আরাবুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে পরেই রাজ্যবাসী জেনে গিয়েছিলেন, বেজায় চটেছেন আরাবুল ইসলাম। ‘দাদা’ টিকিট না পাওয়ায় পথ অবরোধ, বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁর অনুগামীরা। সাংবাদিক সম্মেলনে চোখের জলও ফেলেন আরাবুল। যাঁকে প্রার্থী করায় এত কাণ্ড, সেই ‘বহিরাগত’ রেজাউল করিম বুধবার হাজির হলেন ভাঙড়ে আরাবুলের বাড়িতে। ‘মান ভাঙাতেই’ এই পদক্ষেপ বলে জানাচ্ছে দলের একটি সূত্র। দু’জনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরে আরাবুল বলেন, ‘‘মান-অভিমান হতেই পারে। তবে দলে আছি, দলে থাকব। দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, তাঁকে কাঁধে নিয়ে ভোট বৈতরণী পার হব।’’ রেজাউলও বলেন, ‘‘আরাবুল ভাইয়ের পরামর্শ মতোই চলব।’’ দু’জনে হাতে হাত মিলিয়ে ছবিও তোলেন পরে। তবে উপস্থিত দলের কর্মী-সমর্থকদের অনেককেই পরে বলতে শোনা গেল, ‘‘সবই তো হল, কিন্তু দাদার মুখে এক চিলতে হাসিও তো দেখলাম না আজ!’’
যতই হুঙ্কার ছাড়ুন না কেন, দল ছাড়ার ঝুঁকি আরাবুল যে নেবেন না, এমনও শোনা যাচ্ছিল দলের নেতা-কর্মীদের অনেকের মুখে। আরাবুল ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। তাঁর ছেলে হাকিমুল পোলেরহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, হাকিমুলের স্ত্রী জেলা পরিষদ সদস্য। দল ছাড়লে আরাবুলের পুরো পরিবার রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও ঝুলে রয়েছে। রাজনৈতিক মহল তাই মনে করছেন, বিদ্রোহের সুর নরম করা ছাড়া উপায় ছিল না ভাঙড়ের ‘তাজা নেতার।’
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, টিকিট না পেয়ে আরাবুল যখন ক্রমশ হুঙ্কার ছাড়ছেন— সে সময়ে দলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে কলকাতায় ডেকে পাঠান। সংযত থাকার বার্তা দেন। তারপর ক’দিন আর আরাবুল বা তাঁর অনুগামীদের দাপাদাপি দেখা যায়নি।
বুধবার বেলা আড়াইটে নাগাদ রেজাউল হাজির হন তাঁর বাড়িতে। খবর চাউর হতেই কয়েক হাজার আরাবুল-অনুগামী বাড়ির সামনে ভিড় জমান। দলের কিছু স্থানীয় নেতাও আসেন। দু’ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলে। পরে দলীয় কর্মীদের আরাবুল বলেন, ‘‘তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে এই দলের সঙ্গে আছি। অনেকে অনেক কথা বলছে, আরাবুল ইসলাম দল ছেড়ে দিচ্ছে। সবটাই ভুল খবর। আমি দলে আছি, থাকব। কেউ কেউ বলছিলেন, আমি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই দলে যাব বলে। একটা কথা জেনে রাখবেন, দল না করলে আরাবুল ইসলাম বসে থাকবে। অন্য কোনও দলে যাবে না।’’
রেজাউল বলেন, ‘‘আরাবুল ইসলামের জনপ্রিয়তা দেখে আমি অভিভূত। দলের নির্দেশেই আমি এখানে এসেছি। এ বার নির্বাচনে দলের আসল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে।’’ এ দিন আগাগোড়া আরাবুলের প্রশস্তি ছিল রেজাউলের মুখে। তিনি বলেন, ‘‘উনি ভাঙড়ে তৃণমূলের স্থপতি। ওঁকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আরাবুল ভাইয়ের পরামর্শ মতো চলব।’’
এ বার ভাঙড় বিধানসভা নির্বাচন কমিটিতেও আরাবুলের ঠাঁই হয়নি। এ বিষয়ে ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আরাবুল কোনও পদে না থেকেও ভাঙড়ের আন্দোলনের অন্যতম মুখ। তিনিই ভাঙড়ের নেতৃত্ব দেন।’’