কালীচরণ এক্কা।
ইচ্ছা আর অদম্য জেদ থাকলে যে উপায় হয় তা প্রমাণ করলেন কালীচরণ এক্কা। দুর্ঘটনায় এক পা খুইয়েছেন। সে সব কিছুকে পাশে সরিয়ে এক পায়ে এগিয়ে যাওয়ার ‘লক্ষ্য’ নিয়েছেন। তিনি যে সহজে হার মানবার পাত্র নন সে প্রমাণ আরও এক বার দিলেন কালীচরণ।
এসইউসিআই-এর টিকিটে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এ বারের নির্বাচনে লড়ছেন কালীচরণ। স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে টানাটানির সংসার। স্বামী স্ত্রী দু’জনেই কৃষিকাজ করে সংসার চালান। দুই মেয়ের মধ্যে এক জন দশম, অন্য জন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছেলে পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। নিজে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলেও সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে কোনও রকম আপসে যেতে নারাজ। তাই অভাব অনটনের মধ্য দিয়েও সন্তানদের পড়াশোনায় কোনও খামতি রাখতে কসুর করেন না।
১৯৮১ সালে ফুটবল খেলার সময় তাঁর ডান পায়ে চোট লেগেছিল। কালীচরণের দাবি, সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় পায়ে পচন ধরে যায়। শেষমেশ পা-টা হাঁটুর উপর থেকে কেটে বাদ দিতে হয়। হুইলচেয়ারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। অভিযোগ, হুইলচেয়ার পাননি। কিন্তু তাতে কালীচরণ কিন্তু দমে যাননি। এক পায়েই ভর করে লাঠির সাহায্যে সংসার ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পদবী ‘এক্কা’র সঙ্গে তাঁর বাস্তব জীবন যেন কোথাও মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।
কালীচরণ জানিয়েছেন, অনেক অল্প বয়স থেকেই এসইউসি-এর সঙ্গে জড়িত। সবাই যখন দলবদলের জোয়ারে গা ভাসাচ্ছেন, কালীচরণ কিন্তু তাঁর ভালবাসার দলকেই আঁকড়ে রয়েছেন। এবং সেই দলের প্রতীকেই তপন বিধানসভা থেকে এ বারের নির্বাচনে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবাই যখন লাখ, কোটিতে হলফনামা জমা দিচ্ছেন, গাড়িতে চড়ে প্রচারে যাচ্ছেন, মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন, সেখানে এক পা আর এক লাঠিতেই ভর করে ভোটের প্রচার থেকে মনোনয়ন সবই করেছেন কালীচরণ।
যেখানে সব হেভিওয়েট প্রার্থী, তারকা প্রার্থীর ঢল, সেখানে কালীচরণ কিন্তু ‘একাই একশো’। এক পায়ে লাঠি ভর করে দোরে দোরে পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি। মিছিলে হেঁটেছেন। আশাবাদী ভোটে জিতবেন। সবাই যখন দলবদলের হাওয়ায় গা ভাসাচ্ছেন, সেখানে তিনি এসইউসি প্রার্থী কেন? এ প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, ‘‘একটাই কারণ, দলের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমাজের কাছে পৌঁছে যাওয়া।’’ তাঁর এলাকায় সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী বলেও দাবি করেছেন কালীচরণ।
গত ৩১ মার্চ বালুরঘাট বিশ্বাসপাড়া এসইউসি পার্টি অফিস থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি রাস্তা লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে মিছিল করে বালুরঘাট প্রশাসনিক ভবনে মনোনয়ন জমা দেন কালীচরণ। ভোটে জিতলে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করতে চান বলে দাবি করেছেন তিনি। ভোটে জেতার বিষয়ে কালীচরণ যথেষ্ট আশাবাদী।