নববর্ষের পরেই মার্কশিট। প্রার্থী, ভোটারদের মনে ঢুঁ মারল আনন্দবাজার
Suvendu Adhikari

Bengal polls: ‘যেই-ই জিতুক, যেন শান্তি বজায় থাকে’

ভোট মিটে যাওয়ার পর ২ এপ্রিলই নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার ভাড়া বাড়ি থেকে ভোট প্রচারে অন্য জেলায় রওনা হন তৃণমূল নেত্রী।

Advertisement

কেশব মান্না

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১৪
Share:

দলের ব্যানার, পতাকায় শক্তি প্রদর্শনের লড়াই। নন্দীগ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

দ্বিতীয় দফায় গত ১ এপ্রিল ভোট মিটে গিয়েছে নন্দীগ্রামে। তারপর থেকে মমতা এবং শুভেন্দু চষে বেড়াচ্ছেন গোটা রাজ্য জুড়ে। তবে, কেন্দামারি থেকে বয়াল- রাজনৈতিক হিংসা বেড়েছে। ফলে ভোটের আগে যেমন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল নন্দীগ্রাম। ভোট মিটে যাওয়ার পরেও একাধিক হিংসার ঘটনায় আলোচনাতেই থেকে গিয়েছে এই কেন্দ্র। নন্দীগ্রামে রাজনৈতিক অশান্তিতে চাপ বাড়ছে যুযুধান তৃণমূলও বিজেপির নেতাদেরও।

Advertisement

নন্দীগ্রামে ভোটের ফল কী হতে পারে সেই আলোচনা মূলত ঘুরপাক খাচ্ছে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে। ফলে মাথাব্যথা দুই শিবিরের প্রধান সেনাপতিদেরও। পাশাপাশি ভোট পরবর্তীতে আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে সকাল থেকে রাত ছুটে বেড়াতে হচ্ছে তাঁদের।

ভোট মিটে যাওয়ার পর ২ এপ্রিলই নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার ভাড়া বাড়ি থেকে ভোট প্রচারে অন্য জেলায় রওনা হন তৃণমূল নেত্রী। তারপর থেকে ব্যস্ততার অন্ত নেই তাঁর অন্যতম প্রধান সেনাপতি তথা নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের। রবিবার নন্দীগ্রাম-১ ব্লক কমিটির উদ্যোগে নির্বাচনী পর্যালোচনা বৈঠকে হাজির ছিলেন সুফিয়ান। সভায় নন্দীগ্রামের অঞ্চল এবং বুথ ভিত্তিক ভোটের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হয়। বাড়িতে বসেও সুফিয়ান প্রতিটি এলাকায় দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সুফিয়ান সহ তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটের প্রধান সেনাপতিরা এলাকায় প্রকাশ্যে সে ভাবে ঘোরাফেরা করতে পারছেন না বললেই চলে। কেননা, ২০০৭ সালে জমি আন্দোলন পর্বে যে সব ফৌজদারি মামলা ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে রুজু করেছিল পুলিশ, সেই সব মামলা গত বছর ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ প্রত্যাহার করে রাজ্য সরকার। যদিও মামলা প্রত্যাহারের পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন বিজেপির আইনজীবী নেতা তথা নন্দকুমারের প্রার্থী নীলাঞ্জন অধিকারী। তারপর সুফিয়ান সহ তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয় হলদিয়া মহকুমা আদালত। গ্রেফতারি এড়াতে তাই ভোটের প্রচারে সেভাবে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি এঁদের।

Advertisement

সুফিয়ানের দাবি, ‘‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে বাড়িতে বসে জনসংযোগ করছি। দলের নেতাদের কাছ থেকে প্রতি মুহূর্তের এলাকাভিত্তিক যে খবর পাচ্ছি তাতে বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি কর্মীরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। প্রশাসনকে সব জানিয়ে পদক্ষেপ করার কথা বলেছি।’’ মমতার আর এক সেনাপতি নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বদেশ দাসের অবশ্য দাবি, ‘‘ভোটের দিনও গ্রেফতার করবে বলে চক্রান্ত করা হয়েছিল। কিন্তু দিদিকে ভোট যুদ্ধে জেতানোর লক্ষ্যে বসে থাকিনি। আর ভোট মিটে যাওয়ার পরে কোন বুথ থেকে কত লিড আসতে পারে সে ব্যাপারে অঞ্চল ও বুথ নেতাদের কাছ থেকে হিসাব মিলিয়ে নিচ্ছি।’’

তার পুরনো নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই ভোটের পর নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রামে আর পা রাখেননি বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। উত্তরবঙ্গে ভোটের প্রচার শেষ করে আপাতত হাওড়ায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে ব্যস্ত। তাই গোটা নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকা সামলাতে হচ্ছে তাঁর প্রধান সেনাপতি মেঘনাদ পালকে। সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নন্দীগ্রামের বিজেপির ব্লক কার্যালয়ে চলে যান মেঘনাদ। এটাই ভোট পরবর্তী সময়ে তাঁর রোজকার রুটিন। সেখানে ঘরছাড়া বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ভাল-মন্দ নিয়ে খোঁজখবর নেন। তারপর এলাকা ভিত্তিক সাংগঠনিক এবং নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি। মেঘনাদ বলেন, ‘‘মহম্মদপুর, কেন্দামারি এলাকায় বিজেপি কর্মীদের উপর বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকেরা অত্যাচার চালাচ্ছে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। শুভেন্দুবাবু নিয়মিত ফোনে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। সেই মতো গোটা বিধানসভা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’’ বিজেপি প্রার্থীর সেনাপতি জানান, ‘ভূমিপুত্র’র জয়ের ব্যবধান তিরিশ হাজার করার লক্ষ্য়ে হিসাব মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

হিসাব মেলাতে ব্যস্ত বামেরাও। সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও ভোটের পর নন্দীগ্রাম ছেড়েছেন। তাঁর প্রধান সেনাপতি মহাদেব ভুঁইয়া বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি এবং গণনা সংক্রান্ত ব্যাপারে আলোচনা করছি। তবে সকলের আলোচনায় এখনও রয়েছেন মীনাক্ষী।’’

সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এবং তাঁদের সেনাপতিরা যখন ভোটের জটিল অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত, সেসময় রবিবার সন্ধ্যায় কালবৈশাখীর ঝড় প্রচণ্ড গরমে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। ভোটের পর অশান্তির পরিবর্তে সেই স্বস্তিটুকুই চাইছেন নন্দীগ্রামের মানুষ।

মার্কেটিং-এর কাজ করেন টেঙ্গুয়ার এক যুবকের কথায়, ‘‘ভোট মিটে গিয়েছে। এ বার অন্তত শান্তি ফিরুক নন্দীগ্রামে। সকলে যেন আগের মতোই মিলেমিশে থাকতে পারি।’’ রেয়াপাড়ায় রাস্তার ধারে খাওয়ার হোটেল চালান এমন এক মহিলা বলেন, ‘‘যেই-ই আসুক, যেন শান্তি ফিরে আসে। সকলে যেন নিশ্চিন্তে পেটের ভাত জোগাড় করতে পারেন।’’

এই মুহূর্তে গোটা নন্দীগ্রামের চাহিদাটাই যেন উঠে এল ওঁদের মুখে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement