প্রতীকী ছবি।
হাওড়া শহরে বালি, উত্তর হাওড়া, মধ্য হাওড়া, দক্ষিণ হাওড়া, শিবপুর, সাঁকরাইল ও ডোমজুড়— এই সাতটি আসনের মধ্যে তিন বিধায়ক দল ছেড়েছেন। বাকি তিনটিতে বিধায়কের বয়সজনিত কারণে আসনগুলি ফাঁকা হচ্ছিল। তাই শহরের ছ’টি আসনে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী বদল প্রত্যাশিত ছিলই।
সেই মতো অনেক ক্ষেত্রে কৌশলে, কোথাও এলাকার পরিচিত ব্যক্তিত্ব, কোথাও আবার সংগঠনে জোর দিতে প্রার্থী পদে আনা হয়েছে দলীয় কর্মীকে। গত জানুয়ারিতে দল ছেড়েছেন বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া ও উত্তর হাওড়ার বিধায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল। দলবদলের সেই তালিকায় ডোমজুড়ের বিধায়ক তথা মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও একটা ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠেছিল। পুরো বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছিল টানাপড়েন। যার ফলে বিধানসভা নির্বাচনে হাওড়া শহরে নানা ভাবে চাপের জায়গা তৈরি হচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার শাসক দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে দেখা গেল দু’বারের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ও জেলার চেয়ারম্যান অরূপ রায় নিজের মধ্য হাওড়ার আসনেই টিকিট পেয়েছেন। বয়সজনিত কারণে এ বার আর টিকিট পাননি শিবপুরের জটু লাহিড়ী, দক্ষিণ হাওড়ার ব্রজমোহন মজুমদার এবং সাঁকরাইলের শীতল সর্দার। শহরের যে ছ’টি আসনে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে দু’জন মহিলা। এ দিন প্রার্থী ঘোষণার আগে পর্যন্ত শহরের অনেক জায়গাতেই দলীয় কর্মীরা দাবি তুলেছিলেন ‘ভূমিপুত্রকে চাই’ কিংবা ‘স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই প্রার্থী করতে হবে।’ এ দিন অরূপ বলেন, ‘‘স্থানীয় প্রার্থীই দেওয়া হয়েছে। এক-আধটা জায়গায় ব্যতিক্রম হতে পারে। বাংলার উন্নয়নে আরও গতি আনতে সমস্ত কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’’
দক্ষিণ হাওড়ায় প্রার্থী হয়েছেন নন্দিতা চৌধুরী। পোড় খাওয়া রাজনীতিক না হলেও, বাবা অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়া সদরের প্রাক্তন সাংসদ হওয়ায় রাজনীতির ঘরানার মেয়ে নন্দিতা। পাশাপাশি তাঁর নিজস্ব সামাজিক একটা পরিচিতিও রয়েছে। প্রয়াত অম্বিকাবাবুর নামে হাওড়ায় চলা ক্যানসার ফাউন্ডেশনের কর্ণধার নন্দিতা। রাজনীতিতে নবাগত হলেও খেলার মাঠের লোকজন ও ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে সুপরিচিত ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি। মধ্য হাওড়াতেই জন্ম এবং সেখানেই বেড়ে ওঠা ওই খেলোয়াড়কে এ বার শিবপুরের প্রার্থী করা হয়েছে। যদিও এ দিন মনোজের নাম ঘোষণা হতেই এলাকায় প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরাকে প্রার্থীর দাবিতে পোস্টার পড়েছে।
অন্য দিকে বালিতে যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে, তিনি পোড় খাওয়া রাজনীতিক না হলেও এলাকায় পরিচিত চিকিৎসক হিসেবে। ২০১১, ২০১৬-র পরে এই প্রথম বালিতে প্রার্থী করা হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা রানা চট্টোপাধ্যায়কে। শেষ কয়েক বছরে রাজনৈতিক থেকে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে অবশ্য তাঁকে দেখা গিয়েছে। এ সবেরই পাশাপাশি ডোমজুড়, সাঁকরাইল ও উত্তর হাওড়ায় আনা হয়েছে সংগঠনের সঙ্গে যুক্তদের। লক্ষ্মীরতন দল ছাড়ার পরে সেই আসন শক্ত করতে উত্তর হাওড়ার সভাপতি তথা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ গৌতম চৌধুরীকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
তেমনই আবার সাঁকরাইলে প্রার্থী হয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য প্রিয়া পাল। তিনিও ওই বিধানসভা এলাকারই বাসিন্দা। পাশাপাশি ডোমজুড়ে প্রার্থী হয়েছেন হাওড়া জেলা পরিষদের মেন্টর কল্যাণ ঘোষ। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে যাঁর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাঁকে হারানোর অভিযোগ উঠেছিল রাজীবের বিরুদ্ধে।