প্রতীকী ছবি।
মোট আট পর্বের মধ্যে প্রথম দফার ভোট শুরু হতে দু’সপ্তাহ বাকি। এর মধ্যেই রাজ্য সরকার বার্তা পেয়েছে, সব পর্ব মিলিয়ে এ বার প্রায় এক হাজার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে পশ্চিমবঙ্গে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিকে যে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, বিপুল সংখ্যক আধাসেনা মোতায়েনের উদ্যোগ-আয়োজন তারই প্রমাণ।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, হাজার কোম্পানি বাহিনীর হিসেব ধরেই পুলিশ-প্রশাসনকে অর্থ বরাদ্দ করতে শুরু করেছে রাজ্যের অর্থ দফতর। নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঘাত লাগার ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য-রাজনীতি এখন তোলপাড়। এই অবস্থায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশন বঙ্গের ভোটে যথাসম্ভহ বেশি সংখ্যায় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
রাজ্য প্রশাসনের অন্দরের খবর, এখনও পর্যন্ত কর্তাদের কাছে যে-বার্তা এসেছে, তাতে রাজ্যের ভোটের আট দফার জন্য ৯৫০-১০০০ কোম্পানি বাহিনী ব্যবহার করবে কমিশন। সেই বার্তা পেয়েই রাজ্য পুলিশকে প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৬১ কোটি টাকা দিয়েছে অর্থ দফতর। আরও কমবেশি ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়টি অর্থ দফতরের ছাড়পত্রের অপেক্ষায়। যেমন যেমন বাহিনী আসবে রাজ্য, সেই অনুযায়ী অর্থ হাতে পাবে রাজ্য পুলিশ। বাহিনী এলে তার খরচ প্রাথমিক ভাবে রাজ্য সরকারকেই চালাতে হয়। পরে রাজ্য দাবি করলে খরচের ৫০ শতাংশ ফেরত দেয় কেন্দ্র।
সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, গত লোকসভা ভোটে কলকাতায় ১৫৫ কোম্পানি বাহিনী এসেছিল। তার জন্য খরচ হয়েছিল প্রায় ৩২ কোটি টাকা। এ বার কলকাতার ভোটে অন্তত ১৯২ কোম্পানি বাহিনী ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখছেন পুলিশকর্তারা। মহানগরের ভোটও দফায় দফায় হবে, তাই কোম্পানির সংখ্যা কিছুটা কমও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই হিসেবে কলকাতার বাহিনীর জন্য প্রায় ৫৮ কোটি টাকার খরচ ধরা হয়েছে।
প্রথম ধাপে রাজ্যে ১২৫ কোম্পানি আধাসেনা পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পরের ধাপে আরও ১৭০ কোম্পানি বাহিনী পাঠানো হয়েছে। তৃতীয় দফায় আসছে ২০০ কোম্পানি। ফলে প্রথম দফার আগে এ-পর্যন্ত ছিল ৪৯৫ কোম্পানি বাহিনী। সম্প্রতি আরও ২১০ কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানা গিয়েছে। তারা এলে প্রথম দফার ভোটের আগেই তৈরি থাকবে ৭০৫ কোম্পানি।
২৭ মার্চ প্রথম দফার নির্বাচনে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং দুই মেদিনীপুরের ৩০টি আসনের ১০ হাজার ২৮৮টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, কোনও কোনও কোম্পানিতে থাকেন ৮২ জন জওয়ান, কোনও বাহিনীতে সংখ্যাটা ১০০ বা ১১০। ফলে ৭০৫ কোম্পানি বাহিনীর এক-একটিতে গড়ে যদি ৭০ জনকেও ব্যবহার করা হয়, ওই দফার ভোটে অন্তত ৪৯ হাজার জওয়ানকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে মনে করা হচ্ছে, ভোট-সুরক্ষা নিশ্চিত করে অবশিষ্ট কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অন্যান্য এলাকার ভোটারদের আস্থা বৃদ্ধির কাজে লাগাতে পারে কমিশন। বাংলার ভোটে দুই বিশেষ পর্যবেক্ষক ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভাব হবে না।
প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রতিটি কোম্পানিতে আট সেকশন বা ৬৪ জন জওয়ানকে ব্যবহার করা হবে। কুইক রেসপন্স টিমে প্রতি কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীতে থাকবেন আট জন জওয়ান। মহকুমা ও জেলা স্তরে স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হবে। প্রতিটি স্ট্রাইকিং ফোর্সে তিন সেকশন (২৪ জন করে জওয়ান) কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে হিংসা ঠেকাতে যে-সব অঞ্চলে ভোট শেষ, সেখানেও পাঁচ কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রীর আঘাত-কাণ্ড নিয়ে রাজ্য-রাজনীতির উত্তাপ ভোট-আবহে ছড়িয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের অনুমান। এই অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনীকে পূর্ণ শক্তিতে কাজে লাগানো হলে সাধারণ ভোটারদের মন থেকে ‘ভয়’ দূর করা সম্ভব বলে মনে করছে কমিশন। সেই দিক থেকে বাহিনী বৃদ্ধির সম্ভাবনার মধ্যে বাড়তি তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন প্রশাসনের অনেকেই।