নজরে মোদী। খড়্গপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভায়। রবিবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ
দিদির সুর এ বার মোদীর গলায়!
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের জন্য সিপিএম ও কংগ্রেস ‘সুবিধাবাদী জোট’ করেছে বলে রাজ্যে প্রথম দফার প্রচারে এসে অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যের দুই বিরোধী দলকে বিঁধে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কেরলে সিপিএম আর কংগ্রেস কুস্তি করছে। বাংলায় দোস্তি করেছে!’’ ঠিক এই ভাষায় এবং এই অস্ত্রেই এত দিন বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়াকে আক্রমণ করে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদীর রবিবারের মন্তব্য শুনে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম তাই কটাক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছেন, ‘‘মোদীভাই আর দিদিভাইয়ের কত যে মিল, জানা ছিল না!’’ পাশাপাশিই বাম ও কংগ্রেস নেতারা বলছেন, বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিপক্ষ যে এখন বাম-কংগ্রেসের যৌথ বাহিনীই, ‘জোট’কে স্বীকৃতি দিয়ে ঘুরিয়ে সেই বাস্তবও মেনে নিতে হল মোদীকে!
খড়গপুরের রেল ময়দানে খড়গপুর সদর কেন্দ্রের প্রার্থী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সমর্থনে মূলত এই সমাবেশ হলেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীই হাজির ছিলেন সেখানে। তাঁদের প্রত্যেকের নাম করে জনতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। মঞ্চে উপস্থিত কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সু্প্রিয়, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, সুরেশ পূজারী বা কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহেরা সকলেই বিজেপিকে এক বার রাজ্য চালানোর সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানান। আর সেই একই আর্জি জানাতে গিয়ে মোদী টেনেছেন জোটের কথা।
মোদীর বক্তব্য, কয়েক শতাব্দী আগে থেকেই বাংলার মানুষের চিন্তাভাবনা গোটা দেশের স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে। কিন্তু এখন কংগ্রেস এবং সিপিএম বাংলার মানুষের বুদ্ধিকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসেছে! মোদীর কথায়, ‘‘কেরলে সিপিএম ও কংগ্রেস কুস্তি করছে। আবার বাংলায় দোস্তি করেছে! এটা বাংলার আত্মমর্যাদার অপমান কি না? কেরলে একে অপরের মাথা কাটছে! আর এখানে পর্দার পিছনে কী করছে?’’
এখানেই থামেননি। মোদী বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস সিপিএমের হাতে কত জন আক্রান্ত হয়েছে! তার পরেও তারা সিপিএমের হাত ধরে কী করে? সৎ-সাহস থাকলে দু’দল বলুক, আমরা সুবিধাবাদী! আমরা শুধু কুর্সির জন্য খেলতে নেমেছি!’’ ঠিক যে কথা বারবার বলছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা যেমন মাঝে মধ্যেই সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপিকে এক বন্ধনীতে ফেলে বলছেন, সবাই তাঁর বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে— মোদীও এ দিন একই কৌশল নিলেন। তিনি বলেন, তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেস একসঙ্গে মিলেছে! মোদীর দাবি, ‘‘দিদি বলেছেন, সিপিএম বা কংগ্রেস কিছু নয়। আসল শত্রু হল বিজেপি!’’ পাঁচ বছরে মমতার সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস বা বামেরা কোনও আন্দোলন করেনি বলেও অভিযোগ করেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে মার খেয়েছে একমাত্র বিজেপি।’’
চুপ করে নেই ‘জোট’-শরিকেরাও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এনডিএ জমানায় তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির জোটের কথা মনে নেই? বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার জন্য বামফ্রন্ট যে আহ্বান জানিয়েছে, তাতে আসলে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী দু’জনেই ভয় পেয়েছেন!’’ একই সুর কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানেরও। একই দিনে জোট-বার্তা আরও জোরালো হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিবৃতিতে। তাঁর আর্জি, যে কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী নেই, সেখানে দলের কর্মীরা যেন বামফ্রন্টকে জেতান।
বাম ও কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের সময় মোদী এসে বিজেপিকেই তণমূলের একমাত্র বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতেন। এ বার সেই চেষ্টা করতে গিয়েও তাঁকে মাথায় রাখতে হচ্ছে, বাস্তবটা পাল্টে গিয়েছে! বিজেপি দু’বছরে রাজ্যে অনেকটা জমি হারিয়েছে। আর নিচু তলা থেকে উঠে আসা বাম-কংগ্রেস ‘জোট’ মানুষের সাড়া পাচ্ছে। তাই ‘জোট’কে আক্রমণ করতে গিয়ে মোদীর কথায় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ আসলে কারা! এই সঙ্গেই সূর্যবাবুর মন্তব্য, ‘‘গাঁধীজির হত্যাকারীরা নাথুরাম গডসের মূর্তি বসাতে ব্যস্ত থাকুক! বাংলা ওদের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না!’’