ভোট শেষ। তাই নিশ্চিন্তে এলাকা ছেড়েছিলেন ভিন্ রাজ্য থেকে আসা পর্যবেক্ষক। টিকিট কেটে ট্রেনেও উঠে পড়েছিলেন। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ বড় কর্তার ফোন— বাড়ি যাওয়া চলবে না। অগত্যা হুড়মুড়িয়ে ট্রেন থেকে নেমে ব্যাজার মুখে ফিরে এলেন পর্যবেক্ষক।
শুধু উনি নন, ভোট মিটে যাওয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক পর্যবেক্ষকই এলাকা ছেড়েছিলেন। কেউ ফিরছিলেন বাড়িতে, কেউ গিয়েছিলেন আত্মীয় বাড়ি। কমিশনের ফরমান পেয়ে তাঁরা এখন হন্তদন্ত হয়ে এলাকায় ফেরা শুরু করেছেন।
১১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় যে সব কেন্দ্রে ভোট ছিল, সেখানকার যে পর্যবেক্ষকেরা ফিরে গিয়েছিলেন, তাঁদের ফের নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছনোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার জানান রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার দিব্যেন্দু সরকার। এর মধ্যে রয়েছেন পুলিশ পর্যবেক্ষক, সাধারণ পর্যবেক্ষকরাও। কমিশন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার কমিশনের ফুল বেঞ্চ কলকাতায় এসে বৈঠক করে। যে সব কেন্দ্রে আগামীতে ভোট রয়েছে, সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি যে সব জায়গায় ভোট মিটেছে, সেখানকার পরিস্থিতি নিয়েও খোঁজ নেয় কমিশন। জানা যায়, বেশির ভাগ পর্যবেক্ষকই এলাকা ছেড়েছেন। এর পর সব পর্যবেক্ষককে নিজেদের কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দেয় কমিশন। জেনে শুক্রবার অনেকেই ফেরেন নিজ নিজ এলাকায়।
পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং বর্ধমান শিল্পাঞ্চলে ভোট ছিল ১১ এপ্রিল। পর্যবেক্ষকদের ফিরে আসার খবর মূলত পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেই পাওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘাটাল ও দাসপুর বিধানসভা কেন্দ্রের পরিদর্শক রজীব রঞ্জন, কেশপুরের এস সুহেল আলি, দুই খড়্গপুরের মধুকর অগ্নির বাড়ি মধ্যপ্রদেশে। অরুণাচল প্রদেশে বাড়ি চন্দ্রকোনার পরিদর্শক বলুং সিরামের, গড়বেতার পর্যবেক্ষক কৈলাশচন্দ্র মিনার বাড়ি রাজস্থানে। এঁরা সকলেই চলে গিয়েছিলেন। তবে কমিশনের নির্দেশে এ দিন ফিরেছেন।
রাজ্যে দু’ দফার ভোট হয়েছে। ৪ এপ্রিল ১৮টি কেন্দ্রে ও ১১ এপ্রিল ৩১টি কেন্দ্রে। দ্বিতীয় দফার ৩১টি কেন্দ্রের পর্যবেক্ষকদেরই এলাকায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৩টি কেন্দ্র রয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, ভোট শেষে ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টা এলাকায় থাকতেই হয় পর্যবেক্ষকদের। তার পর কমিশন যখন মনে করবে তখন তাঁদের সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠাতে পারে। সেই হিসেবে সোমবার ভোটের পরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পর্যবেক্ষকদের এলাকায় থাকা ছিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকেই তা না-মেনে ভোটের পর দিন ‘স্ক্রুটিনি’ শেষ করে ফিরে গিয়েছিলেন।
পর্যবেক্ষকদের এলাকায় পাঠানোর পিছনে ভোট-পরবর্তী সংঘর্ষও একটা কারণ। দ্বিতীয় দফায় জেলার যে সব কেন্দ্রে ভোট ছিল তার মধ্যে অন্যতম কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার এলাকা সবং এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কেন্দ্র নারায়ণগড়। সবংয়ে ভোটের আগে এক তৃণমূল-কর্মী খুন হন। আর ভোটের পরে দু’জায়গাতেই অশান্তি চলছে। দাঁতন, খড়্গপুর, কেশপুরেও মারামারির ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল। অনেক এলাকায় বিরোধীদের পানীয় জল বন্ধ করে দেওয়ার মতো অভিযোগও উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে।
এ বার প্রচার পর্ব থেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট মিটলে বিরোধীদের ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে দেখে নেওয়া’র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘কমিশন কয়েক দিনের অতিথি। তারা গেলে পুলিশ-প্রশাসনের রাশ আমাদের হাতেই থাকবে।’’ খোদ মমতার এমন মন্তব্য তৃণমূলের নিচুতলাকে বেপরোয়া করেছে বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। তার পরিণাম এলাকায় এলাকায় সন্ত্রাস। ভোটের দিনও নানা এলাকায় অশান্তি-হামলা হয়েছে। তাই বিরোধীরা মনে করছেন, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে দাঁড়ি টানতে পর্যবেক্ষকদের এলাকায় থাকা জরুরি। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, ‘‘আমাদের নেতারা অশান্তির কথা বারবার কমিশনে জানিয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা থাকলে একটু ভরসা মেলে।’’