সিপিএমের ভোট ম্যানেজার দেবব্রত ঘোষ, বিজেপির ভোট ম্যানেজার স্বপন পাল, তৃণমূলের ভোট ম্যানেজার ইন্দ্রজিৎ ঘোষ।
রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে ‘ভদ্রতা’ বা ‘সৌজন্য’-র অবলুপ্তি ঘটছে বলে অনেকে আক্ষেপ করেন। কিন্তু হুগলিতে এ বার ভোটের ময়দানে এমন তিন ভোট-ম্যানেজার হাজির রয়েছেন, যাঁদের দেখলে সে কথা বলা যাবে না। তাঁরা যেন অতিমাত্রায় ভদ্র! আর সেই কারণেই তাঁদের দলও যেন তাঁদের হাতে ‘ম্যানেজারশিপ’ ছেড়ে দিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত।
উত্তরপাড়ায় এ বার তারকা-প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। তিনি কাঞ্চন মল্লিক। ভোটের রাজনীতিতে নতুন। হলে কী হবে, তাঁর প্রধান ‘ভোট সেনাপতি’ তথা নির্বাচনী এজেন্ট ইন্দ্রজিৎ ঘোষ রাজনীতিতে যথেষ্ট পোড়খাওয়া। তিনি ২০০৩ সালে উত্তরপাড়ার বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নিজে টানা ২০ বছর ধরে উত্তরপাড়া পুরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। টানা দেড় দশক পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। বিধানসভার প্রতি এলাকা হাতের তালুর মতো চেনেন ইন্দ্রজিৎবাবু। এলাকাবাসীর সরাসরি নাম-ধাম জানেন। এহেন মানুষকে দল যে প্রার্থীর ‘নির্বাচনী এজেন্ট’ হিসেবে পছন্দ করবে, তা আর নতুন কী!
ক্লাব, সংগঠন, পুজো— এ সব নিয়ে সারা বছরই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ইন্দ্রজিৎবাবুর। এহেন ভদ্র, নির্বিবাদী মানুষটি শুধু উত্তরপাড়ায় নির্বাচনের কর্মকাণ্ড হাসিমুখে সামাল দিচ্ছেন তাই নয়, মাঝেমধ্যে পাড়ি দিচ্ছেন পুড়শুড়াতেও। সেখানে প্রার্থী হয়েছেন দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব।
সমস্যা হচ্ছে না কাজে?
ইন্দ্রজিৎবাবুর জবাব, ‘‘সমস্যা কিসের? দিলীপ আমাকে আর সুব্রতকে (উত্তরপাড়ার বিদায়ী কাউন্সিলর সুব্রত মুখোপাধ্যায়) ডাকছিল পুড়শুড়ার প্রচারের জন্য। ওঁর ডাকে সাড়া না দিয়ে পারি কী করে?’’
জেলা সিপিএমের প্রধান ভোট-কাণ্ডারী দেবব্রত ঘোষ। তিনি দলের জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। দেবব্রতবাবুর এখন নাওয়া-খাওয়ারও সময় নেই। জেলায় ১৮টি বিধানসভা আসনে মূলত তাঁর নেতৃত্বেই দলের ভোট প্রক্রিয়া মসৃণ ভাবে এগিয়ে চলেছে। চণ্ডীতলা আসনে এ বার লড়ছেন দলের হাই-প্রোফাইল নেতা পলিটবুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম। সিঙ্গুরের দিকেও মানুষের চোখ রয়েছে। উঠেপড়ে লেগেছেন দেবব্রতবাবু।
এ বার নির্বাচনের প্রস্তুতি সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব কার্যত ছ’মাস আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছে। মূলত আরামবাগ মহকুমা এবং সিঙ্গুরে দেবব্রতবাবুর নেতৃত্বে টানা কর্মসূচি চলেছে। সদাহাস্য ঠান্ডা মাথার ভোট-ম্যানেজার দেবব্রতবাবু অবশ্য বলেন,‘‘অন্য দলের মতো আমরা একক ভাবে কাজ করি না। সমবেত, দলবদ্ধ ভাবে কাজ ভাগ করে নিয়ে করি। তাই চাপও ততটা লাগে না।’’
একই সারিতে আসছে আরও এক জনের নাম। তিনি বিজেপির স্বপন পাল। চুঁচুড়ার বাসিন্দা স্বপনবাবু তিন দশক ধরে বিজেপি করছেন। শুধু লোকসভা ভোটে হুগলির দলীয় প্রার্থীর হয়ে তিনি তিনবার নির্বাচনী-এজেন্ট হয়েছেন। একেবারে দলের বুথস্তর পর্যন্ত কর্মীদের সঙ্গে স্বপনবাবুর নিত্য যোগযোগ। এ বারে চুঁচুড়া কেন্দ্রে তিনি দলীয় প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে নির্বাচনী কাজের মূল দায়িত্বে রয়েছেন।
স্বপনবাবুর কথায়, ‘‘ভোটে বুথ সভাপতির গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা তাই বুথস্তর থেকেই প্রচারে জোর দিচ্ছি। ভোট পরিচালনায় রান্নাঘরের কাজ সেই ছোটবেলা থেকেই করে আসছি।’’
ভোট আসে-যায়। নেপথ্যে থেকে প্রতি দলের এইসব ভোট ম্যানেজারেরা নীরবে দায়িত্ব পালন করে চলেন একেবারে ‘গৃহকর্তা’র ভূমিকায়।