ভোটের পালে ডার্বির হাওয়া

প্রচারে ঘাম ঝরাচ্ছে দু’পক্ষ, ফুটছে শহর

লড়াইটা এবার জবরদস্ত। অশোক ভট্টাচার্যের ‘হোম ম্যাচ। ভাইচুং ভুটিয়ার ‘অ্যাওয়ে ম্যাচ’। ম্যাচের দু’সপ্তাহ বাকি থাকলেও তা ঘিরে যেন ফুটছে শিলিগুড়ি। কারণ, ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছুটছেন অশোকবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৮
Share:

পথে প্রচারে। (বাঁ দিকে) ভাইচুং ও (ডান দিকে) অশোক। নিজস্ব চিত্র।

লড়াইটা এবার জবরদস্ত। অশোক ভট্টাচার্যের ‘হোম ম্যাচ। ভাইচুং ভুটিয়ার ‘অ্যাওয়ে ম্যাচ’। ম্যাচের দু’সপ্তাহ বাকি থাকলেও তা ঘিরে যেন ফুটছে শিলিগুড়ি। কারণ, ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছুটছেন অশোকবাবু। চষে বেড়াচ্ছেন শহরের এ মাথা থেকে অন্যত্র। তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ঘাম ঝরাতে দেখা যাচ্ছে ভাইচুং শিবিরকেও। তা নিয়েই উন্মাদনা এখন শিলিগুড়ি শহরের ৩৩টি ওয়ার্ডে।

Advertisement

মঙ্গলবার সাতসকালেই কড়া রোদ মাথায় করেই মাঠে নেমে পড়ছেন অশোকবাবু। হিলকার্ট রোড, বর্ধমান রোড থেকে আদালত। বিকেলে হাকিমপাড়া থেকে রবীন্দ্রনগর চষে বেড়াচ্ছেন। পরনে খয়েরি রঙের হালকা ঢোলা পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা এবং চটি। ‘সুইট পার্লার’ থেকে আটা ময়দার চাকির দোকান, বইয়ের দোকান থেকে পরিবহণ সংস্থা—বাদ রাখছেন না কিছুই। তাঁর ফাঁকেই উঁকি দিচ্ছেন অলিগলির বাড়ির বারান্দায়। কোথাও বা আবাসনের পার্কিং লটে চেয়ার পেতে বসে আবাসিকদের এ বারের ভোটের গুরুত্বও বুঝিয়ে সমর্থন চাইছেন। তিনি মন্ত্রী বা বিধায়ক থাকাকালীন কী উন্নয়ন করেছিলেন, তার তালিকাও তুলে দেওয়া শুরু করেছেন ভোটারদের হাতে।

আর ‘স্ট্রাইকার’রের এমন পারফরমেন্স দেখে সকাল থেকে অ্যাক্টিভ বাম কর্মী-সমর্থকেরাও। তাঁরাও সাত সকালে স্নান, খাওয়া সেরে বুথ অফিস খুলে বসছেন। কোথায় পতাকা, ফেস্টুন ঝোলাতে হবে, কোথায় দেওয়াল লিখন হবে। কার বাড়ি বা দোকানে গিয়ে আরেকবার বোঝাতে হবে তা-ও ঠিক হয়ে যাচ্ছে। তেমনই, জোট সঙ্গীর লোকেদের ডেকে সন্ধ্যার পর বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতিও সারা হয়ে যাচ্ছে। নিজের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শুভ্র দে বা পল্টু মৌলিকদের কোনও ত্রুটি যাতে না থাকে, তা দেখে নিয়মিত নির্দেশও দিয়ে গিয়েছেন। সকাল থেকে খাবার বলতে ১-২ কাপ চিনি ছাড়া চা আর বিস্কুট।

Advertisement

বেলা গড়াতেই অশোকবাবু পৌঁছে গিয়েছেন শিলিগুড়ির আদালতে। বার অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন ঘর থেকে ল ক্লার্কদের টেবিলে টেবিলে। বেলা ২টো-তে স্নান খাওয়া ভুলে কোর্ট চত্বরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেখানে সঙ্গী জোট নেতাদের (কংগ্রেস) দেখে শিলিগুড়ি শুধু নয়, ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির প্রচারের কৌশলও দাঁড়িয়ে ঠিক করে নিয়েছেন। আবার সন্ধ্যার পর কোন কোন এলাকায় কার বাড়িতে বসে সভা করবেন, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন জোটসঙ্গী নেতাদের।

অশোকবাবু বলেন, ‘‘দুই আর দুই-এ চার হয় সবাই জানেন। এ বার পাঁচ হচ্ছে। মানুষ জোট করে দিয়েছেন। সকালে হাঁটা শুরু করতেই মানুষ এগিয়ে এসে সঙ্গ দিচ্ছেন। মিছিল হয়ে যাচ্ছে। ২০১১-তে তা ছিল না। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনই এ বার আমাদের ভরসা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আর ঘাম তো ঝরাতেই হবে। এতে লাভও আছে। শরীরও ভাল থাকে, মানুষের নানা বক্তব্য জানা যায়। তাই বাড়ি বাড়ি, দোকানে দোকানে যাওয়ার উপরেই জোর দিয়েছি।’’

সেখানে বিপক্ষের দলের ফরওয়ার্ড টের পাচ্ছেন ম্যাচ ক্রমশ শক্ত হয়ে যাচ্ছে। তিনিও ছুটছেন মহাবীরস্থান থেকে দেশবন্ধুপাড়ার খেলার মাঠেও। ব্যাকভলি প্র্যাকটিসের মাধ্যমে আত্মরক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন ভাইচুং। কোথাও কৃষ্ণ পাল বা রঞ্জন সরকারের মতো দলীয় নেতাদের নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের দোরে দোরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সরকারের উন্নয়নকেই ভরসা করে জোটকে ‘ড্রিবল’ করার চেষ্টায় মগ্ন ভাইচুং।

এর আগে দার্জিলিংয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার পূর্ণ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন ভাইচুং। ভোটের মাঠে সেটাই তাঁর প্রথম লড়াই। সেখানে ম্যাচ হেরে ফের একবার সুযোগ পেয়েছেন। এখন তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সেলফি তোলা থেকে বৃদ্ধাবাসে পৌঁছে পুজো দিয়েই ভোট চাইছেন আবাসিকদের কাছে। বাড়ি বাড়ি যাওয়ার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন, দেশবন্ধু পাড়া থেকে ইন্ডোর স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় পদযাত্রাও সেরেছেন। কোথাও পাশে মিছিলে ভিড় হয়েছে, কোথাও বা কিছু কম। তেমনই সন্ধ্যার পর বিভিন্ন আবাসনে বসেই ভোটের প্রচার সেরেছেন ভাইচুং। তৃণমূল প্রার্থী বলছেন, ‘‘ভোটটা একটা ফুটবলের ম্যাচের মতোই লড়াই। আমার কোচ দিদি। উনি আমাকে খেলতে নামিয়েছেন। সবাইকে নিয়ে গোল দেওয়ার চেষ্টা তো করেই যাচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement