দু’রাত পোহালেই পরীক্ষা। কিন্তু এখনও সিলেবাসই শেষ করে উঠতে পারেনি উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল। ভোট-পরীক্ষায় কী ভাবে দলের সাফল্য ধরে রাখা যাবে, তা নিয়েই উদ্বেগ আর সংশয় বাড়ছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)-এর দুর্গে।
দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ার দাপট, বেশ কিছু বিধায়কের জনসংযোগে ঘাটতির মতো নানা সমস্যায় দল এখন প্রবল চাপে। সমস্যা এতটাই যে, জেলায় আগের আসনসংখ্যা ধরে রাখাই কঠিন। এখানকার ৩৩টি বিধানসভা
আসনের মধ্যে ২০১১ সালে ২৯টি তৃণমূলের দখলে ছিল। কিন্তু পাঁচ বছরে বিধানসভাগুলির চেহারা অনেকটাই বদলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের আচরণ এলাকার মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
শাসক দলের গোষ্ঠী রাজনীতিতেও মানুষ অতিষ্ঠ।
তৃণমূল নেতৃত্বের মাথাব্যথার আরও একটি কারণ সংখ্যালঘুদের ভোট। জেলায় প্রায় ২৮% সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। এর কতটা এ বার শাসক দলের ভোট ব্যাঙ্কে জমা পড়বে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তৃণমূলের অনেকেই। কারণ, সংখ্যালঘুদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে বাম-কংগ্রেস জোট জোরালো প্রচার চালাচ্ছে। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাতে পারে জোট।
সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। কথাটা দলনেত্রীর কানেও পৌঁছেছে। জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুকুল রায়। এমনকী, বৃহস্পতিবার জেলায় নির্বাচনী-প্রচারে গিয়েও মমতা দলের ‘ভোট ম্যানেজার’-দের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন। জেলায় শাসক শিবিরের গোষ্ঠী রাজনীতির মূলে রয়েছে নানা কারণ। কোথাও পুরসভার চেয়ারম্যান, দলের ব্লক সভাপতি কিংবা পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে বিধায়কের বিরোধ। আবার কয়েকটি জায়গায় স্থানীয়দের প্রার্থী না করে ‘বহিরাগত’ নিয়ে আসা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে শাসক দলের অন্দরে। গাইঘাটা, দেগঙ্গায় প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভে দলের কর্মীদের একাংশ বসে গিয়েছে। আবার বাদুড়িয়া, আমডাঙা, বনগাঁ, জগদ্দল, উত্তর দমদম, খড়দহ, বসিরহাট, ব্যারাকপুরের মতো কেন্দ্রে অন্তর্ঘাতের চোরাস্রোত নিয়ে উদ্বেগে তৃণমূল নেতৃত্ব।
জেলার যে কেন্দ্রটিতে শাসক দলের সম্মানের প্রশ্ন বিশেষ ভাবে জড়িয়ে, সেই খড়দহ নিয়ে স্বয়ং দলনেত্রীও চিন্তিত। এখানে শাসক দলের প্রার্থী অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। অমিতবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে এলাকার মানুষ তাঁদের বিধায়ককে পাননি। খড়দহে পুরভোটে শাসক দলের দাপাদাপি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এলাকার মানুষ বিরক্ত। জগদ্দলের বিধায়ক পরশ দত্তের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। মানুষের কাছে তাঁর উপস্থিতিও ছিল নগণ্য। বিধায়কদের অনুপস্থিতি নিয়ে স্থানীয় নেতারাও যথেষ্ট বিব্রত।
এক সময়ে এই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আধিপত্য ছিল বামেদের। এ বার কি কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বামেরা সেই হারানো জমির পুনরুদ্ধারের দিকে এগোচ্ছে? তৃণমূলের এক নেতার জবাব, ‘‘আমাদের নানা সমস্যা আছেই। আর বাম শিবির থেকে ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের একাংশ এ বার ঘরে ফিরলে বেশ কয়েকটা
আসনে চিন্তা তো বাড়বেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকণ্ডলীর এক সদস্যের দাবি, ‘‘ভোটের দিন যত এগোচ্ছে, মানুষ ততই জোটের পক্ষে এগিয়ে আসছেন।’’
জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য পরিস্থিতি এতটা খারাপ বলে মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। তবে সেই সব জায়গার পরিস্থিতি দ্রুত আমাদের পক্ষে যাচ্ছে।’’ তবে তিনি যে দাবিই করুন, শাসক শিবিরের অনেকেই জেলায় দলের ভোট-ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে।