প্রতীকী ছবি।
ঝাড়গ্রাম জেলার চার কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতেই তৃণমূলের প্রার্থী কি এ বার মহিলা? এমনই জল্পনা শাসদলের অন্দরে।
দুই বিরবাহা (সরেন ও হাঁসদা) ইতিপূর্বে ভোট পরীক্ষায় অকৃতকার্য। ছত্রধর মাহাতোর ঘরণী নিয়তি আগে ভোটে না দাঁড়ালেও ২০১১ সালে জেলবন্দি স্বামীর হয়ে ভোট-প্রচার করেছিলেন। তবে ঝাড়গ্রাম বিধানসভা আসনে ছত্রধর পেয়েছিলেন মাত্র ২০ হাজার ভোট। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামের চারটি আসনে প্রার্থী বাছতে অবশ্য তৃণমূলের চর্চায় রয়েছে এই তিন কন্যার নাম। এ ক্ষেত্রে দলের মাথায় থাকছে, শাসকদলের একাংশের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ, জেলায় দলের তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সেই সঙ্গে রয়েছে আদিবাসী সাঁওতাল সামাজিক সংগঠনের আড়াআড়ি বিভাজন, কুড়মিদের অসন্তোষ এবং মুন্ডা ও ভূমিজদের মতো অন্য জনজাতিদের অপ্রাপ্তির ক্ষোভ।
আজ, শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার কথা। বুধবার কলকাতায় গিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সাঁওতালি সিনেমার ‘মহানায়িকা’ বিরবাহা হাঁসদা। এরপরই তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে জল্পনা জোরালো হচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে। তবে পুরসভা, বিধানসভা ও লোকসভায় হারের হ্যাট্রিক রয়েছে বিরবাহার। প্রার্থী হওয়া নিয়ে কিছু না বললেও বিরবাহার বক্তব্য, ‘‘মানুষের কাজ করতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। দিদির হাত শক্ত করতে চাই।’’
জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান বিরবাহা সরেনও প্রার্থী হতে পারেন বলে সূত্রের খবর। অভিনেত্রী বিরবাহার তৃণমূলে যোগদান প্রসঙ্গে বিরবাহা সরেন বলছেন, ‘‘দু’জনে একসঙ্গে দিদির হাত শক্ত করব।’’ কিন্তু যদি কেবল বিরবাহা হাঁসদা টিকিট পান? এ বার বিরবাহা সরেনের জবাব, ‘‘সেটা হলে আলাদা গল্প!’’ দলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তিকেও প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে তৃণমূলের এক সূত্রের খবর। নিয়তি এখন একাধিক সরকারি পদেও আছেন। পশ্চিমবঙ্গ নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের সদস্য নিয়তি অবশ্য বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। প্রার্থী হওয়াটা বড় বিষয় নয়।’’
সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া টলিউডের এক অভিনেত্রীকেও ঝাড়গ্রাম আসনের জন্য ভাবা হচ্ছে বলেও দলের এক সূত্রে জানা গিয়েছে। আবার ‘জঙ্গলমহলের নাইটিঙ্গেল’ ঝুমুরসঙ্গীত শিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতোর নামও বিবেচনায় রয়েছে। ইন্দ্রাণী বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলের উন্নয়নের মুখ তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সৈনিক হওয়ার সুযোগ পেলে কৃতার্থ হব।’’
তৃণমূলের একাংশ বলছেন, ২০১৯ সালেই অভিনেত্রী বিরবাহার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। বিরবাহাকে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী করা হবে বলে ঠিকও হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদিবাসী ভোট অঙ্কের কথা মাথায় রেখে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের নেতা রবিন টুডুর স্ত্রী, পেশায় শিক্ষিকা বিরবাহা সরেনকে ঝাড়গ্রামে প্রার্থী করেন মমতা। অসন্তুষ্ট বিরবাহা হাঁসদাও ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) থেকে লোকসভা ভোটে দাঁড়ান। তবে দুই বিরবাহার যাত্রাভঙ্গ করে সাংসদ হন বিজেপির কুনার হেমব্রম। তারপরে বিরবাহা সরেনকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান করা হয়। এ ছাড়াও তিনি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সন।
অন্যদিকে, লোকসভায় হারার পরে অভিনয় থেকে সরে এসে বিরবাহা ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-কে চাঙ্গা করতে উদ্যোগী হন। বিরবাহার বাবা প্রয়াত নরেন হাঁসদার চালু করা কালীপুজোর উদ্বোধনে এসেছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তবে শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার পরে বিরবাহা ও তাঁর মা ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর সভানেত্রী চুনিবালা হাঁসদা কিন্তু গেরুয়া শিবিরে ঝোঁকেননি। বরং ২৭ ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়া সদরের সুনুকপাহাড়িতে ‘জঙ্গলমহল একতা মঞ্চে’র সভায় আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে একমঞ্চে হাজির ছিলেন মা-মেয়ে। তিনি দলে আসায় তৃণমূলের অন্দরে জলঘোলা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, সঙ্কটকালে অভিনেত্রী বিরবাহার তরুণ মুখের তাস খেলতে চাইছে তৃণমূল। পিকে টিমের পরামর্শে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।