Rape Victims

bengal polls: বিজেপির গান-প্রচারে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ-কন্যা

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র ভোট-প্রচারেও যে তাঁর ঘটনা নাম, ছবিসুদ্ধ উঠে আসবে, তা ভাবেননি ৩২ বছরের তরুণী।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, ছোটবেলায়। আর এখন বার বার হচ্ছেন। কথাগুলো সেই তরুণীর মুখের কথা, যাঁর নাম, ছবি এবং নির্যাতনের ঘটনা এই বঙ্গভোটের আসরেও প্রচারের অস্ত্র। বিজেপি-শিবিরের একটি প্রচার-গীতির ভিডিয়োয় বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের সেই মেয়ের জীবনের ঘটনাই উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

ধর্ষণ-রাজনীতি যাঁর জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে, সেই বাংলাদেশ কন্যা শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ফোনে বললেন, “এখন আমি প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার। এক বার ধর্ষিতা হয়েছি বাস্তবে। এখন বার বার রাজনীতির স্বার্থে ধর্ষিতা হচ্ছি। কোনও একটা বিতর্ক হলেই এ ভাবে ধর্ষিতা হই।”

২০০১এর ঘটনার পরে জীবন গিয়েছে চলে কুড়ি কুড়ি বছরের পার। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র ভোট-প্রচারেও যে তাঁর ঘটনা নাম, ছবিসুদ্ধ উঠে আসবে, তা ভাবেননি ৩২ বছরের তরুণী। বলছেন, “বাইরের রাষ্ট্রও আমার বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছে! এই গুলা কখনওই ঠিক না!” তাঁর স্বরে ম্লান হাসির ছোঁয়াচ, “বাংলাদেশেও অবশ্য কোনও বিষয়ে আমার নাম বা ছবি দিতে কেউই আমার অনুমতির কথা ভাবে না। দুই বাংলার এটায় ভালই মিল দেখছি!”

Advertisement

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বা রুদ্রনীল ঘোষের মতো বিজেপি-র তারকা প্রার্থীদের নিয়ে গান-ভিডিয়োয বার বার বিরোধীদের বলা হয়েছে, সেই ছোট্ট মেয়ের খবর কেউ রাখে না। তরুণীর প্রশ্ন, “যাঁরা এ গান তৈরি করেছেন, তাঁরা কি আমার খবর রাখেন?” বিএনপি-জামাত আমলে গণধর্ষণের শিকার মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়েছিল একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। পরে বিচারে ১৫ জন অপরাধীর ১২ থেকে ১৬ বছর সাজা হয়। বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকেও নিয়মিত সাহায্য আসে। ওই ঘটনার পরে গ্রাম থেকে চলে এলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যত্র জমি, বাড়ি দিয়ে পরিবারটির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ওই তরুণীর কথায়, “শাহরিয়র কবীর, অধ্যাপক অজয় রায়রা না-থাকলে কোথায় ভেসে যেতাম। কবীরসাহেবকে আমি আব্বু বলি!” প্রবীণ সাংবাদিক তথা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রধান সংগঠক কবীর সাহেবেরও ক্ষোভ, “ধর্ষণ কি ভারতে হয় না! ভারতের রাজনীতিতে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়টি টেনে
আনা ঠিক হয়নি। মেয়েটি ও তার পরিবার হার মানেনি। ও এখন প্রতিবাদেরও মুখ। প্রধানমন্ত্রী হাসিনাও ওঁকে স্নেহ করেন।”

কিছু দিন বেসরকারি সংস্থায় চাকরির পরে ২০১৮য় তৎকালীন মন্ত্রী তারানা হালিমের ব্যক্তিগত সহকারীও ছিলেন সেই তরুণী। সংরক্ষিত আসনে সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবেও তাঁর নাম উঠে আসে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কম বয়সের জন্যই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের অন্য ধর্ষিতা মেয়েদের হয়েও লড়াই তিনি করতে চান। তবে ওই তরুণী বলেন, “এখনও কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেই আমার নাম ব্যবহার করে রাজনীতি হয়। তা ছাড়া মন্ত্রীর পিএ হিসেবে চাকরির পরেও আমার নাম-ছবি নিয়ে খবরে রাস্তায় অপদস্থ হয়েছি। এটা চাইনি।”

গত বছর কোভিড থেকে সেরে উঠে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায এখনও দুর্বল তিনি। মা-ও অসুস্থ। বাঁচার তাগিদেই নতুন কাজ খুঁজছেন। তীক্ষ্ণ স্বরে বলেন, “লোকে বলে আমি দেখতে সুন্দর! কিন্তু অতীতটা খারাপ! অথচ, ভোটের গানে আমার নাম থাকলে হাজারো লোক দেখতে ঝাঁপাবে! এটা তাঁদেরই লজ্জা!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement