ছড়ায় মজে ভোটের বঙ্গ

কবি শামসুর রহমান দুঃখিনী বাংলা বর্ণমালার দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন, ‘এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউড়ের পৌষ মাস!’ পশ্চিমবঙ্গেও রাজনীতির কারবারিদের ভাষা-ব্যবহার নিয়েও বছরভর তরজা চলে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৭
Share:

ভোটের ছন্দে সেজেছে দেওয়াল। নিজস্ব চিত্র।

কবি শামসুর রহমান দুঃখিনী বাংলা বর্ণমালার দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন, ‘এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউড়ের পৌষ মাস!’ পশ্চিমবঙ্গেও রাজনীতির কারবারিদের ভাষা-ব্যবহার নিয়েও বছরভর তরজা চলে। কিন্তু ভোট পড়লেই সেই ‘ভাষা-সন্ত্রাসে’র পাল্টা দেন পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ছড়াকারেরা। সাবেক দেওয়াল লিখন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া— সবই হয়ে ওঠে ছড়া-কাটার জায়গা।

Advertisement

এ বারের ভোটও তার ব্যতিক্রম নয়। ভোটে শাসককে এক হাত নিতে এ বার বড় বিষয় দুর্নীতি। তার রেশ এ বারের ভোট ছড়াতেও। যেমন, কালনা শহরের এক গলিতে লেখা, ‘দিদির ভাই/ টেট-সারদা-নারদা/ সবেতেই ঘুষ খাই/ আর কোনও কাজ নাই।’ হুগলির উত্তরপাড়াতেও সিপিএমের মোক্ষম টু’লাইনার— ‘দিদির পায়ে হাওয়াই চটি/ দিদির ভাইরা কোটিপতি।’ রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি নিয়েও গত পাঁচ বছরে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে। তার ছবি এ বার দেওয়ালেও পড়েছে। নবদ্বীপে যেমন লেখা হয়েছে, ‘চা, মিষ্টি, তেলেভাজা/ বাংলা হবে শিল্পে তাজা।’

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলতন্ত্রের বিভিন্ন অভিযোগের চেনা ছবিটাও উঠে এসেছে ছড়ায়। গোঁয়াইয়ের ঢঙে ছড়া কাটা হয়েছে— ‘ফুলদিদি ফুলদিদি তোমার বাড়ি যাব/ ফুলদিদি তুমি কি আর আমার কথা ভাবো/ ফুলদিদি বলেছিলে, চাকরি দেবে রেলে/ চাকরি দেবে টিএমসি-র মিছিল-সভায় গেলে/ মিছিল হল, মিটিং হল, চাকরি হল কই।’

Advertisement

বাংলার মসনদে বসতে বাম-কংগ্রেস দুই শিবিরেরই ভরসা এ বার ‘জোট’। জবানিপাড়ার দেওয়াল লিখনেও সেই বার্তার— ‘জোট বাঁধছে জনতা/ প্রমাদ গুনছে মমতা।’’

তবে ছড়ার যুদ্ধে পিছিয়ে নেই শাসকদলও। বিরোধীদের তোলা দুর্নীতির তিরের পাল্টা দিতে শাসকের ভরসা গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের খতিয়ান। কালনার শহরের একটি দেওয়ালে লেখা হয়েছে, ‘সেতু, বিদ্যুৎ, রাস্তা/ অর্জিত আজ আস্থা/ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য/ করছে যথাসাধ্য/ ভরসা জাগায় মমতা/ বলছে বঙ্গ জনতা।’’

বাম-কংগ্রেস জোটকে আদর্শের ধুয়ো তুলে একাধিকবার বিঁধতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর দলের লোকজনও একই পথে হাঁটছেন। তাই বোধ হয় মেদিনীপুরে লেখা হয়েছে— ‘সিপিএমের দুই ভাই, কাটা হাত আর পদ্মফুল।’ আর ১৯ মে, ফল ঘোষণার আগেই ডোমজুড়ের দেওয়ালে ফল ঘোষণা করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। সেখানে লেখা রয়েছে— ‘কংগ্রেস হারিয়ে গিয়েছে/ সিপিএমে অ্যালার্জি/ নির্দলকে হারাতে হবে/ জিতবে মমতা ব্যানার্জি।’

ভোট মরসুমে ছড়ার যুদ্ধ অবশ্য বাংলার সংস্কৃতিরই একটি বিশেষ অঙ্গ। ১৯৬৯ সালের নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে কংগ্রেসিরা লিখে ফেলেন, ‘যুক্তফ্রন্টে কী পেলাম/ গুলি-বুলি-লাল সেলাম।’ যুক্তফ্রন্ট পাল্টা দিল, ‘শুন হে দেশের ভাই/ যুক্তফ্রন্টে গদিই সত্য/ দেশপ্রেম কিছু নাই।’ ১৯৭৭ সাল। ইন্দিরাকে হটিয়ে ক্ষমতায় এল জনতা পার্টির সরকার। কিন্তু ১৯৮০-তে ফের প্রত্যাবর্তন ঘটে ইন্দিরা-সরকারের। তারপরে বাংলার বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস বামফ্রন্টের উদ্দেশে লেখে, ‘রায়বেরিলি ভুল করেছিল, চিক্মাগালুর করেনি/ সিপিআইএম মনে রেখো, ইন্দিরাজি মরেনি।’ কিন্তু বামফ্রন্টও দমবার পাত্র নয়। তারা লিখল, ‘হবে বাম হবে বাম হবে বাম হবে হবে।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement