শিলিগুড়ির টিকিয়াপাড়ায় সভামঞ্চে সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে জীবেশ সরকার (বাঁ দিকে) ও মেয়র অশোক ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। — বিশ্বরূপ বসাক
শিলিগুড়ি মডেলই রাজ্যকে পথ দেখাচ্ছে বলে মনে করেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বুধবার শিলিগুড়ির টিকিয়াপাড়ায় অরবিন্দ বিদ্যামন্দির মাঠে অশোক ভট্টাচার্যের প্রচার সভায় এ কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি পথ দেখাচ্ছে রাজ্যকে। প্রথমে পুরসভায় মানুষের জোট হয়েছে। মহকুমা পরিষদেও একই ঘটনা ঘটেছে। শিলিগুড়িতে যা হয়েছে, সেটাই এখন পুরো বাংলায় হচ্ছে।’’
শিলিগুড়িতে তৃণমূলকে পর্যুদস্ত করে পুরবোর্ড দখল করে বামেরা। এক নির্দল কাউন্সলর তাদের সমর্থন করেন। পুর নির্বাচনে তৃণমূল-বিরোধীদের ভোট লুঠ ঠেকানোর ডাক দিয়ে জোট করে সিপিএম, কংগ্রেস। যার অন্যতম উদ্যোক্তা শিলিগুড়ির মেয়র তথা শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অশোকবাবু। রাজ্য রাজনীতিতে তা ‘শিলিগুড়ি মডেল’ বলে পরিচিত হয়ে ওঠে। এরপর শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে একই ভাবে শাসক দলকে হারায় বামেরা। মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতেই কংগ্রেস এবং সিপিএম তথা বামেরা মিলে ওই জোট গড়ে তোলে। বিধানসভা নির্বাচনেও সেই জোটই রাজ্যকে পথ দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন সীতারাম ইয়েচুরির মতো নেতারা।
এ দিন, ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সিপিএম বা বামফ্রন্ট বা রাজনৈতিক নেতারা মিলে জোট করছেন না। মানুষ করেছেন। যেটা শিলিগুড়ি পুর নির্বাচনে এবং মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে আমরা দেখেছি।’’ তাঁর কথায়, ইতিহাস বলছে একসময় বাংলা যে আন্দোলনের সূচনা করত সেই ভাবে দেশের আন্দোলন পরিচালিত হয়। বাংলার সেই প্রভাব, সম্মান এখন খর্ব হচ্ছে। সারদা থেকে নারদ—যে ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে তা আগে কখনও শোনা যায়নি। উড়ালপুল ভেঙে পড়ছে।
বাম নেতার যে বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল নেতা গৌতম দেব বলেন, ‘‘বাংলার সংস্কৃতি সীতারাম ইয়েচুরির কাছ থেকে শিখতে হবে না আমাদের। ওরাই রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া কবি বলতেন, তা মানুষ জানেন। সীতারামবাবুদের সময় ওয়াকফ কেলেঙ্কারি, মাটিকাটা নিয়ে কেলেঙ্কারি, জমি কেলেঙ্কারি এ সবের শেষ ছিল না। এখন বাংলা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বিভিন্ন সমীক্ষাতেই তা উঠে আসছে।’’ তা ছাড়া কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট নিয়েও গৌতমবাবুর কটাক্ষ, সিপিএম দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। টুজি কেলেঙ্কারি, কোলগেট কেলেঙ্কারি কি তৃণমূল করেছে? যারা করেছে, তাদের সঙ্গে সিপিএম আঁতাত করছে। তাঁর দাবি, শিলিগুড়ি মডেল বলে কিছু ছিল না, নেই। বিচ্ছিন্ন ভাবে সামান্য ব্যবধানে পুরসভায় জিতেছেন, তার উপর বাংলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে না বলে গৌতমবাবুর দাবি।
অশোকবাবু এ দিন প্রচারসভাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাল্টা জানান, ‘‘শিলিগুড়ির দুটি জয় গুরুত্বপূর্ণ। বিধানসভা নির্বাচনে আরও বেশি করে তাঁরা আমাদের সমর্থন করবেন।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে ম্যাচ ফিক্সিং রয়েছে। তাদের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। মোদী আসছেন শিলিগুড়ি শহরের কাছাকাছি সভা করবেন। উনি অসমে গিয়ে বলেছেন, এক সময় চা বিক্রি করতেন। শিলিগুড়ি, ডুয়ার্সেও এসে বলবেন, চা বিক্রি করতেন, কেননা এখানেও চা হয়।
ইয়েচুরির কথায়, আগে মানুষ বাংলায় পড়াশোনা শিখতে আসত। এখন বাংলার সেই সম্মান নষ্ট হয়েছে। এখানকার তরুণদের কাজের জন্য, পড়াশোনার জন্য অন্য রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।