Malda

Bengal Election: টেক্কা দিচ্ছেন ওঁরা, মালদহে প্রায় সব দলেই কোটিপতি ও লাখপতি প্রার্থীর ছড়াছড়ি

দিন মজুর থেকে আস্ত কারখানার মালিক হয়েছেন কেউ। কেউ আবার আমদানি-রফতানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

Advertisement

জয়শ্রী সিংহ

মালদহ শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ১৯:৩৩
Share:

মালদহে কোটিপতি-লাখপতি প্রার্থীর ছড়াছড়ি।

ঝাঁ চকচকে জীবনযাত্রা বজায় রাখতে গিয়ে কেউ মোটা টাকার ঋণ নিয়ে রয়েছেন। কেউ আবার নিজে পোড় খাওয়া রাজনীতিক হলেও রোজগারে স্ত্রী বা স্বামীর থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। নীলবাড়ির লড়াইয়ে নির্বাচন কমিশনে সব দলের প্রার্থীরা হলফনামা দিয়ে সম্পত্তির যে খতিয়ান দিয়েছেন, তা থেকে এমন তথ্যও উঠে এসেছে। তবে ভোটের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, বৈভব নিয়ে টক্করে রাজ্যের অন্যান্য জায়গার প্রার্থীদের গোল দেবেন এ বারের মালদহের প্রার্থীরা। এই জেলায় তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেস— সব দলের ২১ জন প্রার্থী ওই তালিকায় রয়েছেন। তুলনামূলক ভাবে তেমন খ্যাত না হওয়া এই নেতা-নেত্রীদের ১৯ জন স্বামী-স্ত্রী মিলে সম্পত্তির হিসাবে কোটিপতি। স্বামী-স্ত্রী মিলে কোটির ঘরের কাছাকাছি রয়েছেন ২ প্রার্থী।

Advertisement

নির্বচন কমিশনে সম্পত্তির যে খতিয়ান দিয়েছেন মালদহের প্রার্থীরা, সেই নিরিখে একবারে শীর্ষে রয়েছেন জেলার তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল চৌধুরী। নিজের নামে ৭ কোটি ২ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। স্ত্রীর নামে ১৬ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার সম্পত্তি রয়েছে। উজ্জ্বল মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন। পেশায় ব্যবসায়ী। নিজের নামে পেট্রল পাম্প রয়েছে। বহু বিঘে জমির আমবাগাম থেকেও প্রচুর আয়।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন রতুয়ার নির্দল প্রার্থী পায়েল খাতুন। নিজের নামে ২ কোটি ৩২ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। স্বামী শেখ ইয়াসিনের নামে রয়েছে ৪ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকার সম্পত্তি। পায়েল এবং ইয়াসিন, দু’জনের নামে মালদহ জেলায় যথাক্রমে ৫.৪০ এবং ৪.২৯ একর করে কৃষি জমি রয়েছে। সোনাগয়না মিলিয়ে পায়েলের অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৬৪ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার। ইয়াসিনের নামে অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার। উত্তরাধিকার সূত্রে দু’জনের কেউই সম্পত্তি পাননি।

Advertisement

হরিশচন্দ্রপুরের বিজেপি প্রার্থী মতিবুর রহমানও কারও চেয়ে কম যান না। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মতিবুর নিজের এবং স্ত্রী মনশেরা বিবির নামে থাকা সম্পত্তির পরিমাণ ৫ কোটি ৬ লক্ষ টাকা বলে কমিশনকে হিসেব দিয়েছেন। টয়োটা ফরচুনার, মারুতি ভিতারা ব্রিজা এবং টাটা হ্যারিয়ার, মোট তিনটি গাড়ি আছে তাঁর। রাজনীতিতে সম্প্রতি হাতেখড়ি হয়েছে মতিবুরের। উত্তরপ্রদেশে লোহার গ্রিল তৈরির কারখানা রয়েছে তাঁর। এক সময় ১০ টাকা রোজে শ্রমিকের কাজ করেছেন বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। তবে নিঃসন্তান এক ব্যক্তি সন্তানস্নেহে তাঁর হাতে নিজের কারখানা তুলে দেওয়ার পরেই ভাগ্য খুলে যায় বলে জানিয়েছেন মতিবুর।

কোটিপতির তালিকায় তৃণমূলেরই আধিপত্য বেশি। তাদের মোট ৮ জন প্রার্থী কোটিপতি। উজ্জ্বল ছাড়াও রয়েছেন মালতিপুরের প্রার্থী আব্দুর রহিম বক্সী। নিজের নামে ৫০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি দেখালেও, তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। তাঁর স্ত্রী পেশায় আইসিডিএস কর্মী।

রতুয়ার তৃণমূল প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায় যিনি পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক তাঁর নামে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৯৪ লক্ষ টাকা। মোথাবাড়ির প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন নিজের নামে ১৮ লক্ষ ২১ হাজার টাকা এবং স্বামীর নামে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকার হিসেব দেখিয়েছেন।

ইংরেজ বাজারের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী নিজের নামে মোট সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে ১৭ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকার সম্পত্তি রয়েছে।

সুজাপুরের প্রার্থী আবদুল গনির সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। গাজলের বাসন্তী বর্মণের নামে সম্পদের পরিমাণ ৩৯ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা। তাঁর স্বামীর নামে সম্পত্তি রয়েছে ৮১ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকার।

বৈষ্ণবনগরের চন্দনা সরকারের একার নামে ৫৮ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি রয়েছে। তাঁর স্বামীর নামে রয়েছে ৭৪ লক্ষ ১৫ হাজার চাকার সম্পত্তি।

সংখ্যায় কম হলেও সম্পত্তির পরিমাণে তৃণমূলকে টক্কর দিচ্ছে বিজেপি। মতিবুর ছাড়াও তাদের আরও চার প্রার্থী কোটিপতি— চাঁচলের দীপঙ্কর রাম, মানিকচকের গৌরচন্দ্র মণ্ডল, মোথাবাড়ির শ্যামচাঁদ ঘোষ এবং মালদহের প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহা।

পেট্রল পাম্পের মালিক এবং গ্যাসের ডিলারশিপ নেওয়া দীপঙ্করের একার নামে ৫ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। তাঁর স্ত্রীর নামে সম্পত্তি রয়েছে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার।

২ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে গৌরচন্দ্রের নামে। তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার সম্পত্তি।

শ্যামচাঁদ নিজে ৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তির মালিক। তাঁর স্ত্রী-র নামে আরও ৬৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। গোপালের একার নামে ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। স্ত্রীর নামে সম্পত্তি রয়েছে ৯৯ লক্ষ ২৪ হাজার টাকার।

পিছিয়ে নেই কংগ্রেস প্রার্থীরাও। তাঁদের পাঁচ প্রার্থী কোটিপতির তালিকায় রয়েছেন— মোস্তাক আলম, মোত্তাকিন আলম, ঈশা খান চৌধুরি, আজিজুল হক এবং নাজেমা খাতুন।

মোস্তাকের নামে ৭৯ লক্ষ ১১ হাজার এবং তাঁর স্ত্রীর নামে ৪৯ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকার সম্পত্তি রয়েছে।

মোত্তাকিন ও তাঁর স্ত্রী-র নামে যথাক্রমে সম্পত্তি রয়েছে ২ কোটি ৩০ এবং ৪ লক্ষ ৭১ হাজার টাকার। তিনি বিদেশে ‘স্টোনচিপ’ রফতানি করেন।

আজিজুল হক বৈষ্ণবনগরের প্রার্থী। তাঁর নামে ১ কোটি ১২ লক্ষ এবং স্ত্রী-র নামে ৮ লক্ষ ১২ হাজার টাকার সম্পত্তি রয়েছে।

রতুয়ার প্রার্থী নাজেমার একার নামে রয়েছে ১০ লক্ষ ৮১ হাজার টাকার সম্পত্তি। তাঁর স্বামীর নামে রয়েছে ২ কোটি ১৭ লক্ষ টাকার সম্পত্তি।

প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর ছেলে ঈশা তুলনায় বাকিদের থেকে ‘গরিব’। তাঁর নিজের নামে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সম্পত্তি রয়েছে। স্ত্রীর নামে যদিও ৯৩ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সম্পত্তি দেখিয়েছেন তিনি।

কোটির ঘরে ঢুকতে না পারলেও, কাছাকাছি রয়েছেন হরিশচন্দ্রপুরের তৃণমূল প্রার্থী তাজমুল হোসেন, চাঁচলের তৃণমূল প্রার্থী নীহার ঘোষ, মানিকচকের নির্দল প্রার্থী অনিলচন্দ্র মণ্ডল এবং গাজলের সিপিএম প্রার্থী অরুণ বিশ্বাস। নিজের ও স্ত্রীর নামে ৬৯ লক্ষ টাকার সম্পত্তি কমিশনকে দেখিয়েছেন তাজমুল। নীহার এবং তাঁর স্ত্রীর নামে যথাক্রমে ৫৫ লক্ষ এবং ৩৪ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার সম্পত্তি রয়েছে। অনিলচন্দ্র এবং তাঁর স্ত্রী যথাক্রমে ৫৭ লক্ষ ৩০ হাজার এবং ৩৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তির মালিক। অরুণের নামে রয়েছে ৭৬ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকার সম্পত্তি। তাঁর স্ত্রী ৭ লক্ষ ২ হাজার টাকার সম্পত্তির মালিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement