দিন চারেক আগে এই এলাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভার সমর্থনের লাগানো হোর্ডিং খুলে দিয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু এ বার শাসকদলের হোর্ডিং খুলতে গিয়ে চেয়েও পুলিশ না পাওয়ার অভিযোগ তুললেন খোদ খড়্গপুরের মহকুমাশাসকই!
বুধবার খড়্গপুরের মালঞ্চ থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পদযাত্রা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পদযাত্রার সমর্থনে ইন্দা থেকে মালঞ্চ পর্যন্ত সরকারি জমিতে হোর্ডিং, পতাকা লাগানোর অভিযোগ এসেছিল প্রশাসনের কাছে। তাই মহকুমাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসার সঞ্জয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সেগুলি খুলে দিতে গিয়েছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। ছিলেন খড়্গপুর-১ ব্লকের বিডিও কৃষ্ণেন্দু মণ্ডলও। তাঁদের অভিযোগ, নিয়মমাফিক পুলিশ ও আধাসেনা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ আসেনি। বাধ্য হয়ে তাঁরা নিজেরাই হোর্ডিং খুলতে শুরু করেন বলে জানান।
মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা অভিযান শুরুর আগে থানার কাছে পুলিশ চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আসেনি। কেন তা জানি না, বলতে পারব না।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত এ কথা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “অভিযানের সময়ে পুলিশ গিয়েছিল। মহকুমাশাসক কেন এমন বলছেন, আমার জানা নেই।”
নির্বাচন ঘোষণার পরে কোনও রাজনৈতিক দলের হোর্ডিং, ফ্লেক্স, পতাকা সরকারি জমিতে লাগানো যায় না। এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের হলে প্রশাসনের কর্তারা গিয়েই ওই হোর্ডিং-পতাকা খুলে দেন। সে ক্ষেত্রে কোনও গোলমাল এড়াতে পুলিশ বাহিনীও সঙ্গে রাখা হয়। তাই এ ক্ষেত্রে খড়্গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসারের পদে থাকা মহকুমাশাসক পুলিশ চেয়েও না-পাওয়া নজিরবিহীন বলেই মনে করছে বিরোধী দলগুলি। তাদের মতে, শাসকদলের হোর্ডিং খুলে বিপাকে পড়ার আশঙ্কা থেকে এটা পুলিশের কৌশল।
খড্গপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলেন, ‘‘পুলিশ শাসকদলের হয়ে কাজ করছে। তাই সে দলের হোর্ডিং খুলতে সাহস করে আসতে পারেনি। মহকুমাশাসক ডাকা সত্ত্বেও না আসাটা লজ্জাজনক।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য মনোজ ধর বলেন, ‘‘পুলিশের থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না।’’
পুলিশ তাদের হয়ে কাজ করছে, এই অভিযোগ মানতে চায়নি শাসকদল। প্রশাসন যে ভাবে দলীয় হোর্ডিং, পতাকা খুলে দিয়েছে, তাতে পাল্টা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা। খড়্গপুরের সদরের তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্ট পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর ফ্লেক্স, হোর্ডিং খোলা হয়নি। কিন্তু আমাদের বেলায় তাই হল। প্রশাসন দ্বিচারিতা করছে।” মহকুমাশাসকের দাবি, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পতাকা ও হোর্ডিং খোলা হয়েছে। কারণ, সরকারি জমিতে রাজনৈতিক পতাকা-হোর্ডিং লাগানো যায় না। বিজেপি-র ক্ষেত্রেও একই ভাবে ওই রাস্তায় অভিযান চলেছিল।