ঝুড়িতে একটা পচা আপেলও বাকিদের পক্ষে ক্ষতিকর! এই আপ্তবাক্য সামনে রেখেই বোঝাপড়াকে আরও মসৃণ করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাতে চাইছে বাম ও কংগ্রেস শিবির। তবে যে কোনও দর কষাকষির ধর্ম মেনে এই চেষ্টার মধ্যেও বহাল থাকছে স্নায়ুর ল়়ড়াই!
দু’পক্ষের ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ২২টি আসনে বাম ও কংগ্রেস দু’তরফেরই প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে আরএসপি-র ৯, সিপিএমের ৭, ফরওয়ার্ড ব্লকের ৫ এবং আরসিপিআইয়ের ভাগের শান্তিপুর আসনটি পড়ছে। দলের অন্দরে কাঁটাছেড়া করতে গিয়ে দুই শিবিরের নেতাদের একাংশই এখন দেখছেন, সমস্যার সূত্রপাত আসলে একে অপরের গত বারের জেতা আসনে প্রার্থী দেওয়াকে কেন্দ্র করে। উদাহরণ দিয়ে তাঁরা বলছেন, সিপিএমের জেতা ডোমকল, হরিহরপাড়া, আরএসপি-র জেতা ভরতপুর, মালতীপুর বা ফ ব-র হাতে-থাকা হরিশ্চন্দ্রপুর আসনে কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। আবার আরএসপি-র মতো বাম শরিকও কংগ্রেসের জেতা বড়ঞা, নওদা বা সুতি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। দু’পক্ষের নেতাদেরই বড় অংশ বলছেন, পরস্পরের জেতা আসন ছেড়ে দিলে বাকি আসন নিয়ে টানাটানিও অনেক নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু যেমন পরিষ্কারই বলছেন, ‘‘একটা নীতি মেনে চললে ভাল হতো। কেউ কারও ২০১১ সালে জেতা আসনে প্রার্থী দেবে না। একেবারে ব্যতিক্রম ছাড়া। কিন্তু সেটা মানা হয়নি। তার থেকে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার জেরে অন্য কয়েকটা আসনও আটকে রয়েছে।’’ বিমানবাবুদের যুক্তি, বামেদের জেতা আসন-সহ বিতর্কিত ২২টির মধ্যে অন্তত ৫০%-এর দাবি ছেড়ে দিক কংগ্রেস। তা হলে বামেরাও কংগ্রেসের জেতা আসন ছেড়ে দিয়ে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে পারবে।
এই যুক্তির সঙ্গে একমত প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘তৃণমূলের সুবিধা হয়ে যেতে পারে, এমন কোনও কাজই দু’পক্ষের করা উচিত নয়। মানুষ চাইছেন গোটা রাজ্যে মসৃণ জোট হোক। আমাদের উচিত এখনই আবার আলোচনায় বসে এই জেতা আসন নিয়ে টানাপড়়েনের মীমাংসা করা।’’
বস্তুত, মীমাংসা সূত্র বার করার জন্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের অহমেদ পটেল এবং এআইসিসি-র তরফে এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক সি পি জোশীর সঙ্গে ফের কথা বলেছেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বাংলায় বোঝাপড়ার পথ নিষ্কণ্টক রাখতে এআইসিসি শীঘ্রই প্রদেশ নেতৃত্বকে ফের পরামর্শ দেবে।
পরিস্থিতির বিচারে এখন সব চেয়ে চাপে রয়েছে বাম শরিকেরাই। তাদের কিছু আসন ছাড়তে হয়েছে, তার বাইরেও কিছু আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়ে দিয়েছে! অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য আজ, মঙ্গলবারই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চলেছেন আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া ছাড়়াও আজ আরএসপি-র প্রতিষ্ঠা দিবসে ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের কর্তব্য’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তা ক্ষিতিবাবুই। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে যেন, আরএসপি-ই এখন বোঝাপড়ার খলনায়ক! তাই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাই। সংগঠনের অস্তিত্ব রাখার জন্যই মুর্শিদাবাদের কয়েকটি আসনে লড়াই করার কথা বলেছি, সেটাও ব্যাখ্যা করতে চাই।’’ বৃহত্তর জোটের প্রক্রিয়ায় ধাক্কা খেয়ে আজই অন্তত ১৫টি আসনে পৃথক প্রার্থী ঘোষণা করার কথা পিডিএসের সমীর পূততুণ্ডেরও। তাঁদের জন্য কাকদ্বীপ আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল বামফ্রন্ট। কিন্তু কংগ্রেস সেই আসনেও প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে।
এরই মধ্যে এ দিন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে ওই আসনে কংগ্রেসের বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের পাশাপাশি মনোনয়ন পেশ করেন সিপিএম প্রার্থী বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী। জেলা সিপিএমের একাংশের দাবি, সদ্য তৃণমূল ছেড়ে-আসা বিশ্বনাথবাবু কোনও কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। তবে বিপ্রেন্দুবাবুর মনোনয়ন গ্রাহ্য হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সময়সীমা পেরোনোর ১০ মিনিট পরে। আবার প্রার্থী হিসাবে দলের যে চিঠি জমা দিতে হয়, সেখানে অন্যের নাম কেটে বিপ্রেন্দুবাবুর নাম লেখা রয়েছে! তবে সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের দাবি, কংগ্রেসের সঙ্গে প্রার্থী নিয়ে টানাপড়েনে রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে চিঠি আনতে দেরি হয়েছে।