জয় কি আসবে, উদ্বিগ্ন অজয়

বাড়ির অদূরের বুথে ভোট দিয়ে তিনি যখন বাইরে এলেন ঘড়িতে তখন বাজে সকাল ৭টা। পরনে ধূসর রঙের সুতির পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা। বুথের সামনের সরু রাস্তায় তাঁকে ঘিরে কর্মীদের জটলা।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৪
Share:

বাড়ির অদূরের বুথে ভোট দিয়ে তিনি যখন বাইরে এলেন ঘড়িতে তখন বাজে সকাল ৭টা। পরনে ধূসর রঙের সুতির পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা। বুথের সামনের সরু রাস্তায় তাঁকে ঘিরে কর্মীদের জটলা। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বললেন, ‘‘কেউ কোনও গোলমালে জড়াবে না। শুধু মন দিয়ে ভোটটা করাবে। সন্ধ্যা ছ’টা অবধি সময় আছে বলে গা ছাড়া দেবে না।” ততক্ষণে হাজির তাঁর এ দিনের বাহন মেরুন রঙা এসইউভি। তিনজন সঙ্গীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন শান্তিপুরের তৃণমূল প্রার্থী অজয় দে।

Advertisement

গাড়িতে উঠতেই বেজে উঠল মোবাইল। স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নম্বরটা দেখেই কপালে ভাঁজ। রাস্তার ধার ঘেঁষে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সংক্ষিপ্ত কথা। চালককে গাড়ি ঘোরানোর নির্দেশ দিয়ে আপন মনেই বললেন, ‘‘তন্তুবায় স্কুলের বুথে অন্য জায়গা থেকে লোক এনে বিরোধীরা বুথে বসাচ্ছে।’’ গাড়ি পৌঁছল স্কুলের সামনে। দলের কর্মীরা জানালেন, তিনটি বুথে বিরোধীদের এজেন্ট সংশ্লিষ্ট বুথের ভোটার নন। শুরু হল ফোনাফুনি। দলীয় কর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। একাধিকবারের বিধায়কের চোখে-মুখের জ্যামিতিতে ফুটে উঠল উদ্বেগে ছাপ।

ওই বুথ থেকে বেড়িয়ে তিনি স্থির করেন, শহর বাইরে গ্রামীণ শান্তিপুরেও ঘুরবেন। গাড়ি ছুটল বাবলার উদ্দেশ্যে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর গলাইদড়ি এলাকায় পৌঁছতেই কর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরলেন। কর্মীদের জানালেন, দাদা কোন চিন্তা নেই। ভালো ভোট হচ্ছে। পথের ধারে চেয়ার পেতে বসে পড়ছেন অজয়বাবু। ভোটের খুঁটিনাটি জানতে চাইলেন। কত শতাংশ ভোট পড়েছে? জানতে চাইলেন। উত্তরে খুশি না হয়ে নিজেই কাউকে ফোনে ধরলেন। ফোন রেখে বললেন, ‘‘১১টা পর্যন্ত ৪৩ শতাংশ পোল হয়েছে।” ইতিমধ্যে লাল চা হাজির। স্বভাবগম্ভীর মুখে একটা চাপা টেনশন ধরা পড়ছে যেন। চা শেষ করেই ফের যাত্রা।

Advertisement

এবার গোবিন্দপুর। প্রথমেই মাহিষ্য পাড়া। ভোট কেন্দ্রের সামনে যেতেই একজন জানালেন, দাদা সত্তর শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। সব ঠিকঠাক। কিন্তু ততক্ষণে খবর এসেছে, ‘দাদার’ গাড়ি বিগড়ে গিয়েছে। খোঁজ পড়ল বিকল্প গাড়ির। শুরু হল খবর নেওয়া। ঘড়িতে তখন বাজে পাক্কা সাড়ে ১২টা। তাঁকে ঘিরে ভিড় জমে গেল। ধমক দিয়ে বললেন, ‘‘বাকি ভোট করাতে হবে না? যাও যাও ভাল করে ভোট করাও।”

পাশের বুথ থেকে তিন-চার জন এসে অভিযোগ জানালেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী অকারণে চমকাচ্ছে। বাতলে দিলেন উপায়ও। এতক্ষণে চলে এসে অন্য গাড়ি। সেই গাড়িতে সওয়ার হয়ে আবার শুরু হল পথ-চলা। ছুটলেন শান্তিপুরের শেষ সীমানা শ্রীরামপুরে। কার্যত গোটা বিধানসভা কেন্দ্র চক্কর কেটে তিনি যখন শান্তিপুর পুরসভার এলাকায় ফিরলেন, তখন সময় বিকেল সাড়ে ৪টে। শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চ মাঠে তাঁকে দেখে এগিয়ে এলেন এলাকার কর্মী সমর্থকেরা।

বিকেলের দিকে অবশ্য তাঁর চোখ-মুখের ভাষা বলে দিচ্ছিল, উদ্বেগ কমেছে। “কেমন দেখলেন?” উত্তরে কাটা কাটা জবাব, “খুব ভালো ভোট হচ্ছে। ভোট অবাধ শান্তিপূর্ণ হয়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বাভাবিক ভাবে ভোট দিয়েছেন। পুলিশ এবং প্রশাসন যথাযথভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে কোথাও তেমন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’ তবে শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী অরিন্দম ভট্টাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, “ভয় এবং সন্ত্রাসের আবহাওয়ায় ভোট হয়েছে। মানুষ স্বাভাবিক ভাবে তাঁদের ভোট দিতে পারেননি। শাসকদল পরিকল্পিত ভাবে দুষ্কৃতীদের দিয়ে গোটা এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে সাধারন মানুষ ভয়ে আমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলতেও চায় নি। এটা কোন গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে, আমি কল্পনাও করতে পারিনি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement