অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর (বাঁদিকে)। বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়া থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে সিন্টু । নিজস্ব চিত্র।
জেলায় ভোট মিটেছে সপ্তাহখানেক আগে। সেই ভোটে নন্দীগ্রাম, তমলুক, চণ্ডীপুরের মতো কেন্দ্রে যেমন হেভিওয়েট-তারকা প্রার্থীদের জন্য ছিল খবরের শিরোনামে, তেমনই বহু কেন্দ্রেই ভোট মিটেছে তুলনামূলকভাবে ‘আনাড়ম্বর’ ভাবে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা এবার তেমনই একটি কেন্দ্র। তৃণমূলের ফিরোজা বিবি, বিজেপি’র সিন্টু সেনাপতি, সংযুক্ত মোর্চার হয়ে সিপিআইয়ের চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর এই কেন্দ্রে লড়েছেন একে অন্যের বিরুদ্ধে। ভোট মিটতেই এই প্রার্থীদের অনেকটাই সময় কাটাছ পরিবারের সঙ্গে। তবে সেই সঙ্গে রয়েছে ২ মে-র ফলাফলের চাপা উত্তেজনাও।
‘শহিদ মাতা’ হিসাবে পরিচিত তৃণমূলের প্রার্থী ফিরোজা বিবির বাড়ি নন্দীগ্রামে। ভোটের আগে বিধানসভা এলাকায় বারবার প্রচার চালালেও ভোটের পর থেকে তিনি নন্দীগ্রামের যদুবাড়িচকের বাড়িতেই রয়েছেন। দুই নাতনি, স্বামী, ছেলেকে নিয়ে বেশিরভাগ সময়টাই কাটছে বাড়িতে। তবে এর মধ্যেও হাওড়া এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভোট প্রচারের জন্য ডাক এসেছিল ফিরোজা বিবির কাছে। সেই সব প্রচার এবং পরিবারকে সময় দেওয়ার ফাঁকে প্রতিদিনই বাড়িতে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নন্দীগ্রামে ভোটের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করছেন তিনি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নিজের কেন্দ্রে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ফিরোজা বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতে গিয়েছেন। ফলাফল ঘোষণার সময়টুকু বাকি এই যা। আমার নিজের কেন্দ্রেও আমি জিতব। ’’
পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভার প্রার্থীদের মধ্যে প্রবীণ সিপিআইয়ের চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর। তিনি ভোটের পরের দিন থেকেই এলাকার বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন। আগের মতোই প্রতিদিন সকালে তাঁর বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। তাঁদের সবার সঙ্গে কথাও বলছেন পাঁশকুড়ার তিনবারের ওই বিধায়ক। তবে প্রবীণ চিত্তরঞ্জনবাবু জানাচ্ছেন, এই শেষ। আর তিনি ভোটে দাঁড়াবেন না। তিনি বলছেন, ‘‘বয়স তো অনেক হল। আর কোনওদিন ভোটে লড়ব না। দল এবং দলীয় কর্মীদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছি। ভোটের পর সামাজিক কাজের গতি আবার বেড়ে গিয়েছে। খুব আনন্দেই রয়েছি। আসলে মানুষের সেবা করেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।’’ ভোটের ফলাফল নিয়েও খুব একটা চিন্তিত নন এই মানুষটা।
তিন প্রার্থীর মধ্যে তরুণ বিজেপি’র সিন্টু সেনাপতি। ভোটের পরেও রাজনীতির আঙিনাতেই দেখা যাচ্ছে তাঁকে বেশি। আপাপত প্রতিটি এলাকার কর্মীদের থেকে ভোটের হিসেব নিকেশ বুঝে নিচ্ছেন। কোন বুথে কত ভোট পড়ল, বিজেপির ভোট কত পড়তে পারে— এই সব ব্যাপারে খুঁটিনাটি হিসাব কষতে ব্যস্ত সিন্টু। পাশাপাশি, ভোটের আগে থেকে দলের যে সমস্ত কার্যকর্তা লাগাতার ভোট প্রচারে নিযুক্ত ছিলেন, ফোন করে তাঁদেরও খোঁজ খবর নিচ্ছেন সিন্টু। এর মধ্যেই পরিবারের সদস্যদেরও আগের থেকে একটু বেশি করে সময় দিচ্ছেন। পাঁশকুড়া পশ্চিমের বিজেপি প্রার্থী নিজের জয়ের ব্যাপারে প্রত্যয়ী। তিনি বলছেন, ‘‘দু-একটি জায়গা বাদে মোটের ওপর মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। এবার পাঁশকুড়া পশ্চিমে পদ্মফুল ফুটবে। ২ মে-র জন্য আপাতত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।’’