সততার মূল্য নেই, বলছেন ক্ষুব্ধ ধীমান
tmc candidate

প্রার্থী বদল করে প্রচারে গতি এল দুই কেন্দ্রে

বছর একান্নর নারায়ণ ২০০৬ সালে স্বরূপনগর কেন্দ্র থেকে বিধানসভার ভোটে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

অশোকনগর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২১ ০৭:৩১
Share:

পদক্ষেপ: ধীমানের নাম মুছছেন পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকার — ছবি: সুজিত দুয়ারি

তাঁদের প্রার্থী পদ স্থানীয় স্তরে দলের অনেকে মেনে নিতে পারেননি। ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছিল। তবে সে সবের তোয়াক্কা না করে প্রচারও শুরু করে দিয়েছিলেন অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ধীমান রায় এবং আমডাঙার তৃণমূল প্রার্থী মোর্তজা হোসেন। দেওয়াল লিখন, মিটিং-মিছিল চলছিল।

Advertisement

শুক্রবার রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, ওই দু’টি কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করা হয়েছে। অশোকনগরে ধীমানের পরিবর্তে প্রার্থী করা হয়েছে জেলা তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামীকে। আমডাঙায় প্রার্থী হচ্ছেন বিদায়ী বিধায়ক রফিকুর রহমান।

বছর একান্নর নারায়ণ ২০০৬ সালে স্বরূপনগর কেন্দ্র থেকে বিধানসভার ভোটে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন। সে বার অবশ্য পরাজিত হন। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন। ২০১৩ থেকে তিনি জেলা পরিষদের সদস্য।

Advertisement

এ দিন সকালে নারায়ণের নাম ঘোষণা হতেই তৃণমূলের বহু নেতা-কর্মী মিষ্টি বিতরণ শুরু করেন। অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকারের নেতৃত্বে নারায়ণের নামে দেওয়াল লিখতে শুরু করেন কর্মীরা। ধীমানের নামে লেখা দেওয়াল মোছার কাজও শুরু হয়।

গোটা ঘটনায় দৃশ্যতই ভেঙে পড়েছেন ধীমান। তিনি বলেন, ‘‘সততার কোনও মূল্য নেই। কোনও দিন নেশাভাঙ করিনি। একপয়সা চুরি করিনি। কোনও অসৎ কাজ করিনি। একটা ভুয়ো ভিডিয়ো দেখিয়ে আমাকে অবমাননা করা হল।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘প্রথম দিন আমাকে প্রার্থী করা হবে না বলে দিলে এই যন্ত্রণা পেতাম না। দলের বোধহয় আমাদের মতো লোকেদের আর দরকার নেই!’’ নাম না করে পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের নিয়ে এসে চেয়ারম্যান করলাম, তাঁরাই চক্রান্ত করলেন।’’

প্রবোধের অবশ্য দাবি, ‘‘আমি কাউকে প্রার্থী হিসেবে দলের কাছে দাবি করিনি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধীমান রায়কে প্রার্থী করেছিলেন। তাঁর হয়ে প্রচার শুরু করেছিলাম। এখন নারায়ণ প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর হয়েও প্রচার করব।’’ যে ভিডিয়োর কথা উল্লেখ করলেন ধীমান, তাতে এক মহিলার সঙ্গে ‘আপত্তিকর’ তাঁকে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ (ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার যাচাই করেনি), সেই ভিডিয়োটি কিছু দিন আগে ছড়িয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিয়ো ভুয়ো বলে দাবি করে ধীমান থানায় অভিযোগও করেছিলেন। তবে এলাকায় যত্রতত্র ওই ভিডিয়ো নিয়ে রঙ্গ-রসিকতা বন্ধ হয়নি। বিধায়কের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ওই বিতর্কেরই খেসারত দিতে হল তাঁকে। দশ বছরের বিধায়ক ধীমান এবং অনুগামীরা এখন কী অবস্থান নেন, সে দিকেই তাকিয়ে এলাকাবাসী। নারায়ণের কথায়, ‘‘আমাদের দলে প্রার্থী একজনই। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উন্নয়নের সঙ্গে এ বার বহিরাগতদের লড়াই। অশোকনগরের মানুষ এই বিষয়টি মাথায় রেখে ভোট দেবেন। প্রার্থী এখানে বড় কথা নয়। আমি ধীমানদার সঙ্গে দেখা করে কথা বলব।’’

তবে শুরু থেকেই ধীমানকে প্রার্থী হিসাবে মানতে নারাজ ছিলেন দলের অনেকে। এলাকায় পথ অবরোধ হয়েছে প্রার্থী বদলের দাবিতে। অশোকনগরের বিভিন্ন এলাকায় বহু দেওয়ালে তৃণমূলের প্রতীক আঁকা হলেও প্রার্থীর নাম লেখা হয়নি। বহু নেতা-কর্মীকে প্রচারেও নামতে দেখা যায়নি। দলের অন্দরে কোন্দলও এখানে নতুন নয়।

অন্য দিকে, আমডাঙায় বাম জমানার মন্ত্রী মোর্তজা হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণার পরে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বড় অংশের কর্মীরা বসে গিয়েছিলেন। বেশিরভাগ দেওয়াল ফাঁকা ছিল। এ দিন প্রার্থী হিসেবে বিদায়ী বিধায়ক রফিকুর রহমানের নাম ঘোষণা হতেই পরিস্থিতি পাল্টায়। প্রার্থী পরিবর্তন হওয়ার আভাস পেয়ে এ দিন সকাল থেকেই কর্মীরা রফিকুরের নামে দেওয়াল লিখতে শুরু করেছিলেন। মিষ্টিমুখ করেন অনেকে, আবির খেলা হয়।

রফিকুর বলেন, ‘‘আমি প্রার্থী হওয়ায় আমডাঙার সব প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী মানুষ খুশি হয়েছেন। প্রার্থী তালিকায় প্রথমে আমার নাম না থাকায় কর্মীরা বসে গিয়েছিলেন। দিদিকে আমডাঙার পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন করেছিলাম। উনি তা শোনায় আমি কৃতজ্ঞ।’’ মোর্তজা বলেন, ‘‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন সৈনিক। উনি আমাকে প্রার্থী করেছিলেন। আজ খবরে দেখলাম, অশোকনগর ও আমডাঙায় প্রার্থী বদল করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে কেউ আমাকে কিছু জানাননি। নেত্রী নিশ্চয়ই কিছু চিন্তা-ভাবনা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার কোনও ক্ষোভ নেই।’’ প্রার্থী পরিবর্তন নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘জেতার জন্য দল যেটা সঠিক মনে করেছে, সেটাই করেছে। প্রার্থী বদল নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement