নন্দীগ্রামে সুফিয়ানের জাহাজবাড়ি। ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছরেই বদলে গিয়েছে সমীকরণ। গত বিধানসভা ভোটের আগে নন্দীগ্রামে দলের যে নেতার প্রাসাদোপম ‘জাহাজবাড়ি’ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, সেই শেখ সুফিয়ানই এ বার ভোটে মমতার নির্বাচনী এজেন্ট!
আসন্ন বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে মমতা তৃণমূলের প্রার্থী হচ্ছেন এবং সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁর ‘ইলেকশন এজেন্ট’ হিসাবে সুফিয়ানকে নিযুক্ত করা হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বদেশ দাস বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে প্রার্থীর ইলেকশন এজেন্ট হিসাবে শেখ সুফিয়ান থাকবেন বলে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব জানিয়েছেন। ১১ মার্চ দলনেত্রী নন্দীগ্রাম বিধানসভায় প্রার্থী পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাবেন হলদিয়া মহকুমাশাসকের অফিসে।’’
বছর পাঁচেক আগে নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে প্রশাসনিক সভা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সভায় যাওয়ার পথে নন্দীগ্রাম বাজারের অদূরে তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুফিয়ানের বাড়িতে ঢোকার কথা ছিল তাঁরা। কিন্তু নন্দীগ্রামের মতো এলাকায় তাঁরই দলের একজন রাজনৈতিক নেতার এমন বিশাল বাড়ি দেখে ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন মমতা। শেষ পর্যন্ত সুফিয়ানের বাড়িতে না ঢুকে তিনি সোজা সভায় গিয়েছিলেন।
সেই সময় ওই বিষয়ে কম জলঘোলা হয়নি। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা ছিল, দলের নেতাদের দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখার বার্তা দিতেই মমতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সুফিয়ানের বাড়িতে যাননি। ফের দোরগোড়ায় আরও একটি বিধানসভা ভোট। এর মধ্যে তৃণমূলের অন্দরে বহু রদবদল হয়েছে। দলের দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারী গত ডিসেম্বরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, নন্দীগ্রামের মাটিতে মমতাকে হারানোর চ্যালেঞ্জও ছুড়েছেন। অন্যদিকে, গত বছর আমপান ঝড়ে জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নন্দীগ্রামে ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে লাগাতার দুর্নীতির তিরে বিদ্ধ হয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোট প্রচারে ওই দুর্নীতিকে হাতিয়ার করেছে বিরোধীদলগুলি।
এমন আবহে ‘জাহাজবাড়ি’র মালিককে নন্দীগ্রামে মমতার অন্যতম ‘ভোট-যোদ্ধা’ হিসাবে চিহ্নিত করায় বিঁধছে বিরোধীরা। বিজেপি-র জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েকের কটাক্ষ, ‘‘সুফিয়ানের ভাবমূর্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগেই জেনেছেন। এলাকাবাসীও জানেন। এর পরেও যদি ওঁকে ইলেকশন এজেন্ট করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে দিদির কাছে আর কোনও লোক নেই। এতে আমাদের লাভই হবে।’’ অন্যদিকে, এ দিন মমতাকে কটাক্ষ করেছেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘ভবানীপুরে টালির চালের পাশে একটা শান্তিনিকেতন আছে। ওখানে (নন্দীগ্রামে) যে বাড়ি দেখবেন, তার পাশে একটা জাহাজবাড়ি আছে। জাহাজবাড়িটা ওঁর অনুপ্রেরণাতেই রয়েছে।’’
সুফিয়ান নন্দীগ্রামে জমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে জেলা পরিষদের সহ- সভাধিপতি এবং দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর পদে রয়েছেন। সম্প্রতি অধিকারী পরিবারের ক্ষমতা খর্ব পর্যায়ে নন্দীগ্রামে সুফিয়ানের গুরুত্ব বেড়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি মমতার নন্দীগ্রামের সভার দ্বায়িত্বে ছিলেন তিনি। বিরোধীদের কটাক্ষ নিয়ে সুফিয়ানের বক্তব্য, ‘‘কে এজেন্ট হবে, সেটা দিদি ঘোষণা করবেন।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী ১১ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থীপদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার আগে নন্দীগ্রামের সোনাচুড়া ও গোকুলনগরে যাবেন। জমিরক্ষা আন্দোলনের শহিদদের বেদিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। সোনাচূড়ার গাংড়ায় বাসুলি মন্দিরে পুজো দেবেন এবং পরে সামসাবাদে পীরের মাজারে যাবেনও মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয় তৃণমূল নেতা স্বদেশ জানাচ্ছেন, নন্দীগ্রাম বাজারে জানকীনাথ মন্দির এবং রেয়াপাড়ায় শিবমন্দিরে মন্দিরে গিয়ে পুজোও দেবেন মমতা। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।