মাস্ক পরার জন্য এক গ্রামবাসীকে বোঝাচ্ছেন উদয়নারায়ণপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অলোক কোলে। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির দরজা খুলতেই সামনে প্রার্থী। হাতজোড় করে ভোট চাইছেন। এ দৃশ্য আর নতুন কী! উদয়নারায়ণপুরে সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে কংগ্রেস প্রার্থী অলোক কোলে অবশ্য ভোট-প্রার্থনার সঙ্গে আরও একটি আর্জি জুড়ছেন, ‘‘একটা অনুরোধ করব? করোনার প্রকোপ এখনও কমেনি। উল্টে ফের সংক্রমণ বাড়ছে। দয়া করে মাস্ক পরবেন। আমাকে ভোট দেবেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু সবাই মাস্কটা অন্তত পরবেন।’’
পাঁচারুল পঞ্চায়েত এলাকায় এই প্রচার-চিত্র সোমবারের। কাড়া-নাকাড়া সহযোগে শোভাযাত্রা করে এ দিন প্রচারে বেরিয়েছিলেন অলোকবাবু। সঙ্গে শ’দুয়েক বাম-কংগ্রসের কর্মী-সমর্থক। বেশ কিছু টোটোও। শোভাযাত্রার একেবারে সামনের টোটোতে মাইক লাগানো। থেকে থেকে মাইক থেকে ভেসে আসছে অলোকবাবুকে ভোট দেওয়ার আবেদন। সঙ্গে ঘোষণা, ‘আপনারা জানেন, দেশ থেকে করোনা এখনও নির্মূল হয়নি। এই অবস্থায় সামান্যতম শিথিলতাও সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। আপনারা বাইরে বেরনোর সময় দয়া করে মাস্ক পরবেন।’’
প্রার্থী রাস্তা দিয়ে দু’পাশের বাসিন্দাদের নমস্কার করতে করতে চলেছেন। বাজনার শব্দ শুনে গ্রামবাসীরা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলেই প্রার্থী সরাসরি চলে যাচ্ছেন তাঁদের কাছে। নিজেও মাস্ক পরেছেন। শোভাযাত্রায় শামিল অধিকাংশকেই মাস্ক পরিয়েছেন। অলোকবাবু বললেন, ‘‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও। নিজে মাস্ক না পরলে অপরকে এই পরামর্শ দেওয়ার নৈতিক অধিকার থাকে কী? প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর থেকে চারটে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচার করেছি। সর্বত্রই মাস্ক পরার আবেদন জানাচ্ছি প্রথম থেকে। নির্বাচন আসবে যাবে শরীরটা থাকবে।’’
রবিবার, ছুটির দিনে প্রচারে ঝড় উঠেছিল। কিন্তু বেশিরভাগ প্রার্থী এবং তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজনকে দেখা গিয়েছে মাস্কবিহীন অবস্থায়। করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করায় এ ভাবে প্রচারে অশনিসঙ্কেত দেখছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। সেই জায়গায় উদয়নারায়ণপুরে এই প্রচার স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন অনেকে।
রামশরণচকের গৃহবধূ মীরা অধিকারী এ দিন অলোকবাবুর আবেদন শুনেই মুখে আঁচল চাপা দেন। এই গ্রামেরই গোপীনাথ মাইতি প্রার্থীকে বলেন, ‘‘ঠিক বলেছেন। আমি অবশ্য বাইরে বেরোলে মাস্ক পরি।’’ সুবলচকের প্রতিবন্ধী যুবক সন্তু মহিষ হুইল চেয়ারে করে আসছিলেন। তাঁকে প্রার্থী মাস্ক পরার কথা বলতেই গামছায় মুখ ঢাকলেন।
অলোকবাবুর সঙ্গে থাকা কংগ্রেস নেতা প্রবীর পোড়েল বলেন, ‘‘করোনা আবহে নির্বাচন হচ্ছে। তাই মাস্ক পরার আবেদন জানিয়ে প্রার্থী কোনও ভুল করেননি। আমরাও মাস্ক পরেছি।’’
এই কেন্দ্রে আরও দুই প্রার্থী হলেন তৃণমূলের সমীর পাঁজা এবং বিজেপির সুমিতরঞ্জন কাঁড়ার। প্রথম দিকে সে ভাবে মাস্কের বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও সম্প্রতি তিনিও এ নিয়ে প্রচার করছেন বলে সমীরবাবুর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো মাস্ক বিলি শুরু করেছি। এটা খুবই জরুরি।’’ মাস্ক পরার আবেদন তিনিও জানাচ্ছেন বলে দাবি করেন সুমিতবাবু।