সুজাপুরে সনিয়া। নিজস্ব চিত্র।
পারদ ৪০ ডিগ্রির আশেপাশে। সঙ্গী গরম বাতাস। এমন অবস্থাতেও সভা শুরুর আড়াই ঘণ্টা আগে থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করে দিয়েছেন লাল, তেরঙ্গা ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে আসা কর্মী সমর্থকেরা। কখনও ভেসে আসছে কংগ্রেস জিন্দাবাদ, আবার কখনও বামফ্রন্ট জিন্দাবাদ। শুধু তাই নয়, অনেকে আবার বাম-কংগ্রেস জোট জিন্দাবাদ বলেও স্লোগান তুলেছেন।
সনিয়ার সভায় ছিলেন জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীরা। তার মধ্যে ছিলেন সিপিএমের দুই প্রার্থী খগেন মূর্মু ও দীপালি বিশ্বাস। এ ছাড়া মঞ্চে হাজির ছিলেন বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী নীহাররঞ্জন ঘোষও। খগেনবাবু ও নীহারবাবুরা সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে মঞ্চেই হাত মেলান। সনিয়া ছাড়াও হাজির ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী সহ একাধিক নেতৃত্বরা। হাতিমারির সভামঞ্চ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে বাখরপুরে হেলিপ্যাড করা হয়েছিল। ২টা ৩৫ মিনিট নাগাদ হেলিকপ্টারে করে বাখরপুরে নামেন সনিয়া গাঁধী। তারপর ২টা ৪০ মিনিট নাগাদ সভামঞ্চে হাজির হন তিনি। তাঁকে উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বরা। তারপরে তাঁকে গোলাপ ফুলের মালা পরিয়েও বরণ করা হয়। কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে প্রায় ১৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি। তারপরে কর্মী সমর্থকদের কাছে গিয়ে হাত মেলান। প্রথমে মহিলাদের সঙ্গে, পরে দলীয় কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে। আর এতেই মজে গেলেন বাম ও কংগ্রেস দুই শিবিরের কর্মী সমর্থকেরা।
এ দিন, সময় যত এগিয়েছে, ভিড় ততই বেড়েছে মালদহের কালিয়াচকের হাতিমারি মাঠে। বুধবার দুপুর ২টা ৪০মিনিট নাগাদ হাতিমারি মাঠে হাজির হন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। তিনি মাঠে আসতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন কংগ্রেস ও সিপিএম সমর্থকেরা। দুই দলেরই কর্মী সমর্থকেরা এক সঙ্গে গলা ফাটালেন সনিয়ার সমর্থনে।
কংগ্রেসের খাস তালুকেই দুই দলের কর্মী সমর্থকেরা এক সঙ্গে হাজির থাকায় উচ্ছ্বসিত জেলার বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বরা। জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নূর বলেন, ‘‘এ দিন মাঠে তিল ধারণের মতো জায়গা ছিল না। কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আগামী ১৯ মে-র পরে মালদহতে খুঁজে পাওয়া যাবে না তৃণমূলকে।’’ একই সুরে সুর মিলিয়েছেন জেলা সিপিএমের সম্পাদক অম্বর মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘জেলাতে কংগ্রেস ও বাম প্রধান শক্তিশালী দল। এমন দুই দল এক হয়েছে, শুধু তৃণমূলকে সরানোর জন্য। আর দুই দলের কর্মী সমর্থকদের এই আশা খুব শীঘ্রই পূরণ হতে চলেছে।’’ তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘ক্ষমতাহীন দুই দল স্বপ্ন দেখছে। ১৯ মে-র পর সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হবে।’’
এ দিন কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর, মোথাবাড়ি, ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে গাড়িতে করে সুজাপুর মাঠের দিকে হাজির হতে থাকেন দুই দলের কর্মী সমর্থকেরা। ছোট গাড়ি থেকে শুরু করে ম্যাক্সি-ট্যাক্সিতে লাল ও তেরঙ্গা এক সঙ্গে নিয়ে হাজির হন তাঁরা। ইংরেজবাজারের মধুঘাট ও সুজাপুরে গাড়ি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কেই আটকে দেয় পুলিশ। তারপর মিছিল করে সভাস্থলে হাজির হন কর্মী সমর্থকেরা।
জেলা নেতা থেকে শুরু করে রাজ্য নেতৃত্বরা বক্তব্য রাখার সময়েই মাঠে ভিড় বাড়তে থাকে। তার আগে কর্মী সমর্থকেরা চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে ছিলেন। পরে দুপুর আড়াইটে নাগাদ সনিয়া গাঁধীর হেলিকপ্টার আকাশে উড়তে দেখেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন বাম কংগ্রেস কর্মী সমর্থকেরা। দুই দলের নেতৃত্বের দাবি, এ দিন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ হাজির হন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫ হাজার মানুষ হাতিমারি মাঠে ছিলেন।