অনুমতি নেই। বাবুল সুপ্রিয় বাইক আটকাল কমিশনের কর্মীরা। শনিবার মেদিনীপুরে।
আজ, রবিবার টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। তার আগে শনিবার প্রথম দফা ভোটের শেষ দিন প্রচারে জমিয়ে ব্যাট করল সব দলই। মেদিনীপুর থেকে শালবনি, জনতা-জনার্দনের মন জিততে ঝাঁপাল বাম-ডান।
শনিবার বিকেল চারটে পর্যন্ত ছিল প্রচারের সময়সীমা। ফলে, সকাল থেকেই মাঠে নেমে পড়েন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। মেদিনীপুর শহরের বার্জটাউন এলাকায় মিছিল করেন তৃণমূল প্রার্থী মৃগেন্দ্রনাথ মাইতি। শহরের অন্য এলাকায় ঘুরেছে তাঁর প্রচার গাড়ি। মেদিনীপুর বিধানসভার প্রতিটি বুথ এলাকায় এ দিন মিছিল করেছে তৃণমূল। মৃগেনবাবুর কথায়, “এরপর তো আর মিটিং, মিছিল করা যাবে না। তাই শেষ দিনে যতটা করা যায় কর্মীরা করেছেন।’’
বসে ছিলেন না সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণাও। তিনি আবার শহরে নয়, শেষ দিনে ঘুরে বেরিয়েছেন গ্রামীণ এলাকায়। মাথায় গামছা বেঁধে মিছিল করেছেন কঙ্কাবতী, মণিদহ, ধেড়ুয়া, চাঁদড়ায়। মিছিলের মাঝেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সাহস জুগিয়েছেন। সন্তোষবাবুর অভিযোগ, “এখন থেকেই যে তৃণমূল বিভিন্ন জায়গায় হুমকি দিচ্ছে। ভোট দিলে পরে দেখ নেব, মোটরবাইক বাহিনী নিয়ে এই হুমকি দিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।” সন্তোষবাবুর প্রচার গাড়ি এ দিন ঘুরেছে শহরে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চলেছে প্রচার।
মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী তুষার মুখোপাধ্যায়ের প্রচারে এ দিন এসেছিলে গায়ক-সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। বাবুল মোটর বাইক চালিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন। পিছনে ছিল মিছিল। কিন্তু অনুমতিপত্র না থাকায় নান্নুরচকের কাছে মাঝপথেই পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা মিছিল আটকে দেন। প্রতিবাদে বিজেপি কর্মীরা ওখানেই পথ অবরোধ করেন। পরে বাবুলই কর্মীদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেন। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনেই চলব আমরা। কোনও বিধিভঙ্গ করব না। যেহেতু অনুমতিপত্র হাতে নেই, তাই রোড শো বন্ধ করে দাও।’’ বলেই গাড়িতে উঠে খড়্গপুরের দিকে রওনা দেন। যদিও প্রার্থী তুষারবাবুর দাবি, “আমরা নিয়ম মেনেই অনলাইনে আবেদন জানিয়েছিলাম। এ দিন সকালেই অনুমতি পেয়েছি বলেও প্রশাসন জানিয়েছিল। কিন্তু অনুমতিপত্রটি হাতে দেননি।”
এ দিন মেদিনীপুরে আসার আগে চন্দ্রকোনা রোডের শান্তি কলোনির মাঠে দুই দলীয় প্রার্থী ধীমান কোলে ও প্রদীপ লোধার সমর্থনে একটি সমাবেশেও বক্তব্য রাখেন বাবুল। সেখানে বাবুল মুখ্যমন্ত্রীর ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’ মেপে নেওয়ার জবাব দিয়ে বলেন, “দিদি, আপনি তো ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মেনে নেবেন বলেছেন। ১২ ইঞ্চিতে এক ফুট। আমরা ফুটে মাপছি। ফুট মানে পা। এমনও তো হতে পারে দিদি, আপনাদের কোনও সদস্য বিধানসভা পা না-ও রাখতে পারে।’’ তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সরব হন তিনি। এ দিনই বাবুল খড়্গপুর শহরেও একটি রোড শো করেন। মালঞ্চ থেকে রোড শো শুরু হয়েছিল। কোথাও লস্যি, আবার কোথাও ফুচকা খান রোড শোয়ের মাঝে। কোথাও ঢাক বাজান, আবার কোথাও গান করেন।
শনিবার সকাল থেকেই আকাশ ছিল রোদ ঝলমলে। পারদ ৩৪ ডিগ্রি। চড়া রোদেই তৃণমূল প্রার্থী শ্রীকান্ত মাহাতোর সমর্থনে শালবনিতে মহামিছিল হয়। জোটের সিপিএম প্রার্থী শ্যাম পান্ডের সমর্থনে এখানে ছাত্র-যুবদের সাইকেল-মিছিল হয়। শালবনিতে এ বার সেয়ানে- সেয়ানে লড়াই হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। ২০১১ সালে এখানে জিতেছিলেন তৃণমূলের যুব নেতা শ্রীকান্ত মাহাতো। এ বারও তিনিই প্রার্থী। ২০১৪-র লোকসভা ভোটেও এখানে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তবু সে সব অঙ্ক দূরে সরিয়েই শেষ দিনের প্রচারে মেতেছিল বিরোধীরা।
জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্প শালবনিতে হয়নি। উল্টে সিমেন্ট কারখানার শিলান্যাস হয়েছে। শেষ দিনের প্রচারেও সেই না-হওয়া ইস্পাত কারখানার কথা উঠে আসে জোটের প্রচারে। সিপিএম প্রার্থী, জোনাল সম্পাদক শ্যামবাবু বলেন, ‘‘ওদের (তৃণমূল) কাছে লড়াই মানে ভাঙচুর করো।আমাদের কাছে লড়াইটা গড়ার জন্য। আমরা শালবনিকে নতুন করে গড়ে তুলতে চাই। ক্ষমতায় এলে শালবনিতে আমরা ইস্পাত কারখানাই করব।’’ উল্টে তৃণমূলের প্রচারে জিন্দল নয়, বরং কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজসাথীর কথাই জায়গা পেয়েছে। তৃণমূল প্রার্থী শ্রীকান্ত বলছেন, ‘‘তৃণমূল সরকার গরিবের সরকার। তাই মানুষ তৃণমূলের পাশেই থাকছেন।’’
শনিবার সব দলের প্রচার কর্মসূচিতেই প্রচুর কর্মী-সমর্থক ছিলেন। অবশ্য ভিড় দেখে ভোটের ফল আঁচ করা যায় না! তবে আত্মবিশ্বাসী দু’পক্ষই। প্রচার শেষে সন্ধ্যায় সিপিএমের ছাত্র নেতা শুভদীপ খামরুই যেমন খেলার রেশ টেনেই বলছিলেন, “মানুষের ব্যাটিং কিন্তু খুব বিপজ্জনক! মানুষ ভোট দিতে পারলে ওরা বুঝতে পারবে কত ধানে কত চাল!” তৃণমূলের যুব নেতা সন্দীপ সিংহের পাল্টা, “মানুষের বোলিংটাও আক্রমণাত্মক! ভোটে জবাব ওরা পেয়ে যাবে।” ফুটছে দু’পক্ষই। শেষ হাসি কে হাসে, সেটাই দেখার!
(সুমন ঘোষ, অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী)