তিন প্রার্থী: আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ( তৃণমূল ), শুভাশিস চৌধুরী ( বিজেপি ) এবং সঞ্জীব বর্মণ ( সিপিএম )।
ঘটনাস্থল রামপুরহাট পুরসভার অনুষ্ঠান ভবন। তৃণমূলের দলীয় কর্মী সভা চলছে। একজন কর্মী গত লোকসভা নির্বাচনের একটি ওয়ার্ডের ফলাফল তুলে ধরলেন। দেখা যাচ্ছে তৃণমূল ওই ওয়ার্ডে এক হাজারের বেশি ভোটে বিজেপির কাছে পরাজিত। অথচ ওই ওয়ার্ড দশ বছর তৃণমূলের দখলে। কেবল ওই ওয়ার্ড নয়, লোকসভা নির্বাচনে রামপুরহাট পুর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল বিজেপির কাছে পিছিয়ে। তাই গ্রাম-শহর মিলিয়ে বিধানসভা এলাকা হলেও শহরাঞ্চলেই যে এ বার জয়ের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে, তা মানছেন সকলেই।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্রে ১৩ হাজার ১২৫ ভোটে তৃণমূল বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল। তার মধ্যে রামপুরহাট পুরসভা এলাকাতেই ৯ হাজারের বেশি ভোটে বিজেপি তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিল। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে রামপুরহাট পুরসভাতে কে কত ভোটে এগিয়ে থাকবে তার উপরই নির্ভর করছে কে জিতবেন। এক কথায়, পুর এলাকার ভোটের ফলই রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্রের এবার নির্ণায়ক হতে চলেছে। সেই কারণে রামপুরহাট পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের ভোট নিয়ে চলছে চুলচেরা হিসেব। কার দিকে কত ভোটার তা নিয়ে চলছে হিসেব। ভোট কাটাকাটির অঙ্কে কে কত এগিয়ে তাই নিয়েও চলছে কাটাকুটির খেলা।
দিন কয়েক আগে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তাঁর কাছে থাকা প্রতিটি ওয়ার্ডের ভালমন্দ রিপোর্ট তুলে ধরে রামপুরহাটের দলীয় কার্যালয়ে ১৮টি ওয়ার্ডের দলের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। বেশ কিছু ওয়ার্ডের খারাপ অবস্থা নিয়েও দলের সভাপতির কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছিল ওয়ার্ড সভাপতিদের। পরের দিনই রামপুরহাট শহরের দলীয় কার্যালয় থেকে শহর তৃণমূলের উদ্যোগে প্রার্থীকে নিয়ে মিছিল করে শহর পরিক্রমা করতে দেখা যায়।
চার বারের বিধায়ক এবং দু’বারের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এ বারও প্রার্থী। তিনি মনে করছেন, এলাকার মানুষ ভালবেসে তাঁকে চার বার জয়ী করেছেন, এ বারও করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ রামপুরহাটে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বস্তিবাসীদের জন্য আবাসন, শহরের বুকে উন্নত পাকা সড়ক, শহরের সৌন্দর্যায়ন এই সমস্ত কিছু চোখে দেখতে পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাও মানুষ পাচ্ছেন। তাই মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই রায় দেবেন।’’
বিজেপিও লোকসভার ফল ধরে রাখতে মরিয়া। শাসক শিবিরের উন্নয়নের দাবিকে কটাক্ষ করে বিজেপি প্রার্থী শুভাশিস চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শহরের মানুষ মুখে কাপড় বেঁধে লাঠি, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উন্নয়ন বাহিনীর দাপাদাপি দেখেছেন। রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক ভবনে বোমাবাজিও দেখেছেন।’’ তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগেও সরব তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘পুরসভা ও তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের উন্নয়নের নামে টাকা নয়ছয়, পুরসভায় বেআইনি ভাবে কর্মী নিয়োগ, স্বজনপোষণ, নারায়ণপুর থেকে ভাড়কাটা বালি, পাথর থেকে তোলাবাজি এ সমস্ত কিছুই মানুষ দেখেছেন। পঞ্চায়েত স্তরের ছোট বড় তৃণমূলের নেতা থেকে শুরু করে শহরের তৃণমূল নেতাদের ঔদ্ধত্য এবং তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতীদের দাপটে শহরের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সব কিছুর জবাব মানুষ দেবেন।’’
ভোটে আরেক পক্ষ, জোটের ফল অবশ্য গত বিধানসভা নির্বাচনের থেকে খারাপই হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে জোট প্রার্থী কংগ্রেসের সৈয়দ সিরাজ জিম্মি দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য কংগ্রেস এবং সিপিএম প্রার্থীর মিলিত ভোট ২০ হাজার পেরোয়নি। তবে লোকসভা ভোটের প্রাপ্তির অঙ্ক এ বারে মিলবে না বলে দাবি করেন সংযুক্ত মোর্চার তরফে সিপিএম প্রার্থী, দলের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি দু’টি দলের নাটকে মানুষ বীতশ্রদ্ধ। কর্মসংস্থান, রুটি রোজগারের দাবিতে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। জাতপাত, ধর্মের লড়াই ভুলে মানুষ তাদের বাঁচার তাগিদে সংযুক্ত মোর্চাকেই চাইছেন।’’