প্রতীকী ছবি।
দৃষ্টিহীন ভোটারেরা যাতে অন্যের সহায়তা ছাড়াই তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তার জন্য একেবারে নীরবে-নিভৃতে দৃষ্টিহীন ভোটার সহায়ক প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ চলছে এ রাজ্যে।
ব্রেলে তৈরি হচ্ছে প্রতিটি কেন্দ্রের সেই প্রার্থী তালিকা। প্রতিটি বুথের জন্য বরাদ্দ থাকছে একটি করে তালিকা। সেই তালিকায় হাত ছুঁইয়েই প্রার্থীর নাম এবং তিনি কোন দলের, তা বুঝে নিতে পারবেন দৃষ্টিহীন কোনও ভোটার। তার পরে ইভিএমে নিজের পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে থাকা বোতামটি নিজেই টিপতে পারবেন তিনি। আগে ভোট দিতে গেলে অন্যের সাহায্য নিতে হত দৃষ্টিহীনদের। সে সময়ে সাহায্যকারী ব্যক্তি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দিয়েছেন, এমন অভিযোগও উঠত।
এখন রাজ্যের তিনটি জায়গায় ব্রেলে প্রার্থী তালিকা ছাপানো হয়। তার মধ্যে একটি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমি। অন্য দু’টি মল্লিকপুরের ব্লাইন্ড পার্সনস অ্যাসোসিয়েশন এবং বেহালার ভয়েস অব দ্য ওয়ার্ল্ড। রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থায় দৃষ্টিহীনদের ভোট দিতে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না।’’ তিনি জানিয়েছেন, আগে এই সুযোগ দৃষ্টিহীনেরা পেতেন না। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই তাঁদের জন্য ব্রেলে প্রার্থী তালিকা ছাপানোর ব্যবস্থা শুরু হয়। তখন ত্রিপুরার বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা নরেন্দ্রপুর থেকে ব্রেলে ছাপানো হয়েছিল। রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে নরওয়ে থেকে আনা ব্রেল মেশিনে এই প্রার্থী তালিকা ছাপার কাজ চলছে। ওই যন্ত্রে দৃষ্টিহীনদের জন্য স্কুলের পাঠ্যবইও ছাপানো হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু। শুধু এই রাজ্যেরই নয়, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় সব রাজ্যেরই স্কুলের পাঠ্যপুস্তক এখানে ব্রেলে ছাপা হয়।
এ বারের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ১১৬টি কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা ব্রেলে ছাপানোর নির্দেশ তাঁরা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু। মার্চের মাঝামাঝি শুরু হয়ে গিয়েছিল ছাপানোর কাজ। নির্বাচন কমিশন ওই কেন্দ্রগুলির যে প্রার্থী তালিকা পাঠিয়েছে, সেটি অনুসরণ করেই ছাপার কাজ চলছে। নির্বাচন কেন্দ্রের নাম, ক্রমিক সংখ্যা, প্রার্থীর নাম, তাঁর দল— যে ভাবে ক্রমানুসারে লেখা আছে, সেই ভাবেই ব্রেলে ছাপার কাজ চলছে। ওই তালিকায় রাখা হয়েছে ‘নোটা’ও। ছাপা হচ্ছে ইংরেজি এবং বাংলা— দুই ভাষাতেই।
দৃষ্টিহীন ভোটদাতারা বুথে গিয়ে ভোটকর্মীদের কাছে ব্রেলে ছাপা ওই কাগজ চাইবেন। তার পরে তা স্পর্শ করে বুঝবেন কোন প্রার্থীর কী নাম, কোন দল এবং তিনি কত নম্বরে রয়েছেন। এর পরে ইভিএমে তিনি নিজেই সেই সংখ্যা হাতের স্পর্শে বুঝে নিয়ে বোতাম টিপবেন।
ব্রেলে ছাপানো প্রার্থী তালিকায় যাতে কোনও রকম ত্রুটি না থাকে, তার জন্য ছাপার পরে তা আবার মিলিয়ে নেওয়া হয়। নরেন্দ্রপুরে ছাপাখানা লাগোয়া একটি হলঘরে টেবিল পেতে বসে সেই ভুলত্রুটির পরীক্ষাও চলছে। এক জন দৃষ্টিহীন স্পর্শ করে প্রার্থী তালিকা বলে যাচ্ছেন। আর দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন এক জন তা ঠিকঠাক রয়েছে কি না, মিলিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্বজিৎবাবু জানান, অন্য যে দুই জায়গায় এই তালিকা তৈরি হচ্ছে, সেখানকার প্রতিনিধিরা ব্রেলের প্রার্থী তালিকা খতিয়ে দেখতে নরেন্দ্রপুরে আসছেন। আবার ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমি থেকেও প্রতিনিধিরা গিয়ে প্রার্থী তালিকা যথাযথ ভাবে ছাপা হল কি না, তা দেখে আসছেন।
তালিকা তৈরি হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের তরফে তা নিয়ে যাওয়া হয়।