রামনগর বাজার এলাকায় রাস্তা অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
সেই ট্র্যাডিশনে ছেদ পড়ল না এ বারও।
যথারীতি ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার মাত্রা বাড়ছে আরামবাগ মহকুমা জুড়ে। তৃণমূল এবং বিজেপি নেতাকর্মীদের মধ্যে মারপিট লেগেই রয়েছে। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে স্থানীয় অর্থনীতিতেও। বুধবার রাতে খানাকুলের থানা মোড় বাজারে বিজেপি সমর্থক ব্যবসায়ীদের মারধর এবং দু’টি দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কাছেই রামনগর বাজারেও তারা হামলা করে বলে অভিযোগ। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করে।
ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা থেকে আরামবাগ-গড়েরঘাট রাস্তার সংশ্লিষ্ট দু’টি মোড়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরোধ করে বিজেপি। বাজারগুলিতে সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানোর দাবিতে ব্যবসায়ীরা এ দিন ওই দু’টি বাজার বন্ধ রাখেন। ব্যবসায়ীদের একাংশ অবরোধে শামিল হন। অবরোধের জেরে ভোগান্তি হয় সাধারণ মানুষের। পুলিশ গিয়ে দোষীদের ধরার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ একদল যুবক মোটরবাইকে করে এসে প্রথমে থানা মোড় বাজারে চড়াও হয়। তারা গোপীনাথ শেঠের মিষ্টির দোকান ও তাঁর ভাই সোমনাথের হোটেলে ভাঙচুর করে এবং তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। সেখান থেকে একটু তফাতেই রামনগর মোড় বাজারেরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর দোকানের মালপত্র লুট এবং তছনছ করে বলে অভিযোগ।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোপীনাথ এবং সোমনাথ বলেন, “আমরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে কেউই যুক্ত নই। বিজেপিকে সমর্থন করি, এই সন্দেহে থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এক তৃণমূল নেতা এবং তাঁর দলবল হামলা করল। বিষয়টা ব্যবসায়ী সংগঠন দেখছে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবের দাবি, ‘‘বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওই দুই বাজারে হামলা হয়েছে বলে শুনেছি। এর সঙ্গে আমাদের কেউ যুক্ত নয়।’’
‘খানাকুল বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক সঞ্জয় বটব্যাল বলেন, “বাজারে এ ভাবে হামলায় আমরা দিশেহারা। সংগঠনের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। রাজনৈতিক অশান্তি যাতে বাজারগুলিতে না ছড়ায়, সেই নিশ্চয়তার দাবি জানিয়ে দোকানপাট বন্ধ রেখেছি।”
সেই বাম আমল থেকেই ভোট পরবর্তী হিংসা দেখতে অভ্যস্ত আরামবাগ মহকুমার বাসিন্দারা। গত মঙ্গলবার ভোটের দিন থেকেই মহকুমায় অশান্তি জারি রয়েছে। ভোট শেষ হতেই খানাকুলের বেশ কিছু বুথে পরস্পরের বিরুদ্ধে তাদের এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ তোলে তৃণমূল-বিজেপি। বুধবার সকাল থেকে আরামবাগের বাতানল, বাছানরি, গোঘাটের বালি, পুরশুড়া কেন্দ্রের উদনো, বালিপুর, খানাকুলের ঘোষপুর, পারহরিশচক ইত্যাদি এলাকায় কোথাও বিজেপির বিরুদ্ধে, কোথাও তৃণমূলের বিরুদ্ধে
হুমকি এবং বোমাবাজির অভিযোগ দায়ের হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০টি করে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। ঘটনাগুলির তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। মহকুমার চারটি থানা মিলিয়ে ইতিমধ্যে মোট ১৫ জনকে ধরাও হয়েছে।