উঁচুতে টাঙানো এমন ব্যানার এবং পোস্টার খুলতে সমস্যায় হাওড়া পুরসভা। শুক্রবার, সালকিয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মাথার উপরে অনেক উঁচুতে সরকারি সম্পত্তি দখল করে ঝুলতে থাকা রাজনৈতিক দল কিংবা নেতা-নেত্রীদের ছবি, ব্যানার খুলতে পারছে না হাওড়া পুরসভা। কারণ উঁচু মই নেই। তাই বিধি রক্ষা করা যাচ্ছে না।
লোকসভা নির্বাচনের আগেও এই সমস্যা ছিল। বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও একই সমস্যার সম্মুখীন হাওড়া পুরসভা। লোকসভার সময়ে উঁচুতে ঝোলা ব্যানার, ফেস্টুন খুলতে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি) থেকে উঁচু ক্রেন আনতে হয়েছিল। হাওড়া পুরসভার এক আধিকারিক জানান, এ বারেও তাঁরা ওই ব্যবস্থা করার কথা ভাবছেন।
এমনিতেই প্রতি বার নির্বাচনের আগেই আদর্শ আচরণবিধি না মানার প্রবণতা দেখা যায় রাজনৈতিক
দলগুলির মধ্যে। পুরসভা কিংবা নির্বাচন কমিশনের লোকজন সরকারি সম্পত্তি থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় নেতানেত্রীদের ছবি যত বার খুলে দেন, তত বারই তা আগের জায়গায় গিয়ে সাঁটিয়ে কিংবা ঝুলিয়ে দেন রাজনৈতিক কর্মীরা। এ বারেও হাওড়ায় তেমনটা শুরু হয়েছে। অভিযোগ, এক দিকে যখন সকালে পুরসভার লোকজন বেরিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন খুলে দিয়ে আসছেন, বিকেলেই সেই ব্যানার-ফেস্টুন ফিরে আসছে একই জায়গায়। ফলে নির্বাচনী বিধি বলবৎ করতে গিয়ে চোর-পুলিশ খেলতে হচ্ছে পুরকর্মীদের। আবার পুরসভার কাছে লম্বা মই না থাকায় উঁচু জায়গায় লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন খুলতে গিয়েও সহজে নাগাল পাচ্ছেন না পুরকর্মীরা। ফলে নির্বাচনী বিধি জারি হয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরেও রাজনৈতিক দলগুলির সব ব্যানার-পোস্টার খোলা যায়নি।
আদর্শ আচরণবিধি চালু হওয়ার পরে সরকারি সম্পত্তি (যেমন সরকারি অফিস, রাস্তার আলোকস্তম্ভ, পার্ক, স্টেডিয়াম) থেকে রাজনৈতিক দলগুলির নেতা-নেত্রীদের ছবি, পোস্টার ও ব্যানার খুলে ফেলতে হবে। সেই নিয়ম মেনে হাওড়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী আধিকারিকেরা সমস্ত সরকারি অফিস ও হাওড়া পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁদের দায়িত্বে থাকা সমস্ত সরকারি সম্পত্তি থেকে ব্যানার-পোস্টার খুলে ফেলতে। মালিকের অনুমতি না থাকলে আবাসিক বাড়িতে লাগানো পোস্টার বা ব্যানারও খুলে দেবে প্রশাসনের বিশেষ নির্বাচনী আচরণবিধি নজরদারি দল বা মডেল কোড অব কন্ডাক্ট (এমসিসি) টিম।
কিন্তু এই নির্দেশের পরেও হাওড়ার বহু রাস্তা, সরকারি সম্পত্তি বা আলোকস্তম্ভে ব্যানার, পোস্টার বা হোর্ডিং ঝুলছে। হাওড়া ঢেকে রয়েছে নেতা-নেত্রীদের ছবি ও রাজনৈতিক দলের ব্যানারে।
নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা মুখ্য আধিকারিক তথা হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘সরকারি সম্পত্তি থেকে ব্যানার-পোস্টার খোলার ব্যাপারে সমস্ত সরকারি সংস্থার আধিকারিকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা না খুলতে পারলে এমসিসি টিম ব্যবস্থা নেবে।’’
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরেই হাওড়া পুরসভার সাতটি বরোর আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে কাজ করতে।
পুরসভার এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘ওঁরা কাজ করবেন কী করে? দলবল গাড়ি নিয়ে গিয়ে সকালে ব্যানার-ফেস্টুন খুলে আসছেন। বিকেলে সেগুলি ফের লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হাওড়ার বহু জায়গায় অনেক উঁচুতে ফেস্টুন, ব্যানার, ফ্লেক্স লাগানো রয়েছে। যেগুলি খোলার মতো এত উঁচু মই আমাদের নেই। তাই সব খোলা যাচ্ছে না।’’