মাখড়ায় বোলপুরের আরএসপি প্রার্থীর মিছিল। —নিজস্ব চিত্র
প্রথম দিন ভোট প্রচারে গিয়েই বিজেপি-র দুর্গ পাড়ুইয়ে ধস নামিয়ে জোর লড়াইয়ে পথে নামল বাম-কংগ্রেস জোট। মুখে হাসি প্রার্থীর।
মঙ্গলবার বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের পাড়ুই থানা ও ইলামবাজার থানা এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন এবারের জোট প্রার্থী তপন হোড়। আর এ দিনই শুধু মিটিং, মিছিল, প্রচার এবং পথসভা নয়, রীতিমতো সভা থেকেই বিজেপি ছেড়ে ‘সসম্মানে’ দলে কর্মী-সমর্থকদের ফিরিয়ে নিল বামেরা। যার জেরে শাসকদল তৃণমূল শিবিরে অস্বস্তি বাড়ছে। যদিও সেই অস্বস্তির কথা উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
জেলার রাজনৈতিকমহল বলছে, রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে দলীয় বাম কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই বিজেপিতে ‘শেল্টার’ নিতে যায়। ‘সঠিক সময়’ ফেরার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাম নেতৃত্বই। বিজেপি থেকে সেই ঘরেই ফিরছে এখন বামে। অন্য দিকে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর, গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বহু মানুষ দলে দলে যোগ দেন বিজেপিতে। তাই পাড়ুই থানা ও ইলামবাজার থানার একাধিক জায়গার মতো মাখড়াতেও সংগঠন বাড়ায় বিজেপি। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, এক সময়ে মাখড়া থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের জন প্রতিনিধি ও কর্মী-সমর্থকেরা গ্রামে ঢুকতে না পারার অভিযোগ জানিয়েছিল সংশ্লিষ্ট মহলে। বিজেপির দুর্গ মাখড়াকে কেন্দ্র করে এলাকা এলাকায় সংগঠন বাড়ায় বিজেপি। আর এ দিন বিজেপির সেই দুর্গেই কার্যত ফাটল ধরাল বামেরা।
এ দিন পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী মাখড়ায় বামেদের নির্বাচনী প্রচার সভা ছিল। বিকেল চারটে নাগাদ গ্রামে বামেদের নেতা-কর্মী ও বিধানসভার প্রার্থী তপনবাবু ঢোকার পর অনেককে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা যায়। বিজেপির ইলামবাজার ব্লক সহ সভাপতি মোজাই মল্লিক, মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণডিহি সংসদ থেকে বিজেপির দলীয় চিহ্নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে পরাজিত প্রার্থী বদি টুডু-সহ অনেকে বাম শিবিরে যোগ দেন। বাতিকার ও মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের শতাধিক কর্মী-সমর্থকও এ দিনই ওই সভায় সিপিএমে যোগ দেন। তাঁদের দাবি, ‘‘রাজ্য থেকে তৃণমূলকে সরাতে বাম-কংগ্রেস জোট সমর্থ হবে। তাই সিপিএমে যোগ দিয়েছি।’’
তপনবাবুর প্রচার মিছিলে নিহত বিজেপি কর্মী শেখ তৌসিফের দাদা সাবির আলিকেও হাঁটতে দেখা যায়। যদিও বাতিকার অঞ্চলের বিজেপি সভাপতি শেখ আজাহার ও সাবির আলি জানান, ভোট প্রচারে যে কেউ আসতে পারেন। কিন্তু কারা দলে যোগ দিয়েছে দেখতে হবে। যারা বামফ্রন্ট ছেড়ে বিজেপিতে এসেছিলেন তারা যোগ দিয়েছেন। সাবির আলি বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে কেউ ভোট চাইতে এলে, তাঁকে তো ফিরিয়ে দিতে পারি না। মিছিলে গ্রামবাসীরাও হেঁটেছেন। তবে তার মানে এই নয়, আমি বিজেপি ছেড়ে সিপিএমে যোগ দিলাম।’’
তাহলে কি বিজেপিতে আস্থা হারাচ্ছে পাড়ুই?
বিজেপির প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বলেন, “ওরা বিভ্রান্তির শিকার। তৃণমূলকে রাজ্য থেকে একমাত্র বিজেপি উৎখাত করতে পারে। ওরা ভুল বুঝতে পারবে। আমরা ওঁদের দলে ফেরাবো।”
জেলার রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের পাড়ুই এবং ইলামবাজার থানা এলাকার একাধিক পঞ্চায়েতে সেই অর্থে বাম-কংগ্রেস জোটের সংগঠন ছিল না। নিজের দখলে থাকা এলাকা এবং বিজেপির সংগঠন এলাকায় নজরে রেখে ভোটের অঙ্ক কষছিল তৃণমূল। বিজেপি-র এলাকার কর্মী-সমর্থক সিপিএমে যোগ দেওয়ায় কার্যত অস্বস্তি বাড়ল তৃণমূলের। তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “আমরা আগে থেকেই দাবি করছিলাম এলাকায় কোনও বিজেপি নেই। বিজেপির পতাকা নিয়ে সিপিএম এখন অশান্তি এবং গণ্ডগোল বজায় রেখেছে। এবং আমাদের অনুমান মতো নির্বাচনের মুখে সেটাই প্রমাণিত হল। স্বস্তি অস্বস্তির কোনও কথাই নয়। সংগঠনে কোনও প্রভাব পড়বে না।”