রংমিলান্তি। নিজস্ব চিত্র।
রসগোল্লা একটাই। কিন্তু, তাতে তিনটি রং লেগে আছে— সবুজ, গেরুয়া আর সাদা। দোলের দিন দুবরাজপুরের বাজার এলাকার একটি মিষ্টির দোকানে তার দেখা মিলল। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী রামকৃষ্ণ দে সহাস্যে খদ্দেরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘দাদা ভোটের রং, দোলের রং মিশেছে রসগোল্লায়। এটা স্পেশ্যাল।’’ এখানেই শেষ নয়। তিনি জানালেন, এমন সন্দেশও আসবে।
দুবরাজপুরের ওই ব্যবসায়ী যখন এ কথা ভাবছেন তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীকের ছাঁচে তৈরি সন্দেশ বানিয়ে ফেলেছেন রামপুরহাট শহরের এক ব্যবসায়ী। প্রতি পিস পনেরো টাকা দামের ওই সন্দেশের চাহিদা বেশ ভাল। রামপুরহাট আদালতের কাছে ওই মিষ্টান্ন বিপণির মালিক সঞ্জয় পোদ্দার বলছেন, “এবার ভোটের বাজার এত গরম। তার প্রভাব থেকে মিষ্টিই বা বাদ যাবে কেন।” তবে সন্দেশের উপরে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের প্রতীক ফুটে উঠলেও তাতে রং দেননি। যুক্তি, রং তো মনে।
দলের প্রতীক আঁকা গেঞ্জি, টি-শার্ট টুপি, ছাতার মতো ভোটের বাজার গরম করতে হাজির মিষ্টিও। তবে শুধু বীরভূম নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও রাজনীতিতে মিষ্টি যোগ দেখা যাচ্ছে। দিন কয়েক আগে পড়শি মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের খাগড়ায় দলীয় প্রতীক আঁকা মিষ্টি বিক্রির সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার আঁচ বীরভূমেও। শুধু দুবরাজপুর বা রামপুরহাট নয়, জেলার শৌখিন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, ‘‘শেষ দফার আগে অন্যান্য এলাকাতেও তৈরি হবে এমন মিষ্টি।’’ বোলপুরের এক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, ‘খেলা হবে’-র মতো শ্লোগান দেওয়া মিষ্টি তৈরির কথা ভাবছেন। মিষ্টিতে ভোটের মিশেল নিয়ে শাসকদলের লাভপুরের প্রার্থী অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘ভোট গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব। সমাজের সব স্তরের মানুষ তাতে শামিল। তখন উৎসব পালনের অন্যতম সেরা উপাদান মিষ্টি কেন তার ছোঁয়াচ এড়িয়ে থাকবে।’’ রামপুরহাটের সিপিএম প্রার্থী সঞ্জীব বর্মণ বলছেন, ‘‘নির্বাচনের সঙ্গে যত মানুষ জুড়বেন, তত বেশি মানুষের নির্বাচন হবে। তাই মিষ্টির মধ্যে রাজনীতির ছোঁয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।’’
ময়ূরেশ্বরের বিজেপি প্রার্থী শ্যামাপদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরাও বোঝেন কোন মিষ্টি ভোটের বাজারে ভাল কাটবে। তবে আমার ব্যক্তিগত মত সব কিছুতে রাজনীতি না মেশানোই ভাল।’’ সিউড়ির দুই প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গপ্রসাদ দে, জয়দীপ সেনরাও একই মত পোষণ করছেন। তাঁদের মত, ‘‘ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনও রাজনীতির যোগ না তৈরি করাই শ্রেয়।’’