ভুমিপুত্র হওয়ার সুবাদে ৩৬৫ দিনই এলাকায় থাকি। তাই এখানকার সমস্যার কথা জানি।’’
যদিও এলাকার অনেকের মতে, নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, চাঁচল কেন্দ্রে ত্রিমুখী লড়াই জমজমাট!