এত দিন গুলি-বন্দুক নিয়ে হাতে মারার অভিযোগ উঠেছে। এ বার ভোটে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল। তাই নিয়ে রীতিমতো তেতে উঠেছে দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের গৃহস্থালি।
অভিযোগ, হরিরামপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব মিত্রের পালের হাওয়া কাড়তে দলে তাঁর বিরোধী বলে পরিচিত সোনা পাল সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। পাল্টা প্রচার করে তিনি নাকি ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। রবিবার জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর কাছে সোনা পালের বিরুদ্ধে হরিরামপুর কেন্দ্রের ১৩টি বুথের নাম ও নম্বর উল্লেখ করে অভিযোগ জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি ও বিপ্লববাবুর নির্বাচনী এজেন্ট অখিল বর্মন। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
এ দিকে সোনা পালের পাল্টা অভিযোগ, হরিরামপুরে বিপ্লববাবু নাকি তাঁকে বসিয়ে রেখেছেন। এমনকী দলের নির্দেশে তিনি যে কুশমন্ডি, গঙ্গারামপুর, কুমারগঞ্জে কাজ করছেন সেটাও বিপ্লববাবুর না-পসন্দ। তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে যাতে ওই সমস্ত এলাকায় কাজ করতে না পারি।’’ নির্বাচন কমিশনের কাছে বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করছেন বলে জানিয়েছেন তিনিও।
এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রেশ ছড়িয়েছে কুমারগঞ্জ, তপন এবং গঙ্গারামপুর কেন্দ্রেও। শুক্রবার কুমারগঞ্জে দলের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, সাংসদ অর্পিতা ঘোষ দু’পক্ষের নেতা কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসলে সেখানেও শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। বিপ্লব-অনুগামী নেতারা প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, তাদের না জানিয়ে ভোটের প্রচার হচ্ছে। সোনা পালকে কুমারগঞ্জে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া নিয়েও তুমুল হট্টগোল শুরু করেন তাঁরা। আবার তপন কেন্দ্রের প্রার্থী বাচ্চু হাঁসদার বিরুদ্ধে প্রাথমিকে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হন দলের একাংশ। বাদ যাননি গঙ্গারামপুরের প্রার্থী সত্যেন রায়ও। তাঁর বিরুদ্ধেও দলের উপপ্রধান লুতফর রহমান খুনে জড়িত থাকার প্রসঙ্গ ওঠে বৈঠকে।
ভোটের মুখে জেলায় দলের কোন্দল ফের প্রকট হওয়ার খবর গিয়েছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও। দল সূত্রে খবর অবস্থা সামলাতে জেলা সফর এগিয়ে এনেছেন তৃণমূলের রাজ্য যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৯ এবং ১০ এপ্রিল দক্ষিণ দিনাজপুরে তাঁরা পরপর সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে তপনে সভা করে গোষ্ঠীপতিদের সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। লাভ হয়নি কিছুই। গঙ্গারামপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ এবং দলের অঞ্চল সভাপতির গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে গিয়েছিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে বৈঠকে বসেছিলেন বিবদমান নেতারা। তাতেও কাটেনি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঝাঁঝ।