লাল গেঞ্জিতেই হাসছেন দু’জনে

অফ হোয়াইট বারমুডা। লাল ডোরাকাটা গামছা, খোলা গায়ের উপর আলতো করে ফেলা। চোখে হাল ফ্যাশানের খয়েরি ফ্রেমের চশমা। নিজের ঘরে বসে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিলেন।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০২:৫০
Share:

বাড়িতে খোশ মেজাজে দুই প্রার্থী। — নিজস্ব চিত্র

অফ হোয়াইট বারমুডা। লাল ডোরাকাটা গামছা, খোলা গায়ের উপর আলতো করে ফেলা। চোখে হাল ফ্যাশানের খয়েরি ফ্রেমের চশমা। নিজের ঘরে বসে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিলেন।

Advertisement

ঘর মানে অবশ্য পৈত্রিক বাড়ির একফালি বারান্দায় জানলা বসিয়ে একটা মামুলি খাট পাতা। সেখানেই বসে ছিলেন পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। ভোট তো মিটল? বাইফোকাল চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। হাসতে হাসতে বললেন, “নবদ্বীপ নিয়ে আর নতুন করে ভাবার কি আছে। বল তো, ঠিকই আছে।” অন্য বার গ্রামে তাদের ভোট যেন কমে যেত, এ বার গ্রামও তাঁর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। বেশ একটা তৃপ্তি ছুঁয়ে যাচ্ছে স্বগতোক্তির মধ্যে।

আসলে জটিল হিসাবনিকাশে কোন কালেই তাঁর আগ্রহ নেই। বরং সরল পাটিগণিতে নিজের মতো করে অঙ্ক কষে তিন বার হাসতে হাসতে বিধানসভায় গিয়েছেন। এ বার সেই পাটী গণিতেই বুক বেঁধে বারমুডায় আয়েশ করছেন নবদ্বীপের নন্দদা।

Advertisement

এমনিতে উদ্বিগ্ন হতে তাঁকে বড় একটা দেখা যায় না। এক আশ্চর্য উদাসীনতায় সামাল দেন শারীরিক অসুস্থতা থেকে দলীয় রাজনীতির খুঁটিনাটি। তাই ভোট মিটতেই সব দলের রথী-মহারথীরা যখন ঠান্ডা ঘরে বসে একটু জিরিয়ে নেওয়ার ফাঁকে ল্যাপটপ-ক্যালকুলেটরে ‘কি হবে আর কি হবে না’র চুলচেরা হিসাবে ব্যস্ত, তিনি তখন ফের ময়দানে নেমে পড়েছেন। তবে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটের হাওয়া বুঝতে নয়, নেমেছেন ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের ঘুঁটি সাজাতে। বলঠছেন, ‘“নির্বাচন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর শেষ বলে কিছু হয়না। সারাবছর লেগে থাকতে হয়। অনেকটা পড়ুয়া ছাত্রের মতো। বছরভর পড়াশুনো করলে পরীক্ষার আগে রাত জাগতে হয় না।’’

প্রচণ্ড গরমে দিনের বেলা বাড়ির বাইরে বড় একটা বের হচ্ছেন না। সকালের দিকে লোকজনের সঙ্গেও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া দেখা সাক্ষাৎ করছেন না। ঘরে বসে একা একাই কষছেন আপন-অঙ্ক। সন্ধ্যার পর নামছেন ময়দানে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে কখনও ছুটছেন স্কুল জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী বিয়োগে পাশে দাঁড়াতে। তো কোন দিন যাচ্ছেন বলদেব মন্দিরের প্রধান অসুস্থ জীবনকৃষ্ণ গোস্বামীকে দেখতে। আর সন্ধ্যা নামলেই বাইকের পিছনে বসে পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা আজ বাবলারী তো কাল মহিশুরা। পরের দিন হয়ত গঙ্গা পেরিয়ে মায়াপুর কিংবা চরব্রহ্মনগর।

তাঁর অবশ্য গলায় গামছা নেই। তবে টি শার্টটা লাল। একেবারে ঘরোয়া মেজাজে পাওয়া গেল নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সিপিএমের তরুণ তুর্কি সুমিত বিশ্বাসকেও। ২১ এপ্রিল নবদ্বীপে নিজের ভোট মিটিয়েই দলের নির্দেশে ছুটে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগণায় প্রচারে। সপ্তাহখানেক ধরে মগরাহাট, ক্যানিং, ডায়মন্ডহারবার, সাগরে চুটিয়ে ভোট প্রচার সেরে নবদ্বীপ ফিরেছেন শনিবার। নন্দীপাড়ার বাড়িতে কড়া মিষ্টি দেওয়া দুধ চায়ে চুমুক দিতে দিতে রবিবার দুপুরে প্রত্যয়ী কন্ঠে বললেন, “ মিলিয়ে নেবেন এবারে নবদ্বীপে বিরোধীদের ফল এযাবৎ কালের মধ্যে সব থেকে ভালো হবে।” ভালো মানে কেমন? জিততে পারবেন? কত ভোটে জিতবেন? একঝাঁক প্রশ্ন শুনে এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে বললেন, “ভোটের পর দিনই জেলা ছেড়েছি। ফিরেছি চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি। ফিরেই আজ সকালে মে ডে নিয়ে পরপর কর্মসূচী চলছে। সুতরাং ওই ভাবে বলার মতো সময় এখনও পাইনি।’’

এই বিষয়টা মাথায় রেখেই সুমিত বিশ্বাস এবারের পুরো ভোট প্রক্রিয়া জুড়ে তরুণ প্রজন্মের কর্মীদের গুরুত্ব দিয়েছেন। অনেকটা নন্দবাবুর সুরেই তাঁর প্রতিপক্ষ বলেন, ভোটের সঙ্গে দলীয় সংগঠনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আর শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে গেলে নতুন প্রজন্মকে খুব দরকার। তাই এবারের ভোটে আমরা সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। মিটিংয়ে প্রচুর নতুন ছেলেমেয়ে প্রবীণদের পাশাপাশি বক্তব্য রেখেছে। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের সঙ্গে ওঁরা খুব ভালো যোগসূত্র তৈরি করতে পেরেছে। এটা এক দু-মাসের ব্যাপার নয়। তাঁর কথায়, “এর প্রভাব ভোটের বাক্সে পড়তে বাধ্য। যে ছেলেমেয়ে গুলো নিয়ম করে এস এস সি বা টেট দিয়ে চাকরি পাচ্ছিল, গত পাঁচ বছর ধরে তাঁদের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছুই নেই। এই যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ তো ঘটবেই।”

তাতে রাজ্যপাট উঊল্টে য়াবে কি? দু’টো লাল গেঞ্জিই হাসছে, তবে জোরে নয়, নিজেকে গুটিয়ে রেখে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement