প্রতীকী ছবি।
চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরির আগে বিভিন্ন মহলের মন বুঝে নিতে চাইছেন বিশেষ পর্যবেক্ষকেরা। সেই কারণেই সম্ভবত তাঁদের জন্য আলাদা করে বৈঠক-কক্ষ তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ছাড়াও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক এবং বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। সূত্রের খবর, আগামিকাল, সোমবারই ভোটারদের সঙ্গে পর্যবেক্ষকদের বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞাপন দেবে কমিশন। দেওয়া হবে ফোন নম্বরও। দুই বিশেষ পর্যবেক্ষক সোম থেকে শুক্রবার বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করবেন। শনি, রবি এবং যে দিনগুলিতে ভোটের কাজে কলকাতার বাইরে যাবেন, সেই দিনগুলিতে এই বৈঠক বাদ থাকবে।
সূত্রের খবর, বিএসএফের অতিথিশালায় থাকার পাশাপাশি সেখানেই তাঁদের অফিস তৈরি করেছে কমিশন। তাতে বৈঠকের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে। ভোট প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার আগে কমিশন-কর্তারা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সর্বস্তরের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বার কমিশন জোর দিয়েছে সাধারণ ভোটারদের আস্থা বাড়ানোর উপর, বিশেষ করে যাঁরা অতীতের ভোট-হিংসা বা দুষ্কৃতীদের হুমকিতে ভীত হয়ে ভোটদানে বিরত থাকেন। সূত্রের খবর, শনিবার পর্যবেক্ষকেরা সিইও এবং এডিজি আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এ বার বিশেষ পর্যবেক্ষকেরাও কথা বলবেন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। দরকারে ভোটারদের আস্থা ফেরাতে তাঁরাও সক্রিয় পদক্ষেপ করবেন। সেই কারণেই বৈঠক করার মতো উপযুক্ত জায়গা তৈরি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের নির্দিষ্ট একটা ধরন রয়েছে। দলপিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি দেখা করে নিজেদের দাবিদাওয়া জানিয়ে থাকেন। কিন্তু, ভোটারেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিপুল সংখ্যায়। ফলে কী ভাবে এবং কোন ভোটারদের সঙ্গে বিশেষ পর্যবেক্ষকেরা কথা বলবেন, সেই পদ্ধতি এখনও মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয়ের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে কমিশন-কর্তাদের অনেকেই মনে করছেন, এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হলে তা হবে অভিনব।
বস্তুত, শুরু থেকেই সন্ত্রস্ত ভোটারদের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের কোথায় কোথায় হিংসার ঘটনা ঘটেছিল, সেই তথ্য তৈরির পাশাপাশি কোন এলাকার কত জন ভোটার
ভোট দিতে পারেননি তা খুঁজে বের করার উপরেও জোর দিয়েছিলেন কমিশন-কর্তারা। জেলা প্রশাসনকে আগেই বলা হয়েছে, এমন ভোটারদের চিহ্নিত করে সরাসরি তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আস্থা ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দরকারে তাঁদের কাছে প্রশাসনিক কর্তাদের ফোন নম্বর দিয়ে রাখতে হবে, যাতে ভীত ভোটারেরা এ বারের ভোট-পরিবেশ নিয়ে আশ্বস্ত থাকতে পারেন।
সাধারণ এবং পুলিশ পর্যবেক্ষকদের রাজ্যে পাঠানোর আগে এমন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শও দিয়েছে কমিশন। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, এর থেকে
বোঝা যাচ্ছে, পরিবেশ-পরিস্থিতিগত কারণে অনিচ্ছুক ভোটারদের ভোটপ্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসাই কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য।
কমিশনের এক কর্তার বক্তব্য, “দুই বিশেষ পর্যবেক্ষক গত লোকসভা ভোটেও নজরদারি চালিয়ে গিয়েছেন। ফলে ভোট-আতঙ্কের বিষয়টি তাঁদেরও অজানা নয়। কমিশন যে হেতু এ বার এই ধরনের পরিবেশ বদলাতে মরিয়া, তাই এ ব্যাপারে তাঁদেরও সক্রিয় হওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। বরং তাঁদের দিক থেকে পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট বার্তা গেলে ভীত ভোটারদের আশ্বস্ত করার কাজটা অনেক সহজ হবে।”