মেদিনীপুরের একটি বুথে তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া। নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুর ও গড়বেতা: নেতানেত্রীরা প্রায়ই এই অনুরোধ করেন। সকাল সকাল ভোট দিন। নিজের ভোট নিজে দিন। ভোটারেরা বোধহয় এ বার অক্ষরে অক্ষরে মেনেছেন এ কথা।
মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে শনিবার সকাল ১১টায় ভোট পড়েছিল ৪০ শতাংশ। বেলা ১টায় তা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশে। এই কেন্দ্রের বাগমারি বুথে মোট ভোটার ৭১২। সকাল ১০টায় ভোট দিয়ে ফেলেছিলেন ২৫০ জন। এ হল নমুনামাত্র। প্রথম দফায় পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬টি কেন্দ্রের ভোটের নির্যাস ছিল এক।
ভোটাররা সকাল থেকেই প্রার্থীরা দিয়েছেন চরকিপাক। এ ক্ষেত্রে পোড়খাওয়া নেতাদের কয়েক কদম পিছনে ফেলে দিয়েছেন অভিনেত্রী থেকে নেত্রী হওয়া জুন মালিয়া। ভোট শুরুর আগেই শহর ছেড়ে মেদিনীপুর গ্রামীণে পৌঁছন মেদিনীপুর কেন্দ্রের তৃণমূলের তারকা প্রার্থী জুন। সঙ্গে নেন মেদিনীপুর গ্রামীণের তৃণমূল নেতা গৌতম দত্তকে। তাঁর পোলিং এজেন্ট এসেছেন কি না, ভোট কেমন চলছে, বুথগুলিতে গিয়ে এ সব খোঁজখবরই নিয়েছেন অভিনেত্রী- প্রার্থী। বুথে ঢোকার মুখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা তাঁকে ‘গুড মর্নিং ম্যাডাম’ বলেছেন। জুনকেও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘গুড মর্নিং।’’ দিনভর দৌড়ে বেড়িয়েছেন জুন। সকালে মেদিনীপুর গ্রামীণের চারটি অঞ্চলে। পরে শালবনির পাঁচটি অঞ্চলে। সেখান থেকে এসেছেন মেদিনীপুর শহরে। বুথে ঘোরার ফাঁকে জুন বলছিলেন, ‘‘মানুষ হাসছেন। এটা তো গুড সাইন!’’ কী হতে পারে? জুনের জবাব, ‘‘সবটাই আমি মানুষের উপর ছেড়ে দিয়েছি।’’ প্রার্থীর সঙ্গে একই গাড়িতে দীর্ঘক্ষণ সওয়ার করেছেন মেদিনীপুর গ্রামীণের তৃণমূল নেতা গৌতম। তিনি বলছিলেন, ‘‘বুঝলাম, ওঁর মারাত্মক স্পিরিট আছে।’’
জুন যখন মেদিনীপুর গ্রামীণে ঘুরে বলছেন, ‘‘খুব পিসফুলি আপাতত হচ্ছে ভোটটা’’, তখন মেদিনীপুর শহরে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব। শহরে দলের ‘কন্ট্রোল রুম’ সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন বিশ্বনাথ। ‘কন্ট্রোল রুমে’ সক্রিয় ছিলেন পিকে- র টিমের লোকেরা। জানাচ্ছিলেন বিশ্বনাথকে। যে সব শুনে তেতে গিয়ে তৃণমূলের শহর সভাপতি বলছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীও পদ্মফুলে ছাপ দেওয়ার কথা বলেছে।’’
ভোট দিতে না পারার অভিযোগে বিক্ষোভ। পাশে গড়বেতার বিজেপি প্রার্থী মদন রুইদাস। নিজস্ব চিত্র।
মোট ছ’টি কেন্দ্রে এ দিন ভোট ছিল পশ্চিমে। বাকিগুলির পাশাপাশি অনেকেরই নজর ছিল গড়বেতা ও শালবনি কেন্দ্রের দিকে। কারণ, গড়বেতা কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার এ বারের প্রার্থী তপন ঘোষ। আর শালবনি কেন্দ্রে জোটের হয়ে দাঁড়িয়েছেন কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্ত ঘোষ। সকালে গুইয়াদহ এলাকার ছোটতাড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ১৪২ ও ১৪৩ নম্বর বুথের বাইরে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী তথা সিপিএম নেতা সুশান্তের গাড়ি ধরে বিক্ষোভ দেখানো হয় বলে অভিযোগ। সুশান্তকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়। গড়বেতায় বিক্ষিপ্ত গোলমাল হয়েছে। গড়বেতা ও শালবনি কেন্দ্রে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি বিজেপিকে।
লাইট, অ্যাকশন, ক্যামেরার দুনিয়ায় স্বচ্ছন্দ জুন বুথে ঘোরার ফাঁকে বলছিলেন, ‘‘আমার এক নম্বর বোতাম। শুনছি কিছু বুথে লাইটের ফোকাসটা এমন করা আছে যে ইভিএমে এক নম্বর বোতামটাই দেখা যাচ্ছে না। ফোকাসটা দু’নম্বর বোতাম থেকে শুরু হয়েছে। লাইটের ফোকাসটা ঠিক করা উচিত।’’