হাতের নাগালে। বুধবার নলহাটির বাউটিয়া গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ভরদুপুরে সভা। রোদে তেতে রয়েছে মাঠ। এমন অবস্থায় মাঠে লোক না হওয়ায় বাতিল করতে হল শতাব্দী রায়ের নির্বাচনী সভা। ভোটের মুখে সাংসদের সভা বাতিল হওয়ায় বিতর্ক দানা বেঁধেছে তৃণমূলের অন্দরেই।
বুধবার দুপুরে নলহাটি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে অভিনেত্রী-সাংসদের সভা ছিল। দুপুর ২টো নাগাদ সেখানে গিয়ে দেখা গেল, জনা কুড়ি-পঁচিশ কর্মী সমর্থক উপস্থিত রয়েছেন। এমন অবস্থায় সভা আদৌ শুরু হবে কিনা, সে প্রশ্নে সংশয় ছিল উপস্থিত সমর্থকদের মধ্যে। পরিস্থিতি দেখে মঞ্চ থেকে বারবার মাইকে সভায় আসার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু, কাজের কাজ হয়নি। ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও যথেষ্ট লোক উপস্থিত না হওায়ায় শেষমেষ সভা বাতিল বলে ঘোষণা করেন তৃণমূলের শহর সভাপতি শুভব্রত সিংহ।
বিতর্ক শুরু হয়েছে এখানেই। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কটাক্ষ, ‘‘অভিনেত্রী-সাংসদও এখন লোক টানতে পারছেন না। পরিস্থিতিটা একবার ভাবুন।’’ এতে বিড়ম্বনা তৈরি হলেও মুখে সে কথা স্বীকার করছেন না তৃণমূলের নেতারা। টাউন সভাপতি শুভব্রত সিংহের বক্তব্য, ‘‘সাংসদের শারীরিক অবস্থা ভাল না থাকার জন্য দুপুরের সভা বাতিল করে সন্ধ্যা ৬টায় ডাকা হয়েছে।” অবশ্য সভা বাতিলের জন্যে ক্ষমাও চেয়ে নেন টাউন সভাপতি। তৃণমূলের দাবি, পরে সেই সভায় ভাল ভিড় হয়েছে।
সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘শুনেছি, সভাস্থল থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে বসে ছিলেন শতাব্দী। এবং লোক হয়নি দেখেই স্থানীয় তৃণমূল নেতারা অভিনেত্রীকে হাজির করানোর ঝুঁকি নেননি।’’ এলাকার এক তৃণমূল নেতাও অকপটে মেনে নিচ্ছেন, লোক না হওয়ার জন্যেই সভা বাতিল করতে হয়। ওই নেতার কথায়, ‘‘ওই লোক নিয়ে সভা না হওয়ায় যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, কুড়ি জন নিয়ে সভা করলে তার চেয়ে ঢে়ড় বেশি মুখ পুড়ত!’’
কিন্তু, লোক হল না কেন?
তৃণমূল সূত্রের দাবি, সময় নির্বাচনেই ভুল হয়ে গিয়েছে। ভরদুপুরে কড়া রোদের সভার সিদ্ধান্তকে কাঠগড়ার তোলার পাশাপাশি উঠে আসছে আরও একটি সম্ভাবনার কথা। অনেকের মতে, নলহাটি পুরসভা তৃণমূলের দখলে থাকলেও এই ১১ নম্বর ওয়ার্ডটি কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। বিরোধী দলের প্রভাবে থাকা এলাকায় সভা করাটা ঝুঁকির হয়ে গিয়েছিল বলে অনেকেরই মত। সে যুক্তি উড়িয়ে এক তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘আসলে চড়া রোদেই অনেকে বেরোতে চাননি। টানা প্রচার কর্মসূচি চলছে। সেটাও তো মাথার রাখতে হবে।’’ যোগাযোগ করা হলেও প্রতিক্রিয়া মেলেনি শতাব্দীর।
নলহাটি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে তেমন লোক না হলেও এই এলাকারই বাউটিয়া-সহ অন্য সভাগুলিতে ভিড় হয়েছে। নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মইনউদ্দিন শামস-এর সমর্থনে প্রচার করেন তিনি। একটি সভায় ‘স্ট্রিং অপারেশন’কে কটাক্ষ করেন শতাব্দী। মন্তব্য করেন, ‘‘এটা পুজোর ফ্যাশনের মতো। পুজোর সময় যেমন শাড়ি বের হয়।’’
সভা হয় বাউটিয়া গ্রামেও। সভাস্থলের কাছেই ছিল বাউটিয়া রাধারমণ উচ্চ বিদ্যালয়। প্রার্থনার পরে বহু ছাত্রছাত্রী অভিনেত্রীকে দেখতে স্কুল থেকে বেরিয়ে আসে। স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ তাপস মুখোপাধ্যায় ধমক দিয়ে অবশ্য তাদের স্কুলে ঢুকিয়ে দেন। তবে সভার কারণে স্কুলে সমস্যা হয়েছে, এমন অভিযোগ করেছেন অনেকেই।